কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

কালো সন্ন্যাসীর রহস্য

কালো সন্ন্যাসীর রহস্য রহস্য গল্প – রিতিষা মিত্র রিউ

১. প্রারম্ভিকা: কুমীরডাঙার কালো ছায়া

পূর্ব বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রাম কুমীরডাঙা। নির্জন, প্রায় বিচ্ছিন্ন জনপদ। এখানে সন্ধ্যা নামার পর ঝিঁঝিঁর ডাক থেমে গিয়ে শোনা যায় পাগল হাসি, আর মাঝে মাঝে, এক কালো সন্ন্যাসীর শ্লোকপাঠ।

লোকমুখে বলে—”ওর চোখেই মৃত্যুর বরাত লেখা থাকে।”

২. রহস্যের আহ্বান

কলকাতার গোয়েন্দা ও প্রত্নতত্ত্ব বিশারদ ডঃ অর্কপ্রভ চৌধুরী এই ধরণের কাহিনি কাগজে পড়েই ছুটে এলেন। সাথে ক্যামেরা, ধুলো-মাপা যন্ত্র আর শতরঞ্জির ঠোঙায় পুরানো নথি।

গ্রামপ্রধান বললেন, “বাবু, এখানে যারা সন্ধ্যায় গিয়েছে কালো সন্ন্যাসী দেখতে—তারা কেউ ফিরে আসেনি।”

৩. রাতের নিঃশব্দ ষড়যন্ত্র

রাত ন’টা। ডঃ অর্কপ্রভ কুঁড়েঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন—এক কালো জোব্বা পরা ছায়ামূর্তি বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে জপ করছে। তার মুখ নেই। চোখ নেই। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা জড়তার মধ্যেও যেন একটা অভিশপ্ত গতির ছায়া।

তিনি ক্যামেরা তুলতেই—কোনো অদৃশ্য আঘাতে হাত থেকে তা পড়ে যায়। যন্ত্র বিকল।

৪. অতীতের দংশন

পরদিন এক বৃদ্ধা তাঁকে বললেন, “ও কেবল সন্ন্যাসী না, ও এক সময়ের রাজকবি মহামদী শঙ্কর। পাঁচশ বছর আগে, তাম্রলিপ্ত রাজ্যের গুপ্তচর ছিল ও—নিজের দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে আফিমপুত্রদের কাছে মানচিত্র বিক্রি করেছিল। পরে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হয় বটগাছের নিচে। তারপর থেকে…”

“…প্রতি পঁচিশ বছর অন্তর সেই আত্মা জেগে ওঠে। শুধুই বিশ্বাসঘাতকদের হত্যা করে।”

৫. মর্মান্তিক প্রমাণ

সন্ধ্যার পর অর্কপ্রভ দেখলেন—গ্রামের এক যুবক, যে তার স্ত্রীকে অপহরণ করে বিক্রি করেছিল, সে আরেকদিন ফিরে এল না। শুধু তার জুতোজোড়া পাওয়া গেল বটতলার পাশে। আর, এক চুল পরিমাণ ছাই।

৬. যুক্তি বনাম অতীন্দ্রিয়

ডঃ অর্কপ্রভ সিদ্ধান্ত নিলেন—এই সন্ন্যাসী অতীন্দ্রিয় নয়, বরং এক সুপরিকল্পিত খুনি, যে আতঙ্ককে অস্ত্র করে অপরাধ করছে।

তাঁর বিশ্বাস, কেউ পুরনো কিংবদন্তিকে ব্যবহার করছে—গোপনে হত্যা করার জন্য।

৭. গহ্বরের গভীরে

তিনি একদিন বটগাছ খুঁড়ে বার করেন একটি গোপন সুড়ঙ্গ। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাচীন অস্ত্র, রাজকীয় সিলমোহর, বিষাক্ত ধাতব বল আর কিছু অসমাপ্ত শ্লোক।

এক দেয়ালে খোদাই—

> “যার মনে নেই দেশ, তার জীবন নেই শেষ।”

তিনি বুঝলেন, এখানেই জন্ম সেই অভিশপ্ত সন্ন্যাসীর কাহিনির।

৮. ক্লাইম্যাক্স: মুখোশের উন্মোচন

এক রাতে তিনি নিজে বিশ্বাসঘাতক সাজলেন। অর্থাৎ গ্রামের মানুষকে বললেন—তিনি নাকি এখানে গুপ্তধন খুঁজতে এসেছেন এবং তা চুরি করে নিয়ে যাবেন।

সেই রাতেই, এক ছায়ামূর্তি এসে তাঁকে আক্রমণ করে। কিন্তু এবার প্রস্তুত ছিলেন অর্কপ্রভ। ইলেকট্রো-নেট ছুড়ে ধরলেন সেই ছায়ামূর্তিকে।

অন্ধকারে ছায়ার মুখ খুলে বেরিয়ে এল এক চেনা মুখ—গ্রামেরই শিক্ষক দেবাশীষ বাবু। যিনি সব জানতেন ঐতিহাসিক ঘটনার এবং নিজেই এই কিংবদন্তিকে ব্যবহার করে ন্যায়বিচার করছিলেন।

৯. পরিণতি: রক্ত দিয়ে লেখা ইতিহাস

দেবাশীষ বললেন, “এই গ্রামে আইন নেই, আদালত নেই, আছে শুধু ভয়। ভয়টাই এখানে ন্যায়বিচারের একমাত্র পথ।”

অর্কপ্রভ চুপ করে রইলেন।

তবে ফিরতি ট্রেন ধরার আগের রাতে তিনি চিঠি লিখলেন জার্নাল অফ ফরেনসিক অ্যানালাইসিস-এ—

> “রহস্য সবসময় অপরাধ নয়, কখনও তা হয়ে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মৌন প্রতিরোধ। কালো সন্ন্যাসী তার প্রমাণ। এখন প্রশ্ন একটাই—আমরা কি সভ্যতার নামে সবসময় যুক্তিকেই স্থান দেব?”

কালো সন্ন্যাসীর রহস্য রহস্য গল্প – সমাপ্ত

error: Content is protected !!