ফুলেল মৃত্যু রহস্য গল্প – চন্দ্রাণী বসু
১
কলকাতার এক জমকালো সন্ধ্যা। প্রেক্ষাগৃহে আলো ঝলমলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পোস্টার ঝলসে উঠছে, টেলিভিশন মিডিয়া ভিড় জমিয়েছে, আর অতিথিরা একে একে এসে বসেছেন লাল গালিচার দু’ধারে।
অণির্বাণ ভট্টাচার্যের প্রোডাকশন হাউস ‘সাকুরা ফিল্মস’ প্রথমবার প্রযোজনা করছে একটি জাপানি চলচ্চিত্রের বাংলা সংস্করণ, “হাইনোর হৃদয়”।
বড় বাজেটের সিনেমা, এক অনন্য প্রচেষ্টা। জাপানি চলচ্চিত্রকে বাংলায় রূপান্তর করার সাহসী উদ্যোগ। পরিচালক, কলাকুশলী, এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা হাজির। মুখ্য চরিত্রে আছেন রুনা খাস্তগীর ও দীনেশ তিওয়ারি। এখানেও প্রযোজক কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দু’জনেই চলচ্চিত্রের নতুন মুখ।
তবে সবার চোখ ছিল প্রযোজক অণির্বান ভট্টাচার্যের দিকেই, যাঁর স্বপ্নে এই উদ্যোগের জন্ম।
মঞ্চে তখন পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে অণির্বাণ। কালো শেরওয়ানি, পকেটে সাদা রুমাল, মাথায় দমকা বাতাসে উড়ানো কেশবিন্যাসে তার ছিমছাম চেহারা যেন আরও প্রাণবন্ত। পাশে তার মা সাকুরা গডবার, পরনে এক সাদা কিমোনো, গলায় ছোট্ট রুবির লকেট।
অণির্বাণের হাতে মাইক্রোফোন, “এখানে আজ শুধু একটি চলচ্চিত্রের সূচনা নয়, আমার মা ও বাবার একটি স্বপ্নের সূচনা। এই ছবির পেছনে আমার মায়ের অনুপ্রেরণা ও ইচ্ছা দুইই লুকিয়ে আছে…”
হঠাৎ অণির্বাণের কথা জড়িয়ে আসে। তার মুখ যেন কালচে হয়ে যাচ্ছে। পা হড়কে যায়, মঞ্চে পড়ে যায় সে।
“অণির্বাণ!” – চিৎকার করে ওঠেন সাকুরা গডবার।
গোটা অডিটোরিয়াম স্তব্ধ। পরমুহূর্তেই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। ডাক্তার ডাকা হল। অক্সিজেন দেওয়া হল। কিন্তু সব ব্যর্থ। পঁয়ত্রিশ বছরের তরতাজা তরুণ অণির্বাণ ভট্টাচার্য ততক্ষণে মৃত।
ডাক্তার এসে বললেন, “হার্ট অ্যাটাক, তীব্র।” সকলের চোখে জল। কিন্তু একজনের ভ্রু যুগল শুধু বাঁকা। রুনা খাস্তগীর, ছবির নায়িকা, যার ঠোঁট রাঙা আর চোখের চাউনি তীক্ষ্ণ, তার চোখে জল নেই, কেবল রয়েছে একরাশ সন্দেহ। তিনিই প্রথম ফোন করলেন পুলিশকে।
২
অণির্বান ভট্টাচার্য… অতি অল্প বয়সেই বিজনেসম্যান তকমা গায়ে লাগিয়ে নিয়েছিল। যার ছোটবেলার সোনালি সময়ের শেষ চিত্রটাই ছিল এক ধূসর ছায়া। তাঁর বাবা সুনির্মল ভট্টাচার্য ছিলেন জাহাজের ইঞ্জিনিয়ার। কলকাতার উত্তরের এক গোঁড়া বাঙালি পরিবার থেকে উঠে আসা এই প্রকৌশলী ছিলেন নিজের কাজের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত।
সুনির্মল ভট্টাচার্যের মৃত্যুর সময় অণির্বান মাত্র ১৩। সাগরের বুকে এক ঝড়ো রাতের তাণ্ডবে একটি জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি হারিয়ে গেলেন। তারপর থেকে অণির্বানের ছোট্ট পৃথিবীতে শুধুমাত্র একা মা, সাকুরা গডবার।
যিনি ছিলেন এক জাপানি শিল্প পরিবারের কন্যা। সুনির্মলের সঙ্গে জাপানের এক শিল্প প্রদর্শনীতে আলাপ। তারপর ধীরে ধীরে প্রেম। নিজের বাড়ির অমতেই বিয়ে। পরে অবশ্য পরিবার নিমরাজি হয়েও মেনে নিয়েছিল একমাত্র সন্তান সুনির্মলের মুখ চেয়ে।
সুনির্মলের মৃত্যুতে পুরো পরিবার শূন্যতায় ডুবে গিয়েছিল। তবে সাকুরা গডবার, সুনির্মলের মতোই দৃঢ়চেতা ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর শোকের মধ্যেই কলকাতায় এক ছোট্ট দোকান থেকে তিনি শুরু করলেন জাপানি অ্যান্টিক চিত্রকলা আর আর ইকেবানা ফুল সজ্জার ব্যবসা।
সেই ছোট্ট দোকান থেকে ক্রমেই ব্যবসা ছড়াতে থাকল। জাপানের অ্যান্টিক পেইন্টিং, কাঠের নকশা, সবই ধীরে ধীরে কলকাতায় জনপ্রিয় হতে শুরু করল। কিন্তু গোল বাধল অণির্বানকে নিয়ে। অণির্বানের মা চাইতেন তাঁর ছেলেটি যেন জাপানের ভাষা, রীতিনীতি ও সংস্কৃতিকে জড়িয়ে বড় হয়। কিন্তু গোঁড়া শ্বশুর ও শাশুড়ির উপস্থিতি তাঁর সে পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াল।
সুনির্মল ভট্টাচার্যের পিতা ছিলেন এক প্রগতিশীল মানুষ কিন্তু তিনি প্রাচীন বাঙালি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে গভীরভাবে যাপন করতেন। তাঁর কাছে জাপানি সংস্কৃতি ছিল অপরিচিত, বিদেশি যা পরিবারের ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ঠাকুরদার দৃষ্টিভঙ্গীর প্রচ্ছায়া পড়ছিল অণির্বানের ওপর। তিনি বলতেন, “বিদেশের ছেলের মতো হতে হবে না। বাংলার মাটি থেকে উঠে আসা বাঙালি হতে হবে।”
এই সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে অণির্বান বড় হতে থাকল। ছেলেটির মনে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন ছিল – মা ও ঠাকুরদার দ্বন্দ্বের মধ্যকার মধ্যবর্তী স্থানটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করত সে। স্কুল জীবনে অন্যান্য বন্ধুদের মাঝেও নিজেকে সম্পূর্ণ মানিয়ে নিতে পারত না। সকলের মতো তার কৈশোর ছিল না। বন্ধুরা তাকে উপহাস করত, “তুই তো সাদা জাপানি বাঙালি!” আর সে কেবল বলত, “আমি অণির্বান ভট্টাচার্য।”
২১ পূর্ণ হতেই সাকুরা গডবার অণির্বানের হাতে ধীরে ধীরে ব্যবসার দায়িত্ব তুলে দিলেন। তার ব্যবসার প্রতি ছিল এক অপরিসীম নিষ্ঠা ও প্রবল আকর্ষণ। ক্রমশ দোকান থেকে বড় বড় প্রজেক্টে ব্যবসা প্রসারিত হতে লাগল। কলকাতা শহরে জাপানি শিল্পকর্মের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলছিল। কিন্তু তার মনে হত সে জাপানি ঘরানাকে আত্মস্থ করতে পারেনি বলে বা বাঙালি সংস্কৃতিকে বেশি পছন্দ করে বলে কোথাও মায়ের সঙ্গে একটা দূরত্ব রয়েই গেছে। অথচ মা ছাড়া অণির্বানের জীবন শূন্য। মায়েরই ইচ্ছা ছিল ফিল্ম প্রোডাকশনে আসুক অনির্বাণ। মায়ের এই ইচ্ছে পূরণে তৎপর হয়ে উঠেছিল অণির্বান। জাপানি ফিল্মের বাংলা রূপান্তরও মাকে খুশি করার জন্যই। মা চেয়েছিলেন বলেই নতুন মুখের এন্ট্রি এই চলচ্চিত্রে। নইলে অনেক বন্ধুই তাকে প্রথম প্রোডাকশনে এত বড় রিক্স নিতে বারণ করেছিল। কাস্টিং ইন্টারভিউয়েও সাকুরা গডবারের মূল ভূমিকা ছিল। তিনিই মূলত নায়ক নায়িকা নির্বাচন করেছিলেন।
৩
সব কিছুই মুহূর্তে নিভে গেল। শোকের চিহ্ন চারপাশে। মায়ের কান্নার চিৎকারে কান পাতা দায়।
অণির্বাণ খারাপ শরীর নিয়ে এসেছিল এটা ঠিক… কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে কোথাও অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে, যা চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। রুনার কোথাও ঠিক মন মানছে না। পুলিশ এসে দেহ নিয়ে গেল। তবে তাদের কার্যকলাপে মনে হল না, কোনও সবিশেষ তৎপরতা দেখানো হবে।
রুনার মুহূর্তে মনে পড়ে গেল মিশমির কথা। ওরা কলেজে একই ইয়ারে পড়ে বিষয় আলাদা। অন্য এক বন্ধুর থেকে ফোন নং নিয়ে ফোন করল মিশমি ব্যানার্জীকে।
মিশমি ব্যানার্জী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেনসিক সায়েন্সে পড়েছে। তার স্পেশালিটি: ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ট্রেস এভিডেন্স। সে আর তার কাকা অনেক জটিল কেস সলভ করেছে রুনা শুনেছে। কাকা নির্মলেন্দু ব্যানার্জী, বয়স পঞ্চান্নর কাছাকাছি, কিন্তু শরীরচর্চায় টানটান দেহ। মাথার কিছুটা চুল পাকা, চোখে ভারি চশমা, আর মুখে সারাক্ষণ একধরনের ঠান্ডা হাসি। তিনি নিজেকে গোয়েন্দা বলেন না, বলেন “মস্তিষ্কব্যবসায়ী।”
পরনে ধূসর পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, কানে হেডফোন গুঁজে আছেন। গান শুনছিলেন, পুরনো জাপানি ফ্লিউট মিউজিক।
মিশমি দৌড়ে ঘরে আসে “কাকাই, একটা কেস এসেছে।”
– “তোর চোখে দেখতে পাচ্ছি প্রচণ্ড উত্তেজনা, তার মানে এর মধ্যে ‘মৃত্যু’ আছে। কেবল চুরি-ডাকাতি হলে তো এত ছটফট করতিস না।”
মিশমি বলে, “তুমি ঠিকই ধরেছ। কেসটা আমার বন্ধু রুনার সিনেমার প্রোডাকশনের। শুভ মহরতে প্রোডিউসার মারা গেছেন, অণির্বাণ ভট্টাচার্য।”
– “হুমম। টিভিতে দেখাচ্ছে।” চায়ের কাপে লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন, “শুভ মহরতের মৃত্যু! তাই তো… বন্ধু যখন, তখন চল তাহলে। আগে কাল সকালে থানায় যাওয়া যাক। তোর বন্ধুকেও ডেকে নে ওখানেই।”
থানার ও.সি. আগেই পরিচিত ছিলেন। নির্মলেন্দু বাবুকে দেখেই উঠে দাঁড়ালেন, “কী ব্যাপার রুনা দেবি সঙ্গে মানে আপনি কী প্রোডিউসারের কেসটা নিয়ে কিছু ভাবছেন? কিন্তু ওটা তো সিম্পলি হার্ট অ্যাটাকের কেস স্যার।”
– “যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই… জানেন তো উদ্দীপক বাবু? আপনার সহযোগিতা চাই। একজন অফিসারকে সঙ্গে দিলে আর অনুমতি পেলে একবার অকুস্থলটি দেখতে চাই। আর পোসমর্টেম রিপোর্ট গা এলাফেলা করে যেন না হয়। সিরিয়াস একটু … দেখবেন।”
আর কথা বাড়ালেন না ওসি। একজনকে সঙ্গে দিলেন, ছেলেটি নতুন জয়েন। অভিমন্যু রায়। বেশ চটপটে দেখেই মনে হল। বললেন, “স্যার আপনারা গাড়িতে যান, আমি বাইকে আসছি।”
গাড়িতে যেতে যেতে রুনাকে প্রশ্ন করলেন নির্মলেন্দু বাবু, ” তোমার কেন সন্দেহ হল বলো দেখি।”
– “একজন সুস্থ মানুষ এভাবে আর তাছাড়া…”
– “তাছাড়া!”
– “স্যার সেদিন দেখা হতেই বলেছিলেন, রুনা সবকিছু ঠিকমতো উতরে গেলে হয়। কত না জানা ঘটনা যে সামনে আসে জীবনে। কী যে সত্যি কী যে মিথ্যা বড় দ্বিধায় আছি। সময় ভালো নয় বুঝলে। বিপদের গন্ধ পাচ্ছি।”
– “হুমম। কাউকে সন্দেহ হয়?”
– “না, তবে দীনেশ স্যারকে আমার পছন্দ নয়। সেটা অবশ্য অন্য কারণে। উনি আমায় প্রোপজ করেছিলেন। আমি না বলেছি বলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। অণির্বান স্যারের সঙ্গে, ম্যাডামের সঙ্গে অবশ্য ওঁর খুব ভাব।”
কথা বলতে বলতে হলে পৌঁছে গেলেন সকলে। রুনার কাছে ঘটনার সময়ের ভিডিও ছিল। ওর এক বন্ধু উপস্থিত ছিল হলে, সেই পাঠিয়ে দিয়েছে। নির্মলেন্দু বাবু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছিলেন ভিডিও ক্লিপ আর জায়গাটা মিলিয়ে মিলিয়ে।
– “আচ্ছা, অভিমন্যু কোনও জিনিস সরানো হয়েছে? বা তোমরা কিছু পেয়েছ সন্দেহজনক?”
– “না স্যার। সেই সময়ে তো অনেক লোক। কী যে এদিক-ওদিক হয়েছে বোঝা দায়।”
– “হুমম!”
নির্মলেন্দু বাবু কিছু খুঁজেই যাচ্ছেন মনে হল মিশমির। কিন্তু পাচ্ছেন না। অনেকক্ষণ খোঁজার পর বললেন, চলো একবার অণির্বান বাবুর বাড়ি যাওয়া যাক।
অণির্বাণের বর্তমান ৪/এ, বাড়ি বালিগঞ্জ প্লেসে। একতলা ও দোতলার সংমিশ্রণে তৈরি সুন্দর এক বাংলো। বাইরে বাগানে অনেক ফুল, ভিতরে দেওয়ালে ঝুলছে জাপানি কালি-ছাপা চিত্র, কাঠের উপর সূক্ষ্ম খোদাই করা ঘোড়ার মূর্তি, আর পেছনের ঘরে জাপানি আয়রন কেটল।
সারা ঘরে জাপানি তৈলচিত্রের ছড়াছড়ি। আলমারি ভর্তি জাপানি ভাষার বই। টেবিলে ইকেবানা ফুল সজ্জা। একটুকরো জাপান যেন নেমে এসেছে।
সাকুরা গডবার চুপচাপ বসে। পরনে সাদা শাড়ি।
থানা থেকে এবং রুনা আগেই জানিয়েছিল নির্মলেন্দু বাবু আর মিশমি আসছেন। তাই মনে হয় তৈরিই ছিলেন।
নির্মলেন্দু নমস্কার জানিয়ে বলেন, “আমি নির্মলেন্দু ব্যানার্জী। আপনার ছেলের আকস্মিক মৃত্যুর তদন্ত করছি।”
সাকুরা চোখ তুলে বলেন, “আমি একদম একা হয়ে গিয়েছি, ওর কোনও শত্রু ছিল না। অকারণ এই তদন্তের কী দরকার ছিল জানি না। রুনা আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই আপনাদের বিরক্ত করেছে জানি। বয়সে ছেলেমানুষ। তেমন কোনও কিছু মনে হলে কি আমি চুপচাপ বসে থাকতাম? আমি মা, ওর হার্টের অসুখ ছিল, ছোট থেকে…”
– “তেমন কোনও রিপোর্ট আপনার কাছে আছে?”
– “আছে। তবে এই মুহূর্তে সেসব বের করার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। আপনি মেইল দিয়ে যান পরে পাঠিয়ে দেব।”
– “কী ওষুধ খেতেন?”
– “এখন ছেলে বড় হয়ে গেছে। ওইই একা ডাক্তার দেখায়, ওষুধ খায়। এসব কী আর বলত কিছু… বললে এদিন …”
– “ম্যাডাম আপনার দোকানে একবার যদি যেতে পারতাম …”
– “আপনাদের বাধা দেব না, আমি কর্মচারীকে বলে দিচ্ছি। কিন্তু জানি না আপনাদের কী ইচ্ছা। এবার আপনারা আসুন। আমি খুব ক্লান্ত ও শোকাহত।”
দোকানে নির্মলেন্দু বাবু ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ বললেন, “এখানে ফুলের বোকে কে সাজায়?”
কর্মচারী বললেন, “ম্যাডাম।”
– “খদ্দের আছে?”
– “আছে তবে বেশি কেনেন দীনেশ স্যার।”
– “সাকুরা, সুবাকি, আসাগাও, আজিসাই, কিনমোকুসেই ….”
এই অবধি বলেই মিশমির দিকে তাকাতেই মিশমি বলে উঠল, “জাপানি ফুল”
– “গুড স্টাডি।”
আবার কর্মচারীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই ফুল আসে কোথা থেকে?”
– “ম্যাডামের শখ, তাই স্যার বাইরে থেকে আনাতেন…”
– “সব ফুলগুলো চেনো তুমি?”
– “নাম জানি না, তবে এই ফুলগুলোই প্রায় আসে।”
– “এই ফুলটা? বেগুনি রঙের?”
– “এটা চিনি না। এই বোকেটাতেই দেখছি, এটা তো …।”
– ” মিশমি এই বোকেটার একটা ছবি তোল … আমায় পাঠা। ইনসপেক্টর কাল একবার দীনেশ তিওয়ারির বাড়ি যাব সকালে।” নির্মলেন্দু বাবুর কথায় মাথা নাড়ালেন অভিমন্যু।
– “কাকাই এ তো …!” আঁতকে ওঠে মিশমি।
– “হুমম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে, কারা আর কেন? আদৌ কি যা ভাবছি তাই? চল, আজকের মতো বাড়ি ফেরা যাক। আমার কিছু কাজ আছে।”
– “কিছু বুঝতে পারলেন কাকু? রুনা জানতে চাইল।”
– “না হে কন্যা। এখনও সব গন্ধই বাতাসে ভাসছে। গন্ধকে আগে মুঠোয় ধরি।”
৪
পরদিন সকালে দীনেশের সোনারপুরের ফ্ল্যাটে যখন রুনা মিশমি আর নির্মলেন্দু বাবু পৌঁছলেন তখন বেলা দশটা। ড্রয়িংরুমে বসিয়ে একজন বয়স্ক মতো লোক ঘরে দীনেশকে ডাকতে গেলেন। নির্মলেন্দু বাবু ঘর ঘুরে দেখতে লাগলেন।
ঠিক অণির্বানের বাড়ির মতোই এখানেও একটুকরো জাপান যেন। ঘরে দামি দামি অ্যান্টিক জাপানি তৈলচিত্র। জাপানের শিল্পের ছোয়া সর্বত্র।
– “গুড মর্নিং ! নমস্তে! বলিয়ে স্যার।”
– “নমস্কার। আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমরা কেন এসেছি।”
– “হাঁ ও তো থানা থেকে বলেছিল কাল রাতে। দেখিয়ে যো আপলোগ ভাবছেন কি, এসব কুছু না। অণির্বান বহুত আচ্ছা লেড়কা থা। মেরা ভাই য্যায়সা। কেয়া সে কেয়া হো গ্যায়া! বেওসা কে লিয়ে এত্ত ভাবত, কি নিজের পরোয়া করত না।
মেরা ফার্স্ট ফিল্ম থা… ও ভি! সবকুছ বিগড় গেয়া।
– “আপনি জাপানে ছিলেন কখনো?”
– “কি যে বাত বোলেন স্যার। অনাথ বাচ্চা হু ম্যায় … জাপান ক্যায়সে।”
– “তাহলে এই যে ঘর জোড়া জাপান!”
– “ও তো আন্টি আর অণির্বান ভাইয়াকে সাথ মিলনে কী বাদ থোড়া ইন্টারেস্ট…”
– “আপনার সঙ্গে ওঁদের আলাপ কোথায় হয়েছিল?”
– “কার্শিয়াং মে। ও লোগ ঘুমনে গ্যায়ে থে পাঁচ শাল প্যাহেলে। হাম যো বোর্ডিং স্কুল মে রহেতে থে উস স্কুল কী বাচ্চোকে লিয়ে গিফ্ট লিয়ে গেছিল। হামি তখন ওহি স্কুলে মাস্টারি করি।”
– “তারপর এখানে এলেন কী করে?”
– “অণির্বান ভাইয়া কো হামি বলেছিলাম কী আমার অ্যাক্টিং-এর শখ আছে। উসকে বাত একদিন ভাইয়া কো ফোন মিলা চলা আও। উসকে বাদ ছোটিমোটি সিরিয়াল মে ওহি চান্স দে দেতে থে।”
– “তারপর সোজা ফ্লিমে?”
– “আন্টি কো ম্যয়হি পছন্দ এসে গেল। রুনা কো ভি।”
– “এই বাড়ি কার?”
– “রেন্ট মে হু।”
– “আপকা পাপা মাম্মা?”
– “কোহি নেহি হ্যায়। ফাদার নে উঠাকার কব স্কুল মে লে আয়া ও ভি মালুম নেহি।”
– “তিওয়ারি আর দীনেশ?”
– “ও ভি মালুম নেই। সব ফাদার নে দে দিয়া…”
– “এই জাপানি কালচারের শখ কবে থেকে? বইও দেখছি কিনেছেন।”
– “ভেরি রিসেন্ট স্যার। ফিল্মকে লিয়ে আন্টি ওউর ভাইয়া নে গিফ্ট কিয়া।”
– “জাপানি ভাষা বলতে জানো?”
– “নেহি স্যার, থোড়া থোড়া আন্টি নে শিখায়া।”
– “স্যার মুঝে আব মাফ কিজিয়ে কুছ কাম হ্যায়।”
– “ওকে। থ্যাঙ্কস।”
ওখান থেকে বেরিয়ে মিশমি আর রুনাকে একবার থানা হয়ে বাড়ি যেতে বললেন নির্মলেন্দু বাবু। নিজে অভিমন্যুকে ডেকে নিয়ে গেলেন আবার প্রেক্ষাগৃহে।
৫
রাত আটটা। দমদম-পার্কের বাড়িতে নিজের ঘরে মিশমি উশখুশ করছে। কাকাই স্টাডিতে গম্ভীর মুখে বসে। অনেককিছু বলার ও শোনার আছে। কিন্তু কাকাইকে এই সময়ে বিরক্ত করাও মুশকিল। প্রাথমিক পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে হার্ট অ্যাটাকই মৃত্যুর কারণ বলা হয়েছে। সেই মুহূর্তে ডাক এল, মিশমি…
– হ্যাঁ, বলো কাকাই। ডাকলে আমায়?
– হুমম। কী মনে হচ্ছে?
– এখনো অবধি “অ্যাকোনিটাম নেপেলাস” বেশ সন্দেহজনক।
– আর কী কী অসামাঞ্জস্য লাগছে বলে ফেল তো।
মিশমি যেন তৈরিই ছিল, গড়গড় করে বলতে লাগল, “দীনেশ তিওয়ারির বাড়িতে বইগুলো খুব পুরোনো, নতুন বই নয়। হতে পারে বইগুলি অণির্বানদের। কিন্তু…”
– “ভেরি গুড। আর?”
– “জাপানি ভাষা দীনেশ জানে না বলেছে কিন্তু রুনা বলেছে ও নাকি সেটে ভালোই জাপানি বলত। আর ওর চেহেরাতেও জাপানি আদল আছে। কিন্তু অণির্বান বাবুর মা জাপানি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর চেহারায় সে ছাপ ছিল না।”
– “বেশ।”
– “অরফ্যান হতেই পারে কিন্তু সাধারণত মিশনারি স্কুলে ক্রিশ্চিয়ান নাম দেওয়া হয়। তিওয়ারি কেন?”
– “ব্রিলিয়ান্ট! তাহলে তিওয়ারিবাবুকে কালটিভেট করতে হচ্ছে? কী বলিস? আচ্ছা রুনার কাছে যে ভিডিও ফুটেজ আছে তা সকলের বক্তৃতার শুরু থেকে। তার আগে কী কী হয়েছিল জেনে নিস কাল।
কাল তোর পরীক্ষা আছে তো কলেজে?”
– “হ্যাঁ।”
– “কাল আমিও সারাদিন একটু ব্যস্ত থাকব।”
৬
রাত দশটা। মিশমি অপেক্ষা করছে। কাকাই ফেরেনি এখনও। অভিমন্যু বাবুকে ফোন করেছিল, তিনিও জানেন না কোথায় গেছেন কাকাই। একটু চিন্তায় পড়ে গেল মিশমি।
নির্মলেন্দু বাবু ফিরলেন রাত এগারোটায়।
মিশমি অপেক্ষায় ছিল, কাকাই একটু ফ্রেস হতেই ঘরে ঢুকল।
– “কিছু কি জানতে পারলে কাকাই?”
– “ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ”
গলা ছেড়ে গান গাইতে লাগলেন নির্মলেন্দু বাবু।
মিশমির গাল ফুলল। তা দেখে নির্মলেন্দুবাবু বললেন, “তুই কী জানলি বল রুনার থেকে।”
– “অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাইকে উত্তরীয় পরানো হয়। আর অণির্বান স্যারকে পুরো টিমের পক্ষ থেকে শাল আর ফুলের বোকে দেওয়া হয়। এই দেখো ছবি। তারপর কলা কুশলীরা নিজেদের সিনেমার ডায়লগ বলেন। গান করেন। একদম শেষের দিকে শুরু হয় কথা বলা। প্রথমে ম্যাডাম তারপর ডিরেক্টর এবং শেষে অণির্বান স্যার। আর সকলের জন্য কোল্ডড্রিঙ্কসের ব্যবস্থা ছিল।
– “মন কী বলছে?”
– “ওই ফুলটা… কিন্তু কেন?”
– “ঘুমোতে যা। কাল বিকেল চারটে বালিগঞ্জ প্লেসে যেতে হবে। আর হ্যাঁ তুই চাইলে কলেজ থেকে অভিমন্যু তোকে পিক আপ করে নিতে পারে, যেমন আজ…”
– “আহ! কাকাই।”
দৌড়ে পালাল মিশমি।
বিকেল পাঁচটা। ৪/১ বালিগঞ্জ প্লেসের ড্রয়িং রুমে থমথমে পরিবেশ।
প্রথমে মুখ খুললেন নির্মলেন্দু বাবু, “সাকুরা ম্যাম আপনি এত গুণী মানুষ সত্যিই জানা ছিল না। ইকেবানা শিল্পতে আপনি বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছিলেন একসময়। সে সময়ের জাপানি খবরের কাগজে ফলাও করে ছাপা হয়েছিল জানতে পারলাম…”
– “হ্যাঁ। দীর্ঘদিন আগের ব্যাপার।”
– “ওই কাগজেই দেখলাম আপনার প্রাক্তন স্বামীও একজন নাট্যশিল্পী ছিলেন। দুর্ঘটনায় যখন উনি মারা যান তখন আপনি এক সন্তানের মা।”
চমকে উঠলেন সাকুরা গডবার। বিরক্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন, “এটা নতুন করে জেনে কী হবে?”
– “ধনঞ্জয় বাবুকে আপনি নিশ্চয় চিনতেন?”
– “না, এই নামে কাউকে চিনি না।”
– “চেনেন ম্যাডাম চেনেন। এই ছবিটা দেখুন তো চামেলি আর ধনঞ্জয় বাবুর সঙ্গে আপনিই তো?”
চমকে উঠে ধীর কণ্ঠে বলেন, “হ্যাঁ।”
– “আপনি বলবেন না কি আমি? আমিই বলি, কোথাও ভুল হলে শুধরে দেবেন বরং। সাকুরা গডবারকে যখন সুনির্মল ভট্টাচার্য বিয়ে করেন তখন তিনি উইডো ও এক সন্তানের জননী। সন্তানকে ফেলে তিনি বিবাহ করতে রাজি হননি। সন্তান সহ সুনির্মলবাবু বিয়ে করলেও তাঁর পরিবার তা মেনে নেয়নি। সেই সন্তানকে কার্শিয়াংয়ের সন্তানহীন দম্পতি ধনঞ্জয় ও চামেলি দত্তক নেন। মোটা টাকার বিনিময়ে সে ব্যবস্থা অবশ্য সুনির্মলবাবুই করেন। গরীব ঘরে তাঁর সন্তান মানুষ হচ্ছে তা ম্যাডামের সহ্য হয় না। তিনি একরকম জোর খাটিয়ে ছেলেকে ভর্তি করেন কার্শিয়াংএর নামী কনভেন্ট স্কুলে। সেখানেই বড় হয় দত্তক পিতা ধনঞ্জয় তিওয়ারির ছেলে দীনেশ তিওয়ারি ওরফে কেইগি গডবার। কী দীনেশবাবু?”
ঘরে পিন ড্রপ সাইলেন্ট। সাকুরা মুখ খোলেন, “তার সঙ্গে অণির্বানের মৃত্যুর কী সম্পর্ক? আমি কোনও অন্যায় করিনি।”
– “আমি শেষ করিনি এখনও ম্যাডাম। আপনি নিশ্চয়ই ‘মঙ্কশুড’ ফুলের নাম জানেন।”
– “না। এমন কোনও ফুল আমি চিনি না।”
– “তাহলে বলতে চাইছেন বোকেটা দীনেশই বানিয়েছিল?”
সাকুরা চুপ। নির্মলেন্দু বাবু শুরু করলেন।
– “দীনেশ বাবু জানতেন অণির্বানের হার্টের অসুখ আছে। বিদেশ থেকে ফুল আনিয়ে দোকানের ইকেবানা সাজানো হয়। আর ইকেবানা কেনেন মূলত দীনেশই। তেমনই একটি ফুলের বোকে কিনে নিয়ে গিয়ে দীনেশবাবু সেই বোকেতে গুঁজে দেন বিষাক্ত ফুল, সেটাই দেওয়া হয় অণির্বানকে। পোষাকের সঙ্গে মানানসই করে দীনেশবাবু তাই সেদিন হ্যান্ড গ্লাভস পরেছিলেন। যাতে ওই ফুল তাঁকে স্পর্শ না করে। অত্যন্ত সুগন্ধি ফুলের সঙ্গে মিশে থাকা মঙ্কশুড বা “অ্যাকোনিটাম নেপেলাস”
এর ঘ্রাণ শুঁকে নেন অণির্বান। তার আগেই অবশ্য সেই ফুলের রস মেশানো হয়েছিল অণির্বানের কোল্ডড্রিঙ্কসে। এক্সট্রা ফুল দীনেশের বাড়িতে থেকে গেলে পরে সমস্যা হতে পারে, তাই গুঁজে দেন বোকেতে। আর তারপরই…”
– “এসব মিথ্যে, আমি কেন করব এসব?” চিৎকার করে ওঠেন দীনেশ।
– “আপনার লোভ। আপনার মা চেয়েছিলেন আপনার অভিনয় দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনির্বাণের সঙ্গে জুড়ে দিতে। কিন্তু অণির্বানের এত সম্পত্তি দেখে আপনার মাথা ঘুরে যায়। সে চলে গেলে আপনি এই গোটা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। তাই ইকেবানাতে জুড়ে দিলেন বিষাক্ত ফুল।
অণির্বানের মৃত্যুর পরপরই বুদ্ধিমতী এবং ফুল চিনতে দক্ষ সাকুরা ম্যাডাম বুঝে যান কী সর্বনাশ আপনি ঘটিয়েছেন। ড্রাইভারকে দিয়ে প্যাকেট মুড়ে ফুলের তোড়া তিনি ভিড়ের মাঝে নিজের গাড়িতে পাঠিয়ে দেন এবং পরে গভীর রাতে বাড়ি ফেরার সময় দোকানে ঢুকে সেই বোকের ফুলকে বিষ নিষ্ক্রিয় করে সাজিয়ে রাখেন দোকানের অন্যান্য বোকের সঙ্গে। পরে সুযোগ বুঝে ফেলে দেবেন ভেবেছিলেন বোধহয়। কিন্তু তাড়াহুড়োয় পার্কিং-এ কিছু ঝরা পাপড়ির সঙ্গে মঙ্কশুডের দু’টি পাপড়িও পড়েছিল। আর ম্যাডামের গাড়ির ড্রাইভার ও দোকানের কর্মী দু’জনকেই গতকাল রাতে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তথ্য পেয়ে গেছেন।”
– “এসব প্রমাণ করবেন কী করে?”
– “যে অণির্বানের দোকানে ফুল সাপ্লাই দেয় তাকে দিয়েই দীনেশ বাবু এই বিষাক্ত ফুল আনিয়েছিলেন। গতকাল রাতে জেরার মুখে তিনি তা স্বীকারও করেছেন। অণির্বানকে দেওয়া ফুলের বোকের ছবি আর আপনার দোকানের ফুলের বোকে এক। ইকেবানা শিল্পে দক্ষ আপনি ফুলের বিষ নিষ্ক্রিয় করতে জানেন, ফুল সাজানোর আগে এটি করেই থাকেন। আপনি কি স্বীকার করবেন? না থানায় গিয়ে ছেলেকে থার্ড ডিগ্রী…”
ভেঙে পড়লেন সাকুরা গডবার, “বহুবার বুঝিয়েছিলাম কেইগিকে মানে দীনেশকে। ও শুনল না। অণির্বান আমার সন্তান হলেও কিছুতেই জাপানি সংস্কৃতি ওর মধ্যে স্থাপন করতে পারিনি। কেইগিকে দূরে রেখে মানুষ করলেও ওর মধ্যে তা পেরেছিলাম। ওর প্রতি দুর্বলতা বেশিই ছিল আমার। ওটাই সর্বনাশের মূল। ও বটানিতে এম.এস.সি.। ওর বাবার মতো অভিনয়ে দক্ষ। চেয়েছিলাম অণির্বানের সঙ্গে মিশে কাজ শুরু করুক, ধীরে ধীরে… কিন্তু ওর লোভ সব শেষ করে দিল।”
নির্মলেন্দু বাবু বললেন, “বড্ড কাঁচা কাজ হয়েছে। ভেবেছিলেন পোষ্টমর্টেম হার্ট অ্যাটাক দেখালে আর কিছুই ধরা পড়বে না। কিন্তু বাধ সাধল রুনা। যার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল অণির্বানের। দীনেশের পূর্ব জীবনের কথা ও ঘটনাচক্রে জেনে ফেলেছিল। কি ঠিক বলছি তো রুনা? তুমি কিছুদিন আগে কার্শিয়াংএ বেড়াতে গিয়ে সবটুকু জেনে, জানিয়েওছিলে অণির্বানকে।
– ” হুমম।” রুনার মৃদু সম্মতি।
– “দোকানের বোকেতে ওই ফুল আর দীনেশের ঘরে একটি জাপানি বইয়ের ভিতরে প্রথম পাতায় ইংরাজিতে হ্যাপি বার্থ ডে দীনেশ লেখা যার তলায় তারিখ আজ থেকে ১২ বছর আগের। কে দিয়েছে লেখা নেই …দেখেই সন্দেহ হয়।
কার্শিয়াং-এ খোঁজ পাঠাই। ওখানকার পুলিশ ভীষণ সাহায্য করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যাবতীয় তথ্য হাতে পাই দীনেশের সম্পর্কে। জাপানি ইকেবানার সঙ্গে এই ফুল একেবারেই বেমানান। খবর নিয়ে জানতে পারি সেদিনের ফুলের তোড়া দীনেশ এনেছিল বাড়ি থেকে। বাকিটা দুইয়ে দুইয়ে চার… ইন্সপেক্টর এবার আপনার কাজ। আমরা আসি।”
নির্মলেন্দুবাবু আর মিশমি বেরিয়ে এল। পিছন থেকে রুনা ডাক দিল, “স্যার আপনার ফিজটা।”
– “ভালোবাসার মূল্য হয় না রুনা … তোমার ভালোবাসা অণির্বান এখন শান্তিতে ঘুমোবেন। আসি … ভালো থেকো।”
ফুলেল মৃত্যু রহস্য গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
অ্যালার্মের ভাষা
চা-বেলার চৌকাঠ
অরুন্ধতির নীল চিঠি