কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

নাটের গুরু

নাটের গুরু গোয়েন্দা গল্প – রানা জামান

ফাগুন ও রৌশনীর প্রথম বিয়ে বার্ষিকীর পার্টি চলছে। ঢাকার ৩০০ ফুট রাস্তার উত্তর পাশে বসুন্ধরার একটা কনভেনশন সেন্টারে। এটার নাম দেয়া হয়েছে শেক্সপীয়ার হল। প্রচুর অতিথি এসেছে। বলতে গেলে সবাই নিজ নিজ গাড়ি করে এসেছে। প্রতিটি গাড়িতে একাধিক অতিথি। পার্কিং ভরে গেছে গাড়িতে। দুপুর একটা বাজে। পান চলছে যার যার পছন্দ মতো। শক্ত ও কোমল, উভয় প্রকার পানীয়ের ব্যবস্থা আছে। অনেকে দুপুরের খাবারের চিন্তা ছেড়ে দিয়ে শক্ত পানীয় দিয়ে পাকস্থলী পূর্ণ করার প্রক্রিয়া চালু করে দিয়েছে। আমাদের দেশে মাগনা পেলে গলা পর্যন্ত শক্ত পানীয় পান করতে থাকে অনেকেই। একটা স্টেজে ইংরেজি গানের সাথে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের তিনজন নতুন নায়িকা ভারি নিতম্ব দুলিয়ে গা অদ্ভূতভাবে প্যাঁচিয়ে নাচছে, যদিও তাল না মিলায় অদ্ভূত লাগছে;অতিথিরা এটাই উপভোগ করছেন একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে। কেউ কেউ তো গিলে খাচ্ছে নায়িকাদের! এই পার্টিতে নতুন প্রেম যেমন গড়ছে, তেমনি কিছু কিছু ঠুনকো প্রেম ভেঙ্গে যাবারও সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।আজকাল এসব পার্টতে এমনটাই হয়ে আসছে।

ঠিক পনেরো মিনিট পরে ভয়ানক শব্দে একটা বোমা ফাটলো হলটার কোনো স্থানে। ধোঁয়ায় ভর্তি হয়ে গেলো পুরো হল। ধোঁয়ায় কাশতে কাশতে ভয়ার্ত মানুষের আর্তচিৎকার ও ছুটাছুটি চলছে। ফোনকল পেয়ে নিকটতম থানার পুলিশ এবং আশেপাশের ফায়ার সার্ভিসের লোকবল চলে এলো, এলো এম্বুলেন্স। শুরু হলো উদ্ধার কাজ। এলো সিআইডি। পাওয়া গেলো বায়ান্নটি লাশ। ছিন্ন-বিছিন্ন, কারো হাত আছে পা নেই; কারো শরীর আছে, মাথা নেই; কারো ধড় আছে, হাত-পা বা মাথা নেই! ভয়াবহ অবস্থা! আশেপাশের আবাসিক এলাকা থেকে বাসিন্দারা চলে এলেন। সবাই হাত লাগালেন উদ্ধার কাজে। আগে আহতদের ধ্বংসস্তুপ থেকে একে একে উদ্ধার করে নেয়া হতে থাকলো কাছে ও দূরের বিভিন্ন হাসপাতালে। অতঃপর মৃতদের দেহ বা দেহাংশ সংগ্রহ করে ডেথব্যাগে রাখা হলো। সিআইডির একাধিক দল লেগে গেলো তদন্তে। ওরা ঘটনাস্থল থেকে বোমার ডিটোনেটর খুঁজে পেলো; এটাই আলামত বিস্ফোরক দ্রব্যের; কেমন বিস্ফোরক দ্রব্য ছিলো এটা, কী কী ছিলো এতে, তা আবিস্কার করা হবে ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে।

ঐদিন বিকেল চারটা। চলচ্চিত্র জগতের নামকরা প্রযোজক আকিজ আলম খিলখেতের লা মেরেডিয়ান হোটেলে এসেছেন বৈকালিক চা পান করতে। সাথে দু’জন নতুন নায়িকাও আছে। ওদের তালিম দেয়া হচ্ছে অভিনয়সহ অন্যান্য বিষয়ে। টেবিলে চা-এর সরঞ্জামাদি দিয়ে গেলো এক এটেন্ডেণ্ট। এক নায়িকা হাতের চুড়িতে রিনঝিন শব্দ করতে করতে চা তৈরি করতে আরম্ভ করলো। আকিজ আলম ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন একদৃষ্টে।

তখন আকিজ আলমের মোবাইল ফোনে একজন ফোন করলে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনটা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একান্ত সহকারী আজিজকে দিলেন। কারণ, আকিজ আলম সরাসরি কোনো ফোনকল গ্রহণ করেন না, যদিও মোবাইল ফোনটা নিজ হাতে রাখেন সবসময়। আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স। আজিজ মোবাইল ফোন কানে ঠেকিয়ে হ্যালো বললে ওপ্রান্ত থেকে একজন বললো, তোমাকে চিনি,তুমি আকিজ আলমের সহকারী আজিজ। তোমার সাথে  কথা বলার জন্য কল করি নি। আকিজ আলমকে ফোনটা দাও।

কণ্ঠ শুনে আজিজ চমকে উঠলো। অমিতাভ বচ্চন নাকি? স্যার কি অমিতাভ বচ্চনের সাথে এর আগে কখনো কথা বলেছেন? আজিজ বললো, আপনার কণ্ঠটা অমিতাভ বচ্চনের মতো লাগছে। আপনি কি অমিতাভ বচ্চন?

ধরে নাও আমি অমিতাভ বচ্চন! তোমার বসকে দাও!

আপনি কে বলছেন পরিচয় না দিলে উনাকে ফোন দেয়া যাবে না, নির্দেশ দেয়া আছে আমাকে।

ওপ্রান্তের লোকটা রেগে বললো, জেঠামি করো না আজিজ! আকিজকে ফোনটা না দিলে প্রথমে তোমার ক্ষতি হবে, পরে আকিজ আলমের। শুনেছো নিশ্চয়ই দুপুরে বসুন্ধরা কনভেনসন সেণ্টারে বোমা বিস্ফোরণে বায়ান্ন জন মারা গেছে! ওটা আমিই করেছি!

আজিজ ভয় পেয়ে গেলো। সে আকিজ আলমের কাছে গিয়ে বললো, লোকটা হুকমি দিচ্ছে স্যার! আমার কাছে নাম বলছে না; তবে অমিতাভ বচ্চনের মতো। আপনাকে ফোনটা না দিলে আপনার ক্ষতি করবে।

এ কথায় নামকরা প্রযোজক আকিজ আলমের চেহারায় কোনো ভাবান্তর হলো না। হাত বাড়িয়ে আজিজের হাত থেকে মোবাইল ফোনটা নিয়ে কানে ঠেকাতেই ওপ্রান্ত থেকে লোকটা বললো, আমি অমিতাভ বচ্চন। নয়া কাহিনী শোনার জন্য আপনাকে ডলি স্টুডিওতে যেতে হবে।

আকিজ আলম বললেন, প্রথমতঃ অমিতাভ বচ্চনে মতো কথা বলার চেষ্টা করলেও আপনি অমিতাভ বচ্চন না! অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ পৃথিবীর সবাই চেনে। দ্বিতীয়তঃ আমি যতদূর জানি অমিতাভ বচ্চন কাহিনী শোনার জন্য কাউকে ফোন করেন না। তাছাড়া আমি এখন খুব ব্যস্ত। আপনার মতো অচেনা অজানা লোকের কাছ থেকে কাহিনী শোনার জন্য ডলি স্টুডিওতে যেতে পারবো না।  

তখন ওপ্রান্তের লোকটি বললো, বসুন্ধরা কনভেনসন সেণ্টারে আজ দুপুরে বোমা ফাটিয়েছি এই আমি! আমার কথামত ডলি স্টুডিওতে না গেলে আপনার কারে বোমা ফাটিয়ে দেবো!কী হবে তখন আপনার ব্যস্ত প্রডিউসার আকিজ আলম! কাজটা পুলিশের; কিন্তু করতে হবে আপনাকে।

এ কথায় ভয় পেলেন আকিজ আলম। বললেন, কারে বোমা ফাটাতে হবে না। আমি যাবো ডলি স্টুডিওতে। কখন যেতে হবে বলেন। কিন্তু পুলিশের কাজ আমি করতে যাবো কেনো?

তখন লোকটি বললো, যথা সময়ে পুলিশ আপনাকে বলবে। আর ফোন করে আমি সময় বলবো। সময় মতো না গেলে কিন্তু খবর আছে!

ঢাকার সিআইডি অফিস।বসুন্ধরা কনভেনসন সেণ্টারের ভয়াবহ মর্মান্তিক ঘটনায় সিআইডি অফিসের সবাই হতভম্ব। ক্লু বলতে একটা ডিটোনেটরের পোড়া টুকরো। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিবলি আহমেদ ডিটোনেটরে আঙ্গুলের ছাপ খুঁজছেন। ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বলতে গেলে সিআইডির সবাই। সকলেই ব্যথিত ও বিমর্ষ। তখন অফিস সহায়ক নয়ন একটি চিঠি নিয়ে ভেতরে ঢুকে সহকারী পুলিশ কমিশনার হায়দার শরীফের হাতে দিলো। হায়দার শরীফ চিঠিটা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখলেন- চিঠিটা সরকারি ডাকে এসেছে।

হায়দার শরীফ জিজ্ঞেস করলেন, পিয়নটাকে চিনিস নয়ন?

নয়ন বললো, জ্বে স্যার।

ঠিক আছে। এখন যা।

নয়ন চলে গেলে হায়দার শরীফ চিঠিটা খাম থেকে বের করে খুললেন। চিঠিতে টাইপ করে লেখা-
দুই ঘন্টা পরে আরেকটা বোমা ফাটবে। তাকে ধরলে বা ধরার চেষ্টা করলে চার ঘন্টা পরপর একটা করে বোমা ফাটতে থাকবে। পাঁচ কোটি টাকা দিলে আর বোমা ফাটবে না!

হায়দার শরীফের চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেলে পুলিশের পরিদর্শক আয়নাল জিজ্ঞেস করলো, কী লেখা আছে চিঠিতে, স্যার?

হায়দার শরীফ কিছু না বলে চিঠিটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলেন। আয়নাল চিঠিটা নিয়ে একবার পড়ে পাশের কর্মকর্তাকে দিলো। এভাবে সবাই চিঠিটা পড়ে হায়দার শরীফের হাতে ফিরিয়ে দিলো।

হায়দার শরীফ বললেন, আচ্ছা মুসিবতে পড়া গেলো দেখছি! বোমা ফাটিয়ে এতোগুলো মানুষ হত্যা করে এখন আবার আরো বোমা ফাটানোর হুমক দিয়ে টাকা চাচ্ছে। পাঁচ কোটি টাকা!

পুলিশের পরিদর্শক জব্বার বললো, আগেই টাকা দিতে রাজি না হয়ে চিঠির উৎস খোঁজার চেষ্টা করা যায় না স্যার?

হু খোঁজা যায়। খামের উপরে সিল থেকে জানা যাবে কোন পোস্টাফিস থেকে পোস্ট করা হয়েছে। ঐ সকল পোস্ট অফিসে যদি সিসি ক্যামের থাকেও, তাহলে কি শনাক্ত করা যাবে কে এই চিঠিটা পোস্ট করেছে? ব্যাপারটা সমুদ্রে সুই খোঁজার মতো হয়ে যাবে।

সহাকারী কমিশনার হায়দার শরীফের কথার যুক্তি বুঝতে পেরে সবাই চুপ মেরে গেলো।

অধস্তন সহকর্মীদের একবার দেখে হায়দার শরীফ বললেন, আপাততঃ আমাদের টাকা দেবার ছল করে ইডিয়টটাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু টাকা দেবার ক্ষমতা আমার নাই। ডিএমপির হেড কোয়ার্টারের ডিসি এডমিনের সাথে কথা বলে দেখি উনি কী বলেন।

হেড কোয়ার্টারের ডেপুটি কমিশনারকে ফোন করে কথাটা বললে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এসিপি হায়দার শরীফ বললেন, টাকার ব্যাগে একটা ট্রান্সমিটার প্লান্ট করা হবে। তখন ইডিয়টটাকে ধরা সহজ হবে, স্যার।

কালপ্রিটকে ধরার এটা একটা ভালো উপায় হতে পারে ভেবে ডেপুটি কমিশনার অব ডিএমপি রাজেনুর রহমান টাকা দিতে রাজি হলেন।

সাথে সাথে এসিপি হায়দার শরীফের মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। অচেনা নম্বর থাকায় হায়দার শরীফ কলটা ধরলেন না। কলটা শেষ হবার পরপরই একটা এসএমএস এলো:অমিতাভ বচ্চনের কল; ধরেন!

ভ্রু কুচকে হায়দার শরীফ মনে মনে বললেন: অমিতাভ বচ্চন! আমাকে এভাবে ফোন করবেন? আবার এ ধরনের এসএমএস?

বসকে ভ্রু কুচকাতে দেখে ইন্সপেক্টর আয়নাল বললেন, কে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে, স্যার?

মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন আমার সাথে কথা বলতে চান! কী করে এটা সম্ভব?

বিস্মিত হয়ে প্রায় সবাই একসাথে বললো, কী বলছেন, স্যার!

ফের ঐ নম্বর থেকে কল আসার সাথে সাথে কলটা গ্রহণ করে কানে ঠেকালেন হায়দার শরীফ। ওদিক থেকে তথাকথিত অমিতাভ বচ্চন বললো, টাকাটা প্রযোজক আকিজ আলমকে দিয়ে ডলি স্টুডিওতে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন মিস্টার এসিপি।

মোবাইল ফোনের লাইন গেলো কেটে।

এসিপি হায়দার শরীফ সহকর্মীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, প্রডিউসার আকিজ আলম টেরোরিস্টদের সাথে জড়িত হয়ে গেছে? আশ্চর্য!

ইন্সপেক্টর আয়নাল বললো, আমার মনে হয় না আকিজ আলমের মতো নাম করা প্রযোজক টেরোরিস্টদের সাথে হাত মেলাবে।

তাহলে এটা কী? অমিতাভ বচ্চনে মতো করে কথা বলা ও নামধারী লোকটা আকিজ আলমকে দিয়ে টাকাটা ডলি স্টুডিওতে পাঠাতে বলছে কেনো?

তখন ইন্সপেক্টর জব্বার বললো, একটা কথা জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম স্যার। সরি!

কী সেটা?

এখানে আসার আগে ফিল্ম প্রডিউসার আকিজ আলম আমাকে ফোন করেছিলেন।

কেনো?

এই অমিতাভ বচ্চন ওকে শাসিয়েছে যে ডলি স্টুডিওতে না গেলে ওর গাড়িতে বম মারবে। কেনো যেতে হবে তা আমরা ওকে বলবো।

কী আশ্চয! এতো গুরুত্বপূর্ণ কথটা বলতে ভুলে গেছো? তোমাকে সাসপেন্ড করা দরকার! আমার মনে হচ্ছে এই অমিতাভ বচ্চনই ঐ কালপ্রিট যে বসুন্ধরা কনভেনশনে বোম্ব ফাটিয়ে এতোগুলা মানুষকে হত্যা করেছে।

জ্বী স্যার!

মানে? তুমি কি জানো?

আকিজ আলম বলেছে, এই অমিতাভ বচ্চন বলেছে ওকে যে, বসুন্ধরা কনভেনসন সেণ্টারে সে-ই বোমা ফাটিয়েছে।

উমম! দুই-এ দুই-এ চার মিলে যাচ্ছে।

ইন্সপেক্টর আয়নাল বললো, আকিজ আলমকে খোদার খাসি বানাচ্ছে টেরোরিস্টটা।

এসিপি হায়দার শরীফ বললেন, হতে পারে। তুমি আকিজ আলমকে এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। আর ইন্সপেক্টর তাজিন, টাকার ব্যাগে ট্রান্সমিটার সেট করো। কুইক!

প্রযোজক আকিজ আলম টাকার ব্যাগ হাতে ডলি স্টুডিওতে এসে দেখেন কেউ নেই। ডলি স্টুডিওটা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এফ ব্লকে। বাইরে এসে চলে যেতে চাইলে অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ শুনে দাঁড়ালেন। ওর গাড়ির পাশে একটা সবুজ রঙের টয়োটা এলিয়েন কার দাঁড়িয়ে আছে; কারটা এইমাত্র এসেছে। গাড়ির যাত্রীর দিকের জানালা খোলা। আকিজ আলম এগিয়ে গেলেন গাড়ির দিকে। গাড়ির কাছে গেলে ভেতর থেকে অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ বললো, ব্যাগটা গাড়ির পাশে রেখে কোনদিকে না তাকিয়ে আপনার গাড়িতে উঠে চলে যান। আর একটা কথা। আপনার গাড়ির তলায় একটা বোমা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ঠিক দুই ঘন্টা পর বুম হবে। বাঁচতে চাইলে তার আগেই বোমাটা খসাবার ব্যবস্থা কইরেন! এনজয় দ্য ফিয়ার!

অমিতাভ বচ্চন কণ্ঠের সন্ত্রাসী ব্যাগের ট্রান্সমিটার অকেজো করে ফেলায় সিআইডি ওর অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হলো।

সিআইডির একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের ঘটনা জানিয়ে বললো, ওকে ধরে দিলে বা সন্ধান জানাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। এবং যে ধরিয়ে দেবে বা খবর জানাবে তার পরিচয় গোপন রাখা হবে।

এই খবর টিভিতে প্রচারিত হতে থাকলো। এসিপি হায়দারকে পাঠানো পত্রটি ল্যাবে এবং খাম চলে গেলো পোস্টাফিসে। পোস্টাফিসের পিয়ন লেটারবক্স শনাক্ত করে দিলো।

এসিপি হায়দার শরীফ লেটারবক্স থেকে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কুরিয়ার সার্ভিস চালু হওয়ায় লেটারবক্সে খুব কম লোকই চিঠি ফেলে। এক ঘণ্টায় একটা চিঠিও কেউ ফেলে নি! শরীফ হায়দার এদিক ওদিক তাকিয়ে পাশের ডাব বিক্রেতার দিকে এগিয়ে গেলেন। লোকটা একটা রিক্সাভ্যানে ডাব রেখে বিক্রি করছে। নিজেই ধারালো দাও দিয়ে নিমিষে ডাব কেটে ভেতরে স্ট্র ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পিপাসার্ত লোক ডাব হাতে নিয়ে স্ট্র টেনে ডাবের পানি পান করে নিচ্ছে।

হায়দার শরীফ ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই পোস্টবক্সে চিঠি ফেলার সময় অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েছে আপনার?

ডাব বিক্রেতা একটু ভেবে বললো, এখন লোকজন পোস্টবক্সে চিঠি কম ফেলে স্যার। তবে গতকাল বিকালে এক লোক চিঠি পোস্ট করার পরই বুকে হাত দিয়ে পড়ে মরে যায়। পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেছে।

ইন্সপেক্টর আয়নাল বললো, এই মৃত্যুর সাথে আমাদের কেসের পত্রের কোন সম্পর্ক আছে, স্যার?

এসিপি হায়দার শরীফ বললেন, থাকতেও পারে।স্থানীয় থানার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে লাশটা আমাদের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাবার ব্যবস্থা করো।

সিআইডি’র ফরেনসিক ল্যাবের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাজির রহমত লাশ পরীক্ষা করছেন। পাশে ঐ পত্রটা।

এসিপি হায়দার শরীফ দলবল নিয়ে ঢুকলেন ফরেনসিক ল্যাবে। ডাক্তার নাজিম রহমত কম্পিউটারের পর্দায় হাতের ছাপ মিলাচ্ছেন।

হায়দার শরীফ ডাক্তার নাজিমকে জিজ্ঞেস করলেন, কিছু কি পেলে ফরেনসিক স্পেসালিস্ট?

ডাক্তার নাজিম রহমত বললেন, খবর ভালো এসিপি সাহেব।

কেমন ভালো খবর?

লেটারের হাতের ছাপ মৃত লোকের।

তাহলে বোমা ফাটাচ্ছে কে?

ডাক্তার নাজিম রহমত ঠোঁট উল্টে বললেন, আমি কী জানি! এটা তোমাদের কাজ। আমার যে টুকু কাজ ছিলো, তা করে দিয়েছি।

তখন ইন্সপেক্টর আয়নালের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। অচেনা নম্বর হলেও ফোন ধরতে হয়। সিআইডি’র ফোনে অচেনা নম্বর থেকেই ফোন আসে বেশি। ফোনটা কানে ঠেকিয়ে ওদিকের কথা শুনে বিষন্ন মুখে তাকালো হায়দার শরীফের দিকে।

এসিপি হায়দার শরীফ জিজ্ঞেস করলেন, মুখটা অমন প্যাঁচার মতো হয়ে গেলো কেনো? কে কী বললো?

ইন্সপেক্টর আয়নাল বিমর্ষ কণ্ঠে বললো, স্বাধীনতা ৭১ হোটেলে বোমা ফেটেছে। পঞ্চাশ জন মারা গেছে।

হায়দার শরীফ ম্লান কণ্ঠে বললেন, কী হচ্ছে এসব? এই পিসাচটাকে ধরে বোমা মেরে উড়িয়ে দেবো!
এসিপি হায়দার শরীফ সবাইকে নিয়ে চলে এলেন হোটেল ৭১-এ। ফায়ারম্যানগণ উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে চলছে আহাজারি।

এসিপি হায়দার শরীফ স্থানীয় থানা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে শুরু করলেন তল্লাশি। এখানেও পাওয়া গেলো ডিটোনেটরের টুকরো। ডিটোনেটরের টুকরোগুলো পাঠিয়ে দিলো ফরেনসিক ল্যাবে।

ঐদিন বিকেল। সিআইডি’র ছোট সম্মেলন কক্ষে বসে সবাই অপেক্ষা করছে ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য।

আধাঘন্টা পর একটা টাইপ করা কাগজ হাতে ডাক্তার নাজিম রহমত ভেতরে ঢুকলে সবাই ওর দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো। নাজিম রহমত কাগজটা দেখিয়ে বললেন, একই ধরনের বোমা ফাটানো হয়েছে দুই জায়গাতেই। তৃতীয় বোমা ফাটার আগেই বোমাবাজকে ধরা দরকার।

অসহায়ের মতো এসিপি হায়দার শরীফ বললেন, কিভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না। পোড়া ডিটোনেটর ছাড়া কোন ক্লু-ই নেই।

ইন্সপেক্টর রেহানা বললো, নকল অমিতাভের কণ্ঠ আর ডাকবাক্সের কাছে মৃত লোকটার কাছ থেকে কোন ক্লু পাওয়া যেতে পারে না স্যার?

ডাক্তার নাজিম রহমত বললেন, মৃত লোকটার কাছে কোন ক্লু নেই। লোকটা ডাকবাক্সের কাছে এসে কেনো মারা গেলো তা এখনো রহস্যময়। তবে নকল অমিতাভের কণ্ঠটা বিশ্লেষণ করলে কোন ক্লু পাওয়া যেতেও পারে।
এসিপি হায়দার শরীফ খুশি হলেও তা প্রকাশ না করে কৃত্রিম ক্ষেপাটে কণ্ঠে বললেন, এই কথাটা আগে বলো নাই কেনো ডাক্তার?

আমি কি জানি তোমাদের হাত-পা এভাবে গোটানো অবস্থা হয়ে যাবে! ডোন্ট অরি। আমি দেখছি।

ডাক্তার নাজিম রহমত বেরিয়ে গেলেন ছোট সম্মেলন কক্ষ থেকে। সবাই বসে আছে চুপচাপ। আধাঘণ্টা পরে একটা কাগজ নিয়ে ফের ভেতরে ঢুকলেন ডাক্তার নাজিম রহমত।

ডাক্তার নাজিম রহমত হাতে ধরা স্ক্যান করা ছবিটা দেখিয়ে বললেন, তোমরা হয়তো জানো না যে পাঁচ খুনের আসামি তারছেঁড়া নজরুল জেল থেকে পালিয়েছে।

এসিপি হায়দার শরীফ বিরক্ত হয়ে বললেন, পালিয়ে যাক! জেল পাহারা দেয়া আমাদের দায়িত্ব না। ওর জেল পালানোর সাথে আমাদের এই কেসের সম্পর্ক কী?

নকল অমিতাভের কণ্ঠ এনালাইসিস করে ওর কণ্ঠ পেয়েছি।

হায়দার শরীফ বিস্মিত হলেও তা না দেখিয়ে বললেন, ধন্যবাদ তোমাকে ডাক্তার। চমৎকার ক্লু দিয়েছো তুমি মাই ফ্রেন্ড। এজন্যই তোমাকে আমি এতো লাইক করি।

হায়দার শরীফ দাঁড়িয়ে সহকর্মীদের বললেন, আমাদের আর বসে থাকা চলবে না। খুনিটার আস্তানগুলো আমরা চিনি। এখনই হানা দিতে হবে। ওকে ধরতে পারলে আর বোমা ফাটবে না।

সবাই বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়। আশেপাশের থানাগুলোর সাথে কথা বলে শুরু হলো সাঁড়াশি অভিযান। সন্ধ্যার মধ্যেই ধরা পড়লো বহুরূপী তথা তারছেঁড়া নজরুল। ওকে নিয়ে এলো সিআইডি অফিসে। এসিপি হায়দার শরীফ প্রথমে হাতের ঝাল মিটালেন তারছেঁড়া নজরুলকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। মারপিটে তারছেঁড়া নজরুল যতো রক্তাক্ত হতে থাকলো ততো বাড়তে থাকলো ওর পাগলাটে হাসি। পুরো সিআইডি দল হতবাক ওর হাসিতে।
হায়দার শরীফ মারপিট থামালে তারছেঁড়া নজরুল হাসি থামিয়ে বললো, আমার ব্রেনের একটা তার ছিড়া। যে ঐ তারটা জোড়া লাগাতে পারে আমি তার হয়া কাজ করি।

হায়দার শরীফ পুরো রেগেই বললেন, হেঁয়ালি ছেড়ে সরাসরি কথা বল্! নইলে তোর মলত্যাগের রাস্তা দিয়া কত গরম ডিম ঢুকাবো তার হিসাব রাখতে পারবি না!

আমি কিভাবে জেল থেকে বের হলাম বলতে পারবো না।

মানে? তুই জেল ভেঙে বের হস নাই? মহান আল্লাহ তোকে জেলের বাইরে রেখে দিয়েছেন এই অপকর্ম করার জন্য? শালা বানচোত!

একদিন ভোরবেলা দেখি আমি জেলের বাইরে ডাস্টবিনের পাশে পড়ে আছি। গা ভর্তি ময়লা! পাশে পড়ে থাকা একটা মোবাইল ফোন বাজলে ওটা উঠিয়ে কানে লাগাই। তখন আমাকে অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ নকল করে টাকাটা আনতে বলে। আমি কোন বোমা ফাটাই নাই।

তারছেঁড়া নজরুলকে পাঠিয়ে দেয়া হলো জেলে। জেল পালানোর অপরাধে ওকে দেয়া হলো নির্জন কারাবাস।
সিআইডি ফের অথৈ জলে। নাটের গুরু ও বোমা বহনকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাটের গুরুকে শনাক্তের একমাত্র ক্লু তারছেঁড়া নজরুলের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ। এই কল থেকে নাটের গুরুকে সনাক্ত করা গেলো না-সিমটা চোরাই। বোমা বহনকারীকে ধরার এখন উপায় কী?

এসিপি হায়দার শরীফের কথাটা মনে হতেই ইন্টারকমে ইন্সপেক্টর আয়নালকে আসতে বললেন। ইন্সপেক্টর আয়নাল চেম্বারে ঢুকলে বললেন, বম্ব ক্যারিয়ারকে ধরতে হলে তারছেঁড়া নজরুলকে লাগবে। আমার বিশ্বাস নজরুল অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠে বম্ব ক্যারিয়ারের সাথে কথা বলেছে। ওকে নিয়ে আসো।

জ্বী স্যার।

ইন্সপেক্টর আয়নাল স্যালুট ঠুকে বেরিয়ে গেলো চেম্বার থেকে। দশ মিনিট পরে হন্তদন্ত হয়ে হায়দার শরীফের চেম্বারে ঢুকে ঝটপট স্যালুট ঠুকে বললো, জেলখানায় কনফাইন্ড সেলে তারছেঁড়া নজরুল মারা গেছে। কিভাবে মারা গেছে জেলার বলতে পারলো না।

এসিপি হায়দার শরীফ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, একটা ব্যাপার লক্ষ করেছো আয়নাল?

কী স্যার?

এই কেসটায় বারবার ক্লু হারিয়ে যাচ্ছে।

ঠিক বলেছেন স্যার।

তারছেঁড়া নজরুলকে নাটের গুরুই খুন করিয়েছে। জেলখানায় কেউ তাকে সাহায্য করছে। এদিকটা পরে দেখবো। তুমি দুটো কাজ করো এখন। কুইক!

কাজ দুটো কী স্যার?

প্রথম কাজ: আমাদের একজন অফিসার খুঁজে বের করো যে মানুষের কণ্ঠ নকল করতে পারে।

মিমিক্রি?
হিন্দিতে তাই বলে।

ইন্সপেক্টর রেহানা চমৎকার মিমিক্রি করতে পারে স্যার।

গুড! দ্বিতীয় কাজটা হলো তারছেঁড়া নজরুলের কললিস্ট থেকে সে কার কার সাথে কথা বলেছে তা বের করে নিয়ে এসো। সময় দশ মিনিট। সাথে ইন্সপেক্টর রেহানাকে নিয়ে আসবে।

ওকে স্যার।

দশ মিনিট পর। এসিপি হায়দার শরীফের চেম্বারে ইন্সপেক্টর আয়নাল ও ইন্সপেক্টর রেহানা। প্রয়াত তারছেঁড়া নজরুলের মোবাইল ফোনের কললিস্ট হায়দার শরীফের হাতে ধরা। মাত্র তিনটি কল দুটো নম্বরে। একটি থেকে এসেছে, দুটোতে গিয়েছে। এসেছে নাটের গুরু থেকে যেটার সিম শনাক্ত করা যায় নি। দ্বিতীয়টা বহনকারীর। ইয়েস! এবং সে একটাই সিম ব্যবহার করছে। টাকা বাঁচাতে গিয়ে ক্লু ধরে রেখেছে। বেকুব!

ইন্সপেক্টর রেহানার দিকে তাকিয়ে এসিপি হায়দার শরীফ বললেন, এখন থেকে তোমার কাজ শুরু।

ইন্সপেক্টর রেহানা বললো, জ্বী স্যার!

তুমি দ্বিতীয় সিমওয়ালার সাথে কথা বলবে অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠে। বলবে তৃতীয় বোমা ফাটানোর সময় চলে এসেছে।
জ্বী স্যার।

তারপর বলবে এবার বোমা ফাটাতে হবে আগামীকাল ঠিক সকাল দশটায় উত্তরা কিন্ডারগার্টেনে।

দশ মিনিট পরে ইন্সপেক্টর রেহানা এসে ম্লানকণ্ঠে এসিপি হায়দার শরীফকে বললো, একটা সমস্যা হয়ে গেছে স্যার। বিরাট সমস্যা!

কী সমস্যা?

ইডিয়টটা বললো আমি নাকি আজ সকালে ফোন করে বলেছি যে আজ বিকালে পদ্মা ভার্সিটিতে বোমা ফাটাতে হবে। সে দশ মিনিট আগে দশটা বোমা লাগিয়ে ফেলেছে ওখানে।

এসিপি হায়দার শরীফ এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে বললেন, কী বলছো তুমি! এটা নিশ্চয়ই নাটের গুরুর কাজ। ঐ হারামিটা অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠে এই আদেশ দিয়েছে। ইন্সপেক্টর রেহানা যাও কেরিয়ারটাকে ধরার জন্য। আর ইন্সপেক্টর আয়নাল যত খুশি বোমা এক্সপার্ট নিয়ে যাও পদ্মা ইউনিভার্সিটিতে। দশটা বোমা বের করে নিস্ক্রিয় করতে হবে। একটা বোমাও যেনো না এক্সপ্লোড হয়। গো! কুইক!

চলে গেলো দুই ইন্সপেক্টর নিজ নিজ দল নিয়ে। আধা ঘন্টা পর ইন্সপেক্টর আয়নাল জানালো যে দশটি বোমাই পাওয়া গেছে এবং সবগুলো নিস্ক্রিয় করা হয়েছে।

এসিপি হায়দার শরীফ বললেন, গুড জব। তুমি এখন ইন্সপেক্টর রেহানাকে কভার দিতে যাও। আর একটা কথা। সুযোগ বুঝে বম্ব ক্যারিয়ারকে ক্রসফায়ারে দেবে। নো কম্প্রোমাইজ!

অবশেষে বোমা বহনকারীর কল শনাক্ত করে ওর কাছে পৌঁছাতে পারলো সিআইডি পুলিশ ঢাকা। ওকে পাওয়া গেলো উত্তরা এগারো নম্বর সেক্টরে ১০ নম্বর বাড়ির চিলেকোঠায়। নেশায় বুঁধ হয়ে পড়ে ছিলো। ওর ঘর তল্লাশি করে পাওয়া গেলো একটি ফটো; ফটোটায় কোনো নাম লেখা নেই। কে এই ফটোর লোক? নাম কী? এ-ই কি সে-ই অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ নকলকারি কালপ্রিট তথা নাটের গুরু? হতে পারে। সিআইডির অপরাধীদের ফটো গ্যালারিতে এই ফটো নেই।এখন উপায়? কিভাবে ওকে ধরা যাবে? ওকে ধরতে না পারলে অপরাধ করতেই থাকবে। ওর ফটো পাঠিয়ে দেয়া হলো ঢাকার সকল থানায় ও সোর্সদের কাছে।

আধা ঘণ্টা পরে এক সোর্স মোবাইল ফোনে জানালো এই ছবির মতো একটা লোককে দেখা গেছে আগারগাঁও বস্তিতে; দাড়ি আছে। সিআইডি ছুটলো আগারগাঁও বস্তির দিকে। পাওয়া গেলো নকল দাড়ি লাগানো অবস্থায় বস্তির একটা ছাপড়ায়।কিন্তু ওকে জীবিত ধরতে পারলো না ওরা। ধরা পড়তে যাচ্ছে বুঝতে পেরে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে নাটের গুরু।

সিআইডি কেস নিস্পত্তি হয়েছে ভেবে গা ঢিল দিয়ে নাটের গুরুর লাশ পাঠিয়ে দিলো ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের জন্য। আফসোস রয়ে গেলো একটা: টাকাটা উদ্ধার করতে পারলো না। এতোগুলো টাকা কোথায় রেখে গেলো নাটের গুরু?

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে চমকে উঠলেন এসিপি হায়দার শরীফ। নাটের গুরুর বিষপানে মৃত্যু হয় নি, মাথার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে এবং মৃত্যুর পর মুখে বিষ ঢালা হয়েছে!

এসিপি হায়দার শরীফ সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন, এর মানে ঘটনাটা ঘটেছে আগারগাও বস্তিতেই। টাকাও ঐ বস্তিতেই পাওয়া যেতে পারে। পর্যাপ্ত ফোর্স নিয়ে বস্তিটা ঘেরাও করে ফেলো। প্রত্যেকটা ছাপড়া তন্নতন্ন করে সার্চ করবে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকটা লোককে ইন্টারোগেট করবে।আসল কালপ্রিট ওখানেই আছে এবং টাকাও ওখানে আছে। কুইক!

তৎক্ষণাৎ পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়ে আগারগাও বস্তি ঘেরাও করে ফেললো সিআইডি ঢাকা। তন্নতন্ন করে প্রত্যেকটা ছাপড়া তল্লাসি করা হলো এবং সবাইকে জিজ্ঞসাবাদ করা হলো। ওদের কাছ থেকে কিছুই পেলো না। তবে নাটের গুরু যে ছাপড়ায় আশ্রয় নিয়েছিলো, ওটার সংলগ্ন ছাপড়ার কাউকে পাওয়া যায়নি।ছাপড়ার সমিতির কাছ থেকে ওদের নাম-ঠিকানা ও ছবি পেয়ে পাঠিয়ে দিলো বাংলাদেশের সকল থানায়। তৃতীয় দিন ওরা ধরা পড়লো বরিশালের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে ওরা। ওখানে ওদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়েছিলো ওরা। ওদের নিয়ে আসা হলো ঢাকার সিআইডি হেড কোয়ার্টারে। শুরু হলো জিজ্ঞাসাবাদ। প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও আনাড়ি হওয়ায় পুলিশের প্যাদানিতে স্বীকার করলো সব:

নাটের গুরু কী করতো তা ওরা জানে না। কয়েকদিন আগে এক গভীর রাতে নাটের গুরুর ছাপড়ায় আলো জ্বলতে দেখে ওরা চুপিচুপি ফাঁক-ফোকর দিয়ে উঁকি মেরে ভেতরে বিছানায় অনেক টাকার বান্ডিল দেখে ওদের লোভ লেগে যায়। ওরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সেদিন বস্তিতে লোকজন কম থাকায় কথা বলার কথা বলে ওরা ঢুকে নাটের গুরুর ছাপড়ায় এবং এক পর্যায়ে রড দিয়ে আঘাত করে নাটের গুরুর মাথায়। নাটের গুরু মারা গেছে বুঝতে পেরে মুখের ভেতরে বিষ ঢেলে দেয় এবং খাটের নিচ থেকে টাকার বস্তাটা বের করে নিয়ে আসে।

টাকাটা কোথায়?

ওরা যে ছাপড়ায় থাকে, ওটার খাটের নিচে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছে।

সাথে সাথে ইন্সপেক্টর আয়নাল ও ইন্সপেক্টর রেহানা কয়েকজন পুলিশ নিয়ে চলে গেলো আগারগাও বস্তিতে। ঐ ছাড়পার মেঝে খুড়ে টাকাটা পেয়ে গেলো ওরা। এ খবর ডিএমপি হেড কোয়ার্টারের ডিসি এডমিন রাজেনুর রহমানকে জানালে লম্বা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন তিনি!

প্রশ্ন: নাটের গুরু বস্তিতে ছিলো কেনো ?

নাটের গুরু গোয়েন্দা গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!