কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

কবির প্রেম

কবির প্রেম প্রেমের গল্প – বিদ্যুৎ মিশ্র

নতুন কবিতা আর লেখা হয় না, আসলে লিখতে পারছি না। সামনের দেবদারু গাছটির দিকে তাকিয়ে অতনু বললো। মনের আবেগ গুলো আজকাল মরে গেছে রে। এখন আর প্রেম, ভালোবাসা ,স্বপ্ন আসেনা। পাশে বসে বনানী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। -জানিস তো আমার যখন বেশি মন খারাপ করে তখনি সেই গুলো কবিতার আকারে প্রকাশ করে একটু শান্তি পাই। এই বার বনানী বেশ মজার ছলে বললো, তাহলে এখন তুমি অনেক ভালো আছো বলো। -না রে আমি কেমন যেন হয়ে গেছি। সব কিছুর মধ্যেই একটা বিরক্তি চলে এসেছে।এই দেখ , একটা অসম্পূর্ণ কবিতার কয়েকটা লাইন বনানীর দিকে তুলে বললো। দুই মাস হলো এখনো এটাকে শেষ করতে পারিনি। অথচ কতো কতো লেখা আমি স্রেফ এক বারেই লিখে ফেলেছি।
সাহেব বাঁধের সিঁড়ির উপর বসে দুজনে প্রায় আড্ডা মারে। আজো ঠিক তাই। কয়েক মাস আগে নিস্তারিণী কলেজের একটা কবিতা উত্সবে দু জনের আলাপ।কিন্তু কয়েকদিনই ওরা ভীষণ কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে। অতনু সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না, নিজের কবিতার মধ্যে ডুবে থাকে।দীর্ঘদিনের সাহিত্য জীবনে পরিচিত অনেক হলেও বন্ধুর সংখ্যা অনেক কম। আবার নতুন লিখতে আসা বনানী বেশ প্রাণ চঞ্চল ,হাসিখুশি একটা মেয়ে, খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যেতে পারে। তার এই বাচ্চাদের মতো ছেলেমানুষেরই প্রেমে পড়ে যায় অতনু।কিন্তু বলতে পারে না।তাই যখনি বনানী কিছু কারনে ফোন করতো ভীষণ আনন্দির হতো। সব রকম ভাবে বনানীর পাশে থাকতে চেয়েছে অতনু। আসলে অতনু নিজের জীবনে ভীষণ একা।এমন কেও ছিলো না ওকে বোঝার মতো। একটা প্রাইভেট সেক্টরে অল্প বেতনে কাজ করে পরিবারের সাহায্য করে। নিজের নিয়ে কোনোদিন ভাবেনি। বনানী এসে কখন অজান্তেই যেন সেই মনের শূন্য জায়গায় দখল করে নিলে অতনু বুঝতেই পারেনি। প্রতিটা মুহুর্ত সে এখন বনানীর নিয়ে ভাবে। দূর থেকেই অনেক কিছু স্বপ্ন দেখে,কাছে পেতে চায়। মনের কথা বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারেনি অতনু।একদিন একটা মন খারাপের দিনে অসাবধানতাবশত বলেই ফেলল। বনানী প্রত্যাখান না করলেও পাশে থাকার অঙ্গীকার করে একে অপরের মধ্যে একটা গোপন ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হলো। একদিকে বনানীর তখন সবে নতুন লিখতে আসা তরুণ কবি।তার খোলা মনের কারনে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । অনেক বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী।সে এসবের মাঝে অতনুর ভালোবাসাকে অনুভব করতে পারছিল না। একটা সময় অতনু অনুভব করে বনানী তাকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছে না।একটা কষ্ট ধীরে ধীরে মনের অসুখে পরিণত হয়। অতনু নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কখনো যদি বনানী কে ফোন করে বেশির ভাগ ব্যাস্ত পেলে মন মুচড়ে ওঠে। কথার মধ্যেও আর আগের মতো টান অনুভব করতে পায়না। সময় চলতে থাকে।অতনু এখন আর লিখতে পারে না।ওর কাছে সব কিছু যেন বেমানান, প্রয়োজনহীন।কয়েক মাস থেকে শরীরটাও খারাপ যাচ্ছে। ফ্যাক্টরিতে কাজ করে করে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
হঠাৎ একটা আমন্ত্রণপত্র পেয়ে অতনু দেখ্লো কবিতা পাঠের জন্য ডাকা হয়েছে হরিপদ সাহিত্য মন্দিরে। মনের কোথাও যেন বনানী কে দেখার সুপ্ত বাসনা এখনো ছিলো। তাই দিন গুনতে লাগলো।এবং যথা সময়ে হাজির হলো কিন্তু দর্শকদের ভীড়ে কোনায় লুকিয়ে। বেশ কিছু পুরনো সাহিত্যিক দের সাথে দেখা হলে ওরা জোর করে মঞ্চে তুলে দেয়। অতনু জামার পকেট থেকে একটা কাগজ বার করে পাঠ শুরু করে । পাঠের শেষে শ্রোতাদের হাততালি যখন চরমে অতনুর ধ্যান চলে যায় বনানীর দিকে। হলুদ রঙের লাল পাড় শাড়ি পরে ওর দিকেই তাকিয়ে মুচকি হাসছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো অতনু বনানীর কাছে চলে যায়। নিজের স্বভাব সুলভ ঠোঁটের কোনে একটা হাসির রেখা টেনে জিগ্গেস করলো,- কেমন আছো ? বনানী কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় সঞ্চালক কবিতা পাঠের জন্য বনানীর নাম ঘোষণা করে ফেলতেই বনানী আর কিছু উত্তর দিলো না। সোজা মঞ্চে উঠে গেলো। অতনু কিছুক্ষণ বনানীর এই চলে যাওয়াটা দেখল।মঞ্চে তখন কবিতা পাঠ শুরু করে দিয়েছে বনানী। এখনো অসম্ভব সুন্দর আবৃত্তি করতে পারে বনানী। অতনু হরিপদ সাহিত্য মন্দির থেকে বেরিয়ে সামনে সাহেব বাঁধের কাছে বাঁধানো সিঁড়ির উপর বসে পড়ল।দূর থেকে ভেসে আসছে বনানীর কবিতা।
হঠাৎ পিঠে একটা টোকা পড়তেই চমকে তাকালো অতনু, পিছনে একরাশ হাসি মাখা মুখে দাড়িয়ে বনানী। – কি ব্যাপার? আমার কবিতা শোনার ভয়ে পালিয়ে এলে ? মুখে অপ্রস্তুত হাসি হেসে অতনু বললো। না না_ তা নয়। আসলে__ বনানী ওর পাশে এসে বসে বললো। বুঝলাম। আর বলো, নতুন কি লিখছো? -নতুন কবিতা আর লেখা হয় না, আসলে লিখতে পারছি না। সামনের দেবদারু গাছটির দিকে তাকিয়ে অতনু বললো। মনের আবেগ গুলো আজকাল মরে গেছে রে। এখন আর প্রেম, ভালোবাসা ,স্বপ্ন আসেনা। পাশে বসে বনানী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। -জানিস তো আমার যখন বেশি মন খারাপ করে তখনি সেই গুলো কবিতার আকারে প্রকাশ করে একটু শান্তি পাই। এই বার বনানী বেশ মজার ছলে বললো, তাহলে এখন তুমি অনেক ভালো আছো বলো। -না রে আমি কেমন যেন হয়ে গেছি। সব কিছুর মধ্যেই একটা বিরক্তি চলে এসেছে।এই দেখ , একটা অসম্পূর্ণ কবিতার কয়েকটা লাইন বনানীর দিকে তুলে বললো। দুই মাস হলো এখনো এটাকে শেষ করতে পারিনি। বনানী দেখ্লো লেখা আছে। “ তুমি আছো নিশ্চিত মৃত্যু হয়ে আমার ক্ষয়রোগে, সব বেদনা সাজিয়ে নিলাম নিত্য দুর্যোগে।“

কবির প্রেম প্রেমের গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!