কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

অন্তরালে

অন্তরালে রহস্য গল্প – সংযুক্তা পাল

অনন্যার  বৈবাহিক জীবন বেশ কিছুটা আলাদা।অনন্যা পিনাকের দ্বিতীয় স্ত্রী।মনে হতেই পারে এ আর এমনকি!   বহুলোকেই তো দ্বিতীয়বার দার পরিগ্রহ করে।পিনাকের প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর পিনাকের মায়ের পছন্দে অনন্যার এ বাড়িতে বৌ হয়ে আসা। অনন্যার জীবনটা বিয়ের পর থেকেই কেন আলাদা সেটা পাঠকরা আর কিছুক্ষণ পর টের পাবেন।পিনাক আর তার প্রথম স্ত্রী একই অফিসে দুজনে কাজ করত।সেই সূত্রেই আলাপ ও পরিণয়।পিনাকের প্রথম স্ত্রী অনুরাধারা দুই বোন।অনুর বড় দিদির নাম অনামিকা। চাকুরীরতা বৌ পিনাকের মা কমলিকাদেবীর কোনো কালেই পছন্দ ছিল না। তবু ছেলের কাছে চুপ থাকতেন। তবে সুযোগ পেলেই আত্মীয়দের কাছে বৌয়ের নিন্দা কম করেন নি।অনন্যা এসব আত্মীয়দের মুখে শুনেছে।অনুরাধা মারা যায় হার্ট অ্যাটাক করে। অনন্যার মনে হয়েছে বেচারী ঘরে শাশুড়ির মানসিক নির্যাতন এবং বাইরে অফিসের চাপ দুই এর মধ্যে ব্যালান্স করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।অনন্যা বরাবর অনুসন্ধিৎসু প্রকৃতির তাই হয়তো এই ভাবনা। পিনাক অনন্যাকে অনি ডাকে।অনি পিনাকের ভালোবাসা পায় না তা নয়।তবু যেন কিসের বাধা!অনি মনকে প্রবোধ দেয় হয়তো বিয়ের একবছরের মধ্যে ভালোবাসার মানুষকে হারালে এরকমই হয়।হাজার হোক অনুরাধা আর পিনাকের বিয়ে তো প্রেমঘটিত।অনি বরং পিনাকের মায়ের পছন্দে এসেছে।পিনাক প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছর পর অনন্যাকে বিয়ে করে।অনিকে ভালোবাসা দিলেও পিনাক বারবার বলে,তাদের কথার মধ্যে অনুরাধা এলে অনি যেন কিছু মনে না করে।অনির খারাপ লাগে না। তার অদ্ভুত লাগে অন্য একটা বিষয়কে ঘিরে।

           পিনাক অনুরাধার মৃত্যুর পর দু’বছর মে মাসের পনেরো দিন নৈনিতালে কাটিয়েছে।নৈনিতাল বেড়াতে গিয়ে ওখানকার রিসর্টে অনুরাধা মারা যায়।তারপর থেকে পিনাককে সেই রিসর্টে যেতেই হয় কারণ অনুরাধা মৃত্যুর পর একবার তাকে নাকি ফোন করেছিল!পিনাক ফোনটা পেয়ে যেতে চায় নি। দুই দিন পর পিনাকের সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙে।  পিনাকের বিশ্বাস অনুরাধা তার অপেক্ষায় থাকে রিসর্টে। এত কথা বিয়ের পর অনি জেনেছে।অনি বিয়ের আগে এসব জানলে  বিয়ে করত কি না সন্দেহ তবে ছোট থেকেই অনাথ অনি  কাকার কাছে অনাদরে মানুষ হয়েছে বলে নিষ্কৃতি পাওয়ার তাগিদটা বড় বেশি ছিল। বিয়ের প্রথম বছর পিনাককে একা নৈনিতাল যেতে দিলেও দ্বিতীয় বছর আর সে ছাড়তে রাজি নয় ।পিনাক ওখানে গিয়ে কি করে এইটা জানার আগ্রহ তার বেশি।অনুরাধার আত্মা সময় কাটাতে আসে পিনাকের সাথে– এইসব গালগল্প সে এই দু’হাজার একুশে  বসে কিছুতেই বিশ্বাস করে না।তার শাশুড়ি তাকে যতই ভালোবাসুক ওনাকেই অনির প্রথম থেকে কেন যেন অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।যদিও অনি সেসব শাশুড়িকে কিছুতেই বুঝতে দেয় না।দ্বিতীয় বছর নৈনিতাল যাওয়া নিয়ে অনির জেদের কাছে পিনাককে হার মানতে হয়। পিনাকের মা কমলিকাদেবী অনির যাওয়া নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এই ভেবে যে তার ছেলের প্রথম বৌ নিশ্চই রাগ করবে পিনাকের সাথে তার দ্বিতীয় বৌ গেলে।কিন্তু অনি যাবেই এটা তার স্থির সিদ্ধান্ত। পিনাক অনন্যার টিকিটও কেটে নেয়। পিনাককে দেখে অনির মনে হয় নি অনির যাওয়া নিয়ে ততটা অখুশি।বরং পিনাক বলেও দেয়, ‘ভালোই হল,হনিমুনে সেই মন্দারমণি গেছি।তারপর আর বেরোনো হয়নি দুজনের।আমরা এবার নৈনিতাল ঘুরে দেখতে পারব।‘ অনি তার শাশুড়ির আচরণের জন্য কিছুটা বিরক্ত হয়।সত্যি বৌমার আত্মার ভয় নাকি অন্য কিছু? এই সাতদিনে অনির সবজি কাটতে গিয়ে বীভৎসভাবে হাত কেটে যাওয়া,অনুরাধার ফটো বড় হলঘরের দেওয়াল থেকে  মেঝেতে হঠাৎই পড়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া , ঠাকুর ঘরের প্রদীপ থেকে অনির আঁচলে আগুন লেগে যাওয়া এতসব অঘটন ঘটে যায়।অনির শাশুড়ি শুধুই রাধা-মাধবকে স্মরণ করেন।অনি মনে মনে হাসে আর ভাবে সব কাকতালীয় ব্যাপার। উনি অনুরাধাদিকে সহ্য করতে পারতেন না বলেই নানা ভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন, আর সেই পাপবোধ থেকেই এখন ভয় পাচ্ছেন।বুঝিয়ে লাভ হয়নি।

     যাওয়ার দিন এয়ারপোর্টে পৌঁছে আবার গন্ডগোল।  ফ্লাইট ক্যানসেল।পরবর্তী ফ্লাইট চার ঘন্টা পর।এতসব ঝামেলার পরেও পিনাক আর অনন্যা পৌঁছেও গেল নৈনিতাল।নৈনিতালে হাড় কাঁপানো শীত।অনন্যার শীত খুব পছন্দ। পিনাক বরং শীতকাতুরে।নৈনিতালের রিসর্টে রুম নং  ফাইভ থ্রি জিরোতে বুকিং। পিনাকের সাথে অনন্যাকে দেখে ম্যানেজার একটু হকচকিয়ে গেল সেটা অনন্যার নজর এড়াল না। রিসর্টটা অসাধারণ লাগল।দু-চারটে কালো বিড়াল আর কালো কুকুরকে অনি লক্ষ করল।পাহাড়ী জায়গায় সাইজ বিশাল।অনি হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে রিসর্টটা ঘুরে দেখবে ঠিক করল। মনে মনে ভাবল,আজ রাতে অনুপমাদির সাথেও তবে দেখা হচ্ছে ।

      পিনাকের কাছে এতগুলো দিনে নৈনিতালের অভিজ্ঞতাও শোনা হয়ে গেছে।সেই থেকে অনির সন্দেহটা আরো বেশি করে গাঢ় হয়েছে। তবে পিনাক যা বলছে তা কি সত্যি? নিজের স্বামীকে অবিশ্বাস করতে মন চায় না।পিনাকের কথামতো আজ রাতে ‘সে’ নাকি শুধুই ডোর নক্ করে চলে যাবে।আর অনুরাধার যে পারফিউমের গন্ধ সবচেয়ে প্রিয় সেই গন্ধে গোটা ঘর ম ম করবে।অনি শুধু ঝাপসা হয়ে আসা বিকেলটাকে দেখতে দেখতে ভাবলো হায় রে অন্ধ ভালোবাসা। আর একটা মন খারাপের চাদর তাকে জড়িয়ে নিল।সতীন কাঁটা।তবে অপার্থিব।

রাত বাড়ার সাথে সাথে রিসর্টটা নিঝুম হয়ে গেল।প্রচুর টুরিস্ট আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।অনুরাধা আর পিনাক নির্জনতার জন্য একদম শেষ প্রান্তে এই রুমটায় থাকতে এসেছিল অনি সেটা জানে।রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছে দুজনেই।কারো চোখে ঘুম নেই।ঠিক রাত বারোটার সময় সমানে কেও দরজায় নক করতে শুরু করল আর সেই সাথে  পারফিউমের গন্ধ। পিনাক অনির হাত চেপে বলল, ‘খুলতে যেও না’। অনি জোর করে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে গেল দরজা খুলতে।কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না। পিনাক এসে এবার দরজা লক করে বলল,’আজ আর সে আসবে না।তার ওপর তোমায় দেখে ক্ষেপে গেল কি না জানি না।‘অনি বলল,’দরজা খোল।আমি রিসেপশনে যাব।কে এসছে ওরা নিশ্চই জানবে।‘পিনাক এবার বিরক্তির স্বরে বলল,’তোমার কি মনে হয় আমি সেই চেষ্টা করিনি?’ অনি রাগে ফায়ার প্লেসের পাশে রাখা সোফাটায় শুয়ে পড়ল।

পরদিন পাহাড়ে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই রিসেপশনে গিয়ে উঠল।চেক ইনের সময় বেলা বারোটা হওয়ায় জানত রিসেপশনে কেও থাকবে না।আর যে কম বয়সী ছোকরাটা হসপিটালিটি ডিপার্টমেন্টে কাজ করছে তাকে  হাজার টাকার নোট দিয়ে বাগে আনতে অসুবিধা হল না।রেজিস্ট্রার সে বের করে দিল।প্রতি বছর এক জিনিস যখন ঘটে চলেছে তখন এদের কারো মদত রয়েছে।রেজিস্ট্রার চেক করে যাকে গতকালের ডেটে চেক ইন-এ খুঁজছিল তাকে না পেলেও একজনের নামে রুম বুকিং কাওকে পেয়ে গেল কিন্তু অন্য নামে।রুম নং মিলিয়ে সেই রুমের সামনে গিয়ে হাজির হল। উফফ কাল রাতের সেই পারফিউমের গন্ধ।

অনি মনে মনে বলল এখন তবে এই পর্যন্ত। নিজেদের রুমে ফিরে গিয়ে অনি দেখল পিনাক ঘুমে কাদা।এই সুযোগে  শাশুড়ির সাথে ফোনে একটু বাক্যালাপ সেরে নিল।তিনি উত্কন্ঠিত স্বরে বললেন,’তুমি আলাদা রুম নিয়েছ তো? তোমায় দেখলে অনুরাধা যদি বিগড়ে যায়!’ফোনের ওপার থেকে অনি  বলল,’সব আমার ওপর ছেড়ে দিন মা’।ফোন রেখে দিয়ে অনি স্নান করতে গেল।বেরিয়ে দেখল পিনাক জেগে গেছে। পিনাক ফ্রেশ হলে দুজনে মিলে ব্রেকফাস্ট করে আশ -পাশে ঘুরবে ঠিক করল।আগামিকাল না হয় সাইট সিয়িং দেখা যাবে গাড়ি ভাড়া করে। ‘আচ্ছা পিনাক তুমি বলছিলে অনুরাধাদির জামাইবাবু এখানকার কোন রিসর্টের ম্যানেজার।গেলে হয় না?’ অনু হাঁটতে হাঁটতে উদ্গ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করল।পিনাক বিরক্তি নিয়ে বলল,’আরে ধুর।সে তো এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের রাস্তা।আর এতদিনে আছে না ট্রান্সফার হয়ে গেছে কে জানে। বড় কথা অনুরাধার মৃত্যুর জন্য ওরা আমাকে দায়ী করে অনেক অপমান করেছে।আমি যাব না।আর তোমার এত কিউরিসিটি কেন?ওরা তোমার কেও নয়।‘ ‘আচ্ছা তুমি রিসর্টের নাম বল।আমি চিনে নেব’।অনি নাছোড়বান্দা।পিনাক শুধু ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলল,’তোমার সাহস দেখে অবাক লাগছে’। এরপর পিনাক একটা ভাড়া গাড়ি রাস্তা থেকে ঠিক করে ড্রাইভারকে রাস্তা বুঝিয়ে দিয়ে হিন্দিতে বলল,’ম্যাডাম আধেঘন্টে মে বাপস আয়েগী।ম্যাডামকো ইহাপে লাকে ড্রপ কর দেনা।‘ কথাগুলো বলেই পিনাক  হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলে অনিও গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়।অনামিকার বর কুশলের সাথে দেখা করে ফিরে আসতে অনির সময় লাগে এক ঘন্টা।পিনাক কিছু জানতে না চাইলেও অনি বলে যায় অনামিকা এখানে কুশলের কাছে দিল্লী থেকে মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে।দিল্লীতে তাকে শ্বশুরবাড়িতে থেকে চাকরী করতে হয়।এই তো এ মাসেই নাকি আর কয়েকদিন পরে কুশলের  কাছে আসবে।পিনাক  অনির কথা মাঝপথে থামিয়ে বলে ,’অনি তুমি কি চাইছ বল তো? এদের কথা জেনে আমি কি করব?এরা আমার খোঁজ রাখে নি।আমার মা নাহয় অনুরাধাকে অপছন্দ করত কিন্তু আমি তো মন প্রাণ ওকেই সঁপে ছিলাম।আজো আমি ছুটে আসি শুধু অনুরাধার সাথে সময় কাটাব বলে।‘ ’অ্যাই তোমার লজ্জা করেনা। একটা এম.টেক করা স্টুডেন্ট হয়ে তুমি এইসব অলৌকিকতায় বিশ্বাস কর?’ অনুরাধাদি তোমার দুর্বল জায়গা বলেই কেও  হয়তো সুযোগ নিচ্ছে তোমার ভালোবাসার।‘ পিনাক একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল,’এইজন্য তোমায় না নিয়ে আসলেই ভালো হত।তোমার জন্য অনুরাধা আমার কাছে এ’কদিন আসবে কিনা কে জানে।তার ওপর তোমার এই গোয়েন্দাগিরি।‘ অনি আর একটাও কথা বলল না । নিজের মনেই বলল,আর এক দু’রাতের মধ্যেই সব রহস্যর জাল আমি সরাব।

অনি আর পিনাক সকালের রাগারাগির জেরে বেশি ঘুরল না।পিনাকের কথা মতো অন্য আর একটা ঘর  বুক করে নিল অনি।পিনাক রাতের খাবার অনির সাথে খেতে চাইলে অনি না খেয়েই নিজের ঘরে চলে গেল।পিনাক অল্প কিছু মুখে দিয়ে শুয়ে পড়ল।অনির আজ ঘুমোলে চলবে না।রাতে ‘সে’ আসবেই।পিনাক আজ গভীর ঘুমে থাকবে না ঠিকই তবে তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকবে । এটা পিনাক তাকে বলেছে।অনুরাধা আসার সময় হলে সে নাকি হালকা ঘোরে থাকে।দরজা তাই লক করে না।অনুরাধা আসে এটা বুঝতে পারে।ওর পারফিউমের গন্ধ, ওর ছোওয়া পিনাকের চেনা।তবে পিনাকের বেশি কিছু মনে থাকে না। ভোর বেলায় ঘুম ভাঙে, অনুরাধা তখন থাকে না।আজ এসব হবে অনি ধরে নিল।নিজের রুম থেকে চোখ রেখে বসে রইল পিনাকের রুমের দরজার দিকে।কিন্তু তিনটে বেজে যাওয়ার পরও যখন কেও এল না তখন অধৈর্য হয়ে উঠল।কি যে অসহ্য লাগছে অনির।আবার পরের রাতের জন্য অপেক্ষা! অনি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে পিনাকের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল,বেশ গভীর ঘুম ঘুমাচ্ছে।অনি ভোর পাঁচটার সময় গিয়ে বিছানায় ঘুমাল।সকাল ন’টায় ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙল,ব্রেকফাস্ট রেডি।রেস্ট্রো থেকে খেতে ডাকছে।পিনাককে ডেকে তুলে অনি ব্রেকফাস্টে নিয়ে গেল।খাবার টেবিলে কাল রাতে যে স্টাফ তাদের ঘরে ডিনার নিয়ে গিয়েছিল তার সাথে অনির চোখাচোখি হতে লোকটা চোখ সরিয়ে নিল।আজ সারাদিন অনেক ঘুরে রাতে তারা রুমে এল।আজ রাতেও ডিনার  ঘরে করবে।ডিনার দিতে এল সেই লোকটি।অনির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে চলে গেল। পিনাক ডিনার করলেও অনি খাবারগুলো কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দিল।পিনাক অনির কান্ড দেখে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। বেশিক্ষণ নয়,কেমন ঘোরে চলে গেল পিনাক।দরজা রইল হালকা ভেজানো।আজ সেই স্টাফ রুমের বাইরে থেকে খাবারের প্লেট তুলতে এসে দেখল দুটো প্লেটই ফাঁকা।

   অনির এদিকে ঘরে সময় আর কাটছে না। বিস্কিট খেতে খেতে ঘড়ি দেখতে লাগল।কখন চোখটা একটু লেগে এসেছিল এক তীব্র অথচ মাদকতাময় গন্ধে হকচকিয়ে গেল । তড়াক্ করে লাফ দিয়ে উঠে জানলার বাইরে চোখ রাখল।ঘন কুয়াশায় পিনাকের ঘরের দিকে চোখ গেল আর তৎক্ষণাৎ গলাটা শুকিয়ে গেল।এক নারীমূর্তির অবয়ব প্রত্যক্ষ করল।ছায়াটি পিনাকের ঘরে ঢোকবার সাথে সাথে অনি নিজের রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল।সাথে নিল বড় নাইলনের দড়ি একটা টর্চ। পিনাকের ঘরের দরজা খুলতে গিয়ে দেখল ভিতর থেকে বন্ধ। উফফ,আজকে হাতে নাতে না ধরলে পরে হয়তো এই সুযোগ আসবে না।রিসেপশনে দৌড় দিল।কেউ নেই।কি করা যায়?কাজটা ঠিক নয় জেনেও বড় কাঠের বোর্ডে প্রতিটি রুমের যে ডুপ্লিকেট চাবি থাকে সেখান থেকে রুম নং ফাইভ থ্রি জিরোর চাবি নিয়ে সোজা রুমের সামনে এক দৌড়ে ফিরে গেল।দরজা খুলেই  লাইট অন করে ঘরের মধ্যেই যা দেখল তাতে ভয়ের থেকে লজ্জা পেল বেশি।রাগ এবং ঘেন্না জন্মাল।ঘরে স্বয়ং অনামিকা  অর্ধনগ্ন অবস্থায় পিনাকের উপর থেকে উঠে বসল সবেমাত্র।অনামিকাকে আগেই অনি অনুরাধার বিয়ের অ্যালবামে দেখেছিল,চিনতে অসুবিধা হল না।পিনাক একদম অচৈতন্য।অনির মুখ দিয়ে একটা কথাই বের হল,’ছিঃ।‘অনামিকা কোনোরকম গায়ে নিজের স্টোল জড়িয়ে খাট থেকে নেমে এসে অনির পায়ে লুটিয়ে পড়ল।প্রতিপক্ষ নিজেই আত্মসমর্পণ করেছে দেখে অনি টর্চ আর দড়িটা মেঝেতে ছুঁড়ে দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল।অনামিকা কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলল,’একটা সন্তান না হলে ওরা আমাকে মেরে কুশলের আবার বিয়ে দেবে বলেছে।বিশ্বাস কর,তাই আমি পিনাককে দু’বছর ধরে বিরক্ত করছি।‘ অনি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,’নিজের বোনের বরের সাথে এসব করতে লজ্জা করল না তোমার?’ অনুরাধা মাথায় হাত দিয়ে বলল,’কুশলের বাবা হওয়ার ক্ষমতা নেই।তার ওপর ওরা সারোগেসি কখনো অ্যাকসেপ্ট করবে না। তাই দিল্লী থেকে এসে কুশলের কাছে যাওয়ার আগে পিনাকের সাথে এই হোটেলে কাটিয়ে যাই’। অনি  একটা চড় মেরে বলল,’তুমি এখনই এইসব কথা পিনাককে বলে দোষ স্বীকার করবে।তোমার গলা তো পুরো অনুরাধাদির মত। এই গলা নিয়ে পিনাককে টুপি পড়াতেও সুবিধা হয়েছিল তাই না।আর হোটেলের ওয়েটারকে হাত করে ঘুমের ওষুধ মেশানো,একটা বিড়াল নিয়ে এসে অচৈতন্য পিনাককে আচড়ে দেওয়ানো-ব্যস,আর কি। মনে হবে অনুরাধা এসেছিল।তুমি পিনাক ছাড়া এই উদ্ভট কান্ডর জন্য আর লোক পেলে না!পিনাকের মা আর তোমার বর জানে না তাই তো?’অনামিকা দু’পাশে মাথা নাড়লো। কুশল অনুরাধার সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ করে না সেটা অনি আগেই টের পেয়েছে।অনি পিনাকের কাছে গিয়ে জলের ঝাপটা দিল চোখে। পিনাক জেগে উঠে  জানাল হাত- পা শুধু অবশ লাগছে।ধীরে ধীরে সব বৃত্তান্ত পরিষ্কার হল পিনাকের কাছে। পিনাক চেঁচিয়ে বলল, ‘চলে যেতে বল শয়তানীটাকে এক্ষুনি।ও নয়তো শ্বশুরবাড়ির হাতে খুন হওয়ার আগে আমার হাতেই খুন হবে।‘  অনিকে পিনাক জাপটে ধরল পরম স্বস্তিতে।

অন্তরালে রহস্য গল্প – সমাপ্তি

যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
error: Content is protected !!