কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » ভ্রমণ » বেড়ানোর টুকিটাকি – টিউসানের সাইকেল টুর থেকে স্কুটিতে দার্জিলিং

বেড়ানোর টুকিটাকি – টিউসানের সাইকেল টুর থেকে স্কুটিতে দার্জিলিং

ছোটবেলা থেকে বাবার বন্ধুদের সাথে সাইকেলে দার্জিলিং ও বেনারস যাওরার গল্প শুনে খুব শখ ছিল একবার সাইকেল টুরে যাব আর একটা গিয়ারওয়ালা সাইকেল কিনব। আমাদের স্কুল জীবনে তখন গিয়ারওয়ালা সাইকেল হাতের কাছে পাওয়া যেত না। একবার মনে আছে, কারও কাছ থেকে দোকানে গিয়ারওয়ালা সাইকেল এসেছে খবর পেয়ে বাবাকে নিয়ে বারাসাত চাপাঁডালিতে পৌঁছে গিয়েছলাম, আমাকে কিনে দিতেই হবে বলে। তারপর হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরা। এতই সাইকেল প্রেম ছিল যে, প্রত্যেক সপ্তাহেই মায়ের কাছে খবর আসত – এইত অমুক দিন আপনার মেয়ে আর একটু হলেই ট্রাকের তলায় যেত, আজ বাসের তলায় যেত ইত্যাদি। ক্লাস ১১ হল, সাথে হাতির পাঁচ পা দেখে শুরু হল, বাড়ি থেকে টিউসানি যাওয়া আসার প্থে সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণ। সময় সীমিত, অতঃএব স্পীড বাড়ল, সাথে বাড়ল এপাশ ওপাশ ধপাস হওয়া। এরকমই একদিন  বিশ্ব ভ্রমণ সেরে টিউসানে লেটে পোঁছে স্যার কে বললাম সাইকেল এর চেন পড়ে গেছিল তাই লেট। স্যার ও বলল কেমন সাইকেলের চেন ঠিক করলি হাত দেখা, দেখালাম ও জানলাম  ধপ দিতেও টেকনিক্যালি ক্যারেক্ট হতে হয়- হাতে কালি লাগালেই হয় না, বুড়ো আঙ্গুল- যেটা ছাড়া সাইকেলের চেন ঠিক করা অসম্ভব সেখানে কালি লেগে নেই। 

এরপর কলেজ সুত্রে গেলাম কল্যাণী, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চারবছর শান্তিপুরের রাস, বসিরহাটের দুর্গা পুজার ভাসান, বিভিন্নমেলা দেখতে দেখতে হইহই করে কেটে গেল।  বাবা-মা এর সাথে ছোট থেকে ঘুরতে ঘুরতে ভ্রমণপিপাসু হয়ে ওঠা আমি কলেজের চাকরি নিয়ে পৌছালাম শিলিগুড়ি। প্রথম প্রথম শিলিগুড়ি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেলে সে কি উচ্ছ্বাস, চা-বাগানের পাশ থেকে টয়ট্রেন গেলেও কি আনন্দ হত (এখনও হয়)। ছোট-বড় ছুটির সাথে বেড়ানোর প্লান ও সব সময় রেডি থাকত। তখন সিকিমই ছিল প্রথম পছন্দ। ব্যাপারটা এমন হল, ২০১১ এর ভূম্পিকম্পের পর বন্ধু-স্থানীয় কলিগরা খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল ফোনে না পেয়ে।  তবে সে যাত্রায় ভাগ্যবশত ছিলাম দার্জিলিং-এ।

এরকমই চলতে চলতে একবার একজনের কাছে গল্প শুনলাম তাদের হানিমুন ট্রিপ ছিল বাইকে উত্তরবঙ্গ। সমতলে বড় হয়ে ওঠা আমার কাছে প্লানটা বেশ আডভেঞ্চারাস মনে হয়েছিল। ২০১৫ তে একটা স্কুটিও হল, কিন্তু সাহস করে পাহাড় যাওয়ার সঙ্গী আর পাইনা। রংটং, সেভক, গাজলডোবা এই ঘুরতে থাকি। বিবাহ সুত্রে মা-বাবার জামাইকে সঙ্গী হিসাবে পাওয়াতে স্কুটিতে প্রথম গন্তব্য ছিল ছোটা মাঙ্গুয়া (শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব ৬০কিঃমিঃ)।  বড়া মাঙ্গুয়া থেকে রাস্তা অতিরিক্ত খারাপ থাকার জন্য শেষ ৪ কিঃমিঃ স্কুটি রেখে জীপ-এ যেতে হয়েছিল। তিস্তা বাজার থেকে বড়া মাঙ্গুয়া পর্যন্ত ৩ কিঃমিঃ রাস্তার বেশ কিছুটা ছিল খাড়াই, যেখানে স্কুটি দুজন কে নিয়ে উঠতে রাজি নয়। অগত্যা সেই থেকে আমার শুরু হল স্কুটির পাশেপাশে ট্রেকিং। 

পরের বার ঠিক করলাম ২০১৭ এর ডিসেম্বরে যাব দার্জিলিং, সেই মত একটা বাইক রেন্টের খোঁজ শুরু হল। কারন আমার ১১৩ সিঃসিঃ স্কুটি যেতে পারবে কিনা নিশ্চিন্ত নই। ইতি মধ্যে আমি আর পার্টনার কর্নাটকের  নন্দী হিলস স্কুটি ট্রিপ করে আরও একটু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। ২০১৭ তে শিলিগুড়িতে বাইক ভাড়া পাওয়া মুশকিল ছিল, পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া। খোঁজ খবর নিয়ে ঠিক হল সুকনা থেকে হিলকার্ট রোড মানে টয়ট্রেন রুট ধরে গেলে নিজেদের স্কুটি নিয়েই কার্শিয়াং পোঁছাতে পারব। সেই মত সকাল ৯টায় রওনা দিলাম। রংটং, তিনধারিয়া পার হতেই মায়ের কাছে শোনা দার্জিলিং যাওরার পুরাণ রাস্তার বর্ননার সাথে মিল পেতে শুরু করলাম। তখনও পর্যন্ত রাস্তার দৃশ্য দেখার জন্য স্কুটি চালানই ছিল প্রথম পচ্ছন্দ। কিন্তু রাস্তার দিকে খেয়াল না রেখে হাঁ করে সিনারি দেখতে দেখতে খাদের দিকে চলে যাওয়া আর দুমিনিট পর পর স্কুটি থামিয়ে ফটো তুলতে থাকা আমাকে পার্টনার বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পিছনে বসতে রাজি করাল। এরপর দেখলাম পিছনে বসে যেতেই সুবিধা হচ্ছে, ফটো তোলায় কোন বিপত্তি হচ্ছে না। আস্তে আস্তে গয়াবাড়ি, মহানদী, কার্শিয়াং, টুং, সোনাদা, ঘুম পেড়িয়ে বিকাল ৫টায় স্কুটিতে পোঁছালাম খ্রীস্টমাসের মরসুমে কুইন্স অফ হিলস দার্জিলিং-এ। সেবার (প্রথম) শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং ভায়া হিলকার্ট রোড ৭৭কিঃমিঃ রাস্তা যেতে সময় নিয়েছিলাম ৭ ঘণ্টা।

যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!