কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » অণুগল্প » আমি এক সৈনিকের বাবা

আমি এক সৈনিকের বাবা

আমি এক সৈনিকের বাবা অনুগল্প – ঋত্বিকা বসু

বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যেতে খেয়ার ঘরে এলাম| ডাক্তারের কথা মতন ঘুমের ওষুধ দিলাম ওকে, ঘুমিয়ে পড়ল ধীরে ধীরে| বেরিয়ে এসে বসলাম ড্রয়িং রুমের সোফায়| তখনও একটা মোমবাতি জ্বলছে, পুরো ঘর জুড়ে ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে| রায়ানের দিকে তাকালাম, ছবিটা ওর প্রোমোশনের দিন তোলা| আমাকে পাঠিয়ে বলেছিল,”দেখো আমাকে হাসতে দেখলে আর মিস্ করবেনা, জানবে আমি পাশেই আছি|” 

দেখছি ওকে তাই বারবার খবরটা যখন এলো, খেয়া অজ্ঞান হয়ে গেছিল শুনেই|তারপর থেকে আজ অব্দি কেমন করে জানি দিন কেটে গেল| একার হাতেই করেছি সব| খেয়াকে সামলানো থেকে রায়ানের সমস্ত কাজ, যন্ত্রচালিতের মতন করেছি| সবাই যখন সান্ত্বনা দেয় শুনি, উপদেশ শুনি| কেউ তো বা বলে ছেলের আর্মিতে যোগ দেওয়ার কথায় রাজি হওয়াই আমার ভুল ছিল, তাও শুনি| আজ সবাই চলে যেতে বসলাম ছেলের ছবির কাছে| 

আমার বাবা আর্মিতে ছিল| রায়ান দাদুকে দেখেনি,তবে দাদুর আর্মির পোশাক পরা ছবিটা খুব ভালোবাসতো ও| যেদিন আমাকে এসে চুপিচুপি বলে “বাবা আমি আর্মির পরীক্ষা দিয়েছি|”, সেদিন বুঝেছিলাম ওর ভালোবাসা কোথায়! সেবার পাশও করেছিল ও, কিন্তু ওর মা ভয় পেলো| ভয় ছিল যদি ছেলের কিছু হয়| রেবা সবসময় চেয়েছিল রায়ান আর পাঁচজনের মতন নিরাপদের জীবন বেছে নিক আমি বোঝাতে চেষ্টা করতাম যে একবার সব ভয় সরিয়ে সেনার জীবন বেছে নেয়, তাকে আটকানো যায়না| শুনতোনা রেবা| দুবার আটকেছিল রায়ানকে তবে তিন বারের বার রায়ান এসে আমাকে ধরেছিল| অনেক কষ্টে রেবাকে রাজি করিয়েছিলাম, রাগ করে ও বলেছিল, “তুমি কি বুঝবে মায়ের কষ্ট? পেটে তো আমি ধরেছিলাম, নাড়ির টান আছে আমার”

সত্যি কি তাই? রেবাকে বলিনি আমি, লুকিয়ে লুকিয়ে আমিও ভয় পেতাম রোজ| যেদিন থেকে ও চলে গেল সেদিন থেকে গত সোমবার অব্দি প্রতিটা রাত ভয়ে কাটতো, কোথাও কোনো খবর শুনলে ভয়ে কাঁটা হয়ে বসে থাকতাম ছেলের ফোনের জন্য| যেদিন ও বাড়ি আসতো, যাওয়ার সময় মনে হতো বারেবারে একটু থাকুক ছেলেটা, আর একটু দেখি ওকে| বলতে পারতামনা, কারণ আমাকে কেউ ভাঙ্গতে দেখেনি| রায়ান বলতো, “বাবা তুমি আমার হিরো, কত রাফ্ এন্ড টাফ তুমি|” হাসতাম, পাগলটা বুঝতোনা ওর রাফ এন্ড টাফ বাবা আদপে একটা ভীরু বাবা| সোমবার যখন জানলাম আর কোনোদিন ফিরবেনা ও, মনে হলো আর পারবোনা নিতে আমি -তখন চোখ গেলো খেয়া আর আয়ানের দিকে| বুঝলাম শোকে পাথর হওয়া আমার চলেনা| ওদের জন্য আমাকে শক্ত থাকতেই হবে।

আজ রায়ানের ছবির দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমি বড়ো ক্লান্ত রে বাবা, আর যে পারিনা|” চোখ বন্ধ করে হেলান দিলাম সোফায়| পায়ে হাতের ছোঁয়ায় চোখ খুললাম, আয়ান| পাঁচবছরের ছেলেটা আমার হাঁটু জড়িয়ে বলল,”দাদু আমিও বাবার মতন আর্মি হবো! সকালে মাকে বলতে মা কেঁদেছিলো, তুমি মাকে একটু বলোনা প্লিজ|”

চোখটা ভিজে যাচ্ছে; কানের কাছে রায়ানের গলা,” বাবা তুমি আমার হিরো, কত রাফ্ এন্ড টাফ তুমি|”

আমি এক সৈনিকের বাবা অনুগল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!