কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

ঝাঁটাপেটা

ঝাঁটাপেটা ছোটগল্প – রানা জামান

মোবাইল ফোনটা বাটন হলেও এলার্ম থাকায় অনেক সুবিধা হয়েছে ললিতার। এই এলার্মের শব্দে ওর ঘুম ভাঙে ফজরের আজানের আগে। তখন ওর উঠতে ইচ্ছে করে না; কিন্তু উঠতে হয়। আলসেমি করলে রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যাবে ওর। তিনটি মেয়ে নিয়ে সংসার।

এলার্মের শব্দে উঠে দ্রুত ছুটে টয়লেটের দিকে ললিতা। এটাকে ওয়াশরুম বলা যায় না কোনোমতেই! ফ্লাট হলেও চার পরিবারের এক টয়লেট। এক কক্ষের ফ্লাট; রান্নাঘর ও টয়লেট একটি, যাকে আমরা ইংরেজি শব্দে কমন বললে সহজেই বুঝতে পারি! বাংলায় সাধারণ বললে মূল ভাব প্রকাশিত হয় না এক্ষেত্রে! কোনো ড্রয়িং বা ডাইনিং স্পেস নেই; তবে কোনোমতে গা বাঁচিয়ে কক্ষে যাবার মতো খালি জায়গা রাখা হয়েছে, যাকে আমরা ইংরেজিতে পেসেজ বলি। এই তলার সবাই কর্মঠ, দৈনিক কাজ করতে হয়- ফাঁকি দিলে আয় নেই। তাই যে যত আগে উঠতে পারে,সে-ই আগে টয়লেট ও রান্নাঘর ব্যবহার করবে, এমনটা করলে কাড়াকাড়ি থেকে মারামারির সম্ভাবনা থাকায় সময় ভাগ করে নিয়েছে টয়লেট ও রান্নাঘর ব্যবহারের জন্য। এই ব্যবস্থায় টয়লেট ও রান্নারঘরের জন্য লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় না কাউকে।

ললিতা বরাবর রাতে বেশি ভাত রান্না করে রাখে। গরমের সময় সকালে সবাই পান্তা খায় এবং শীতে ঠাণ্ডাভাত। দুটোতেই মেয়েগুলো অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ছোট মেয়েটা কিছুদিন ঘাঁইঘু্ঁই করলেও এখন সয়ে নিয়েছে। ললিতা প্রতিদিন রাতের ভাত নাকেমুখে দিয়ে মেয়েদের ঘুমন্ত রেখেই চলে যায় কাজে।

আজ ঘুম থেকে জাগলেও শরীর ম্যাজম্যাজ করায় না উঠে হাত দিলো কপালে। মনে হচ্ছে গায়ের তাপমাত্রা একটু বেশি! দুই সেকেন্ড শুয়ে উঠে পড়লো এক লাফে, এতে শুয়ে থাকার সময়টা কভার হয়ে গেলো। ললিতা কক্ষের ডিমলাইট জ্বালিয়ে ঘুমায়। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্যানও চলছে না, ডিমলাইটও জ্বলছে না। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় হাতপাখা ভরসা! ঘুমিয়ে গেলে আর বাতাস লাগে না! মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে মেয়ে দুটোর মুখের দিকে তাকালো- ঘামছে না। তারপরও হাতপাখা দিয়ে কয়েকবার হাওয়া দিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে।
টয়লেটের সামনে একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ললিতা বললো, কী ব্যাপার মজনু? তুমি অহন ক্যান? অহন তো আমার টাইম!

মজনু বললো, আমি টয়লেটে যাইতাম না ললিতাপু। গরমে টিকতে না পাইরা এহানে হাটাহাটি করতাছি।

কপালের ভাঁজ ছেড়ে ললিতা ঢুকে গেলো ভেতরে। মানুষের উপস্থিতিতে সশব্দে বায়ুত্যাগ করা লজ্জার হলেও এসময় উপায় থাকে না! ললিতার পেটটা ঠিক হচ্ছে না কিছুতেই! অবিরাম পঁচা-বাসি খাবার খাওয়ায় পেটটা বিদ্রোহী হয়েই আছে! টয়লেট থেকে বের হয়ে মজনুকে দেখতে না পেয়ে উধাও হয়ে গেলো ললিতার লজ্জা। দূর্গন্ধে ভেগেছে কিনা কে জানে!

ভবনটার নাম মায়া ভবন। মায়া ভবন থেকে বের হয়ে হাঁটছে ললিতা। দশ মিনিট হাঁটতে হয় ওকে। তখন মসজিদগুলোয় চলতে থাকে ফজরের আযান। রাস্তায় চলতে থাকে একটা দুইটা গাড়ি, মেশিন চালিত রিক্সা এবং নামাজি। রিক্সাওলা দেখে ললিতা ভাবে: সংসার দুশ্চিন্তায় লোকটা শান্তিমতো ঘুমাতেও পারে না!

এ সময় তিন রাস্তার মোড়ে একটা ক্ষণস্থায়ী চা-সিগ্রেটের দোকান বসে। বেশ বিক্রি হয়। সূর্য উঠার সাথে সাথে দোকানও উঠে যায়। একটা যুবক এই দোকানটা চালায়। ও লাঠি হাতে খাকি পোশাক পরে সারারাত পাহারা দেয়। বিদ্যুতের খুঁটিতে ওর লাঠির আঘাত শোনা যায় মাঝেমধ্যে, যদিও ‘বস্তিঅলা জাগো!’ বলে না। যুবকটা ভাংগাচুড়া শিশুদের সাইকেল জোড়াতালি দিয়ে নতুন করার একটা দোকানে সারাদিন কাজ করে। ললিতা ভাবে: ঐ ছ্যামরাডা ঘুমায় কখন? যুবকের নাম আয়নাল।

ললিতা আয়নালকে দেখতে দেখতে রাস্তা পার হয়। ওর বড়টা মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে আয়নালের বয়সের কাছাকাছি হয়ে যেতো। ও কাজ করলে ওর কষ্ট অনেকটা কমে যেতো। ঝরিনা কাজ করতে চায়; কিন্তু ললিতা রাজি হয় না। বড়লোকদের পোলারা বড্ড পোংডা হয়ে থাকে। যখন তখন কাজের মেয়ের ইজ্জতে হাত দেয়। মা-বাবার কাছে নালিশ দিলে উল্টা জারি খেতে হয়। কাজের বুয়ার গায়ে হাত দেয়ার ব্যাপারে বাবারাও কম যায় না! ললিতার এমন অভিজ্ঞতা অ-নে-ক! প্রথম দিকে এক বাসায় বাঁধা ঝি-এর কাজ করতো। বাপ-বেটার উৎপাত সইতে না পেরে বাঁধা ঝি-গিরি ছেড়ে দিয়ে এখন দুটো বাসায় ঠিকা ঝি-এর কাজ করে এবং একটি মেসে দুই বেলা রান্না করে দেয়।

প্রথম বাসাটা আনিলা টাওয়ারের ছ’তলায়। বিদ্যুৎ না থাকায় লিফ্ট অচল। হতোদ্যম হলেও ওকে উঠতে হবে উপরে। আস্তে-ধীরে উঠে এলো ছ’তলায়। দরজায় কয়েকবার টোকা দেবার পরে এক পুরুষ দরজা খুললে চমকে পিছিয়ে এলো ললিতা। অন্য কোনো বাসায় চলে এলো নাকি ভুল করে? তখন পুরুষের পেছনে থেকে ফেরদৌসী রহমান বললেন, উনি আমার হাসব্যান্ড। গতরাতে এসেছে আমেরিকা থেকে। মাস ছয়েক থাকবে। তুমি ভেতরে এসে আগে থালাবাসন পরিস্কার করো।

ললিতা আঁড়চোখে মিস্টার ফেরদৌসীকে একবার দেখে মনে মনে বললো: একটা আলগা দুশ্চিন্তা বাড়লো!

ললিতা দরজার ছিটকিনি আটকে ঘুরে দেখতো পেলো মিস্টার ফেরদৌসী সোফায় বসে টিভির রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে পছন্দের চ্যানেল খুঁজছেন। ললিতা মনে মনে ফের বললো: বাংলাদেশের চ্যানেলে পছন্দের কিছুই পাইবেন না! ও চলে গেলো রান্নাঘরে। এই বাসায় ওর যেকোনো তিনটা কাজ। প্রথম কাজ পেয়ে গেছে; এরপরে ঘর ঝাড়ু দিয়ে মুছে দিতে বলবে। এদুটো কাজ দৈনিক থাকে। তৃতীয় কাজটা একেক দিন এককে রকম হয়।

সিঙ্কে বাসন মাজছে ললিতা, তখন ফেরদৌসী রহমান এসে বললেন, ঘর মুছে কয়েকটা রুটি বানিয়ে দিয়ে যাও আজ। উনি হোটেলের নাস্তা খেতে পারেন না; পেট খারাপ করে।

ললিতা মনে মনে বললো: বড়লোকদের পেটও আমার মতন হয়! মনে মনে হাসতে থাকলো ও। তিন কাজ শেষ হতে হতে দুই ঘণ্টা পার।

দ্বিতীয় কাজটা আনিলা টাওয়ারের নবম তলায়। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসায় উপরে উঠতে ললিতার কোনো কষ্ট হলো না। আটটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে উঠে এলো উপরে। কলবেল টিপে দিলে দরজা খুলে দিলো গৃহকর্তা জুনায়েদ শাকিব। ললিতা ভেতরে ঢুকলে জুনায়েদ চলে গেলেন কোণায় যেখানে ল্যাপটপটা আছে। সারাদিন ওখানেই থাকেন, সারাদিন কেনো রাতে ঘুমুতে যাবের আগ পর্যন্ত বসে থাকেন ওখানেই! দরকার পড়লে বাহির থেকে এসে ফের বসেন ওখানেই। আগে টিভিতে কপিল শর্পা শো, ড্যান্স কম্পিটিশন, বা রেসলিং দেখতেন; এখন ডাউনলোড করে ল্যাপটপে ওয়েবসিরিজ দেখনে। এভাবেই জুনায়েদের অবসর সময় কাটছে।

ললিতা মনে মনে ভাবে: লোকটা কোণায় বইসা কী করে সারাদিন? বাপ ও দুই বেটা এখন পর্যন্ত ভিন্ন দৃষ্টিতে ওর দিকে না তাকানোয় সন্তুষ্ট ও। অবশ্য গৃহিণী রাজিয়ার বেশ ভূমিকা আছে এতে। ও কখনো ললিতাকে ঘরে রেখে বাইরে যান না। সবসময় ললিতার কাজ শেষ হবার পরে বাইরে যান। বেশি প্রয়োজন পড়লে জরুরি কাজ করিয়ে ওকে বিদায় করে দেন। তাছাড়া বাপ-বেটারা বাড়ি থাকলেও নিশ্চিন্তে চলে যান বাইরে।

ললিতা রান্নয়ঘরে থানাবাসন মাজছে তখন রাজিয়া এসে বললেন, আমার বাপ-মা আসছে বিকালে। বিকালে ডাকলে তুমি এসো।

ললিতা খুশি হয়ে বললো, নতুন কিছু রানতে হইবো খালা-খালুর জন্য আফা?

না। মা রান্না করা মাছ ও মাংস নিয়া আসবে। তুমি বিকাল পাঁচটার দিকে এসো।

ললিতা জানে খালা-খালু যা নিয়ে আসে তা থেকে সেও সামান্য ভাগ পায়। তাছাড়া এই অতিরিক্ত কাজের জন্য অতিরিক্ত মজুরিও পায় ও।

সাড়ে এগারোটায় ললিতার কাজ শেষ হয়ে যায় রাজিয়ার বাসায়। মেসে ঢুকতে ঢুকতে ওর বারোটা বেজে যায়। এতে ওর কোনো সমস্যা হয় না। মেসের সবাই বিভিন্ন দোকানে সেলসম্যানের কাজ করে। সেকারণে ওরা দুপুর দুইটার আগে আসতে পারে না। এই দুই ঘণ্টায় ওর রান্না হয়ে যায়। ভাত, মাছ, আলুভর্তা ও ডাল থাকে। কদাচিত মুর্গি রান্না হয়। এই আক্রার বাজারে মাংস খাবার সামর্থ নেই এই শ্রেণীর।

ললিতা দোতলায় উঠে দরজার সামনে এসে হ্যান্ডব্যাগ থেকে চাবি বের করে তালা খুলতে গিয়ে ভ্রু কুঁচকালো: দরজায় তালা নেই এবং ভেতর থেকে বন্ধ। কে এলো এই অসময়ে? মতলবটা কী ওর? কাছেই একটা ঔষধের দোকান আছে- জান্নাত ফার্মেসি। ঐ দোকানের দুই কর্মচারী থাকে এই মেসে। ওরা খুব ভদ্র, মুখভর্তি দাড়ি ও মাথায় টুপি থাকে সবসময়। ওর দিকে সরসারি তাকিয়ে কখনো কথা বলে না। অন্যরাও ভালো! তাহলে এখন কে এলো এই অসময়ে? দেখা যাক কী হয়! ওকে কাবু করা এতো সহজ না! দরজায় টোকা দিলো ললিতা।

উসকোখুসকো চুল ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে দরজা খুললো শাহেদ। ওকে দেখে ললিতা দ্রুত ভাবলো: এই পোলা তো মন্দ না! তাইলে এইরম দেখাইতাসে ক্যান? মদ খাইছে নি? নাকি গাঞ্জা? মদের ট্যাকা পাইবো কই! মনে অয় গাঞ্জাই খাইছে! চোখও লাল দেখাইতাসে! ঢুকুম, নাকি ভাগুম?

তখন ক্লান্ত স্বরে শাহেদ বললো, ঘরে ঢুকছো না কেনো ললিতা বুবু? আমার খুব জ্বর আসছে। তাই চলে আসছি বাসায়।
শাহেদের বুবু ডাক শুনে আবোলতাবোল ভাবনা উধাও হয়ে গেলো ললিতার মন থেকে। ও জিভে কামড় দিয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে বললো, কুন সমায় আফনের জ্বর আইলো? দেহি কতটুক জ্বর। অষুদ খাইছেন? আমি মাথায় পানি ঢাইল্যা দেই।

শাহেদ রাজি হতে না চাইলেও জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিলো ললিতা। কপালে হাত রেখে জ্বর মেপে ছুটে গেলো বাথরুমে। বালতিতে পানি এনে মাথায় ঢেলে বুবুর দায়িত্ব পালন করলো। আরাম লাগায় শাহেদ গেলো ঘুমিয়ে; আর ললিতা লেগে গেলো কাজে। রান্নাবান্না শেষ হলো ওর পৌণে দুইটায়। শাহেদ তখনো ঘুমাচ্ছে। সঙ্কোচ চলে যাওয়ায় ফের শাহেদের কপালে হাত রাখলো ও। মনে হচ্ছে একটু জ্বর কমেছে। নিঃশব্দে দরজা আটকে চলে এলো বাইরে। এই বেলাটা নিজের। আজ বিকেলটা বুকিং হয়ে গেছে রাজিয়ার হাতে।
অনেক পথচারী রাস্তায়। গা বাঁচিয়ে চলে এলো ডেড়ায়। মেয়ে দুটো চুলোচুলি খেলছিলো! ললিতা মুচকি হেসে বললো: আবার এই খেলা খেলতাসস! আর খেলা পাস না?

বড় মেয়ে কিশোরী জয়নব বললো, এইট্টুন ঘরের মধ্যে আর কী খেলাম!

ললিতা দুটো মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো, ছাদে যাইতে পারস না?

জয়নব মার বুকে থেকে বললো, রুকি ছাদ থাইকা পইড়া মইরা যাওনের পর থাইকা ছাদে যাইতে ডর লাগে মা!
ঠিকাছে। তোগো ছাদে যাওনের কাম নাই! ঘরে থাইক চুলোচুলি খেইল্যা মাথার সব চুল ফালায়া দে! আমি রান্না করতে গেলাম।

ছোট মেয়ে বালিকা আয়েশা বললো, আইজ কী রান্না করবা মা?

ভাত আর ডাউল পুঁইশাকের চচ্চড়ি।

খিচুড়ি রান্ধ মা! খিচুড়ি খাইতে ইচ্ছা করতাছে।

ঠিকাছে। আর কথা কইস না!

বেশি কথা কইলে কী করবা? মারবা আমারে?

মারমু ক্যান? তোর সাথে কথা কইলে রান্ধুম ক্যামনে?

কথা কইলে বুঝি রান্ধনের সমস্যা হয়?

কিসসু হয় না! তুই কথা কইতে থাক!

যে ডালট পুঁইশাকে দেয়ার ইচ্ছা করেছিলো ললিতা, ওটা দিয়েই রান্না করলো খিচুড়ি। পুঁইশাক রান্না হলো একা।

তিনজনে তৃপ্তি মিটিয়ে খেয়ে নিলো পুঁইশাক দিয়ে গরম গরম খিচুড়ি।

মেয়ে দুটো খেতে খেতে বারবার বলছে: অনেক মজা হইছে মা! খিচুড়ি মজা হইছে! পুঁইশাকও মজা হইছে!
তখন খুশিতে ললিতার চোখের কোলে চলে এলো অশ্রু। খাওয়ার পরে দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে এক ঘুম দিয়ে বিকেলে চলে এলো রাজিয়ার বাসায়। ফিরলো রাত ন’টায়। মেয়ে দুটো মা’র অপেক্ষায় বসেছিলো ঘরের ভেতরে।
মাকে শুধু ভাত রাঁধতে দেখে জয়নব বললো, আর কিছু রানবা না মা? খালি ভাত কি খাওন যাইবো?

ললিতা মৃদু ধমক দিয়ে বললো, কথা না কয়া খাইতে ব!

পাতে হাঁসের মাংস দেখে একবার ঢোক গিলে জয়নব বললো, হাঁসের মাংস পাইলা কই মা?

ললিতা বললো, রাজিয়া মেমসাবের মা আইছে পাবনা থাইকা। হে হাঁস রান্না কইরা আনছে।

পোলাও আনে নাই?

না রে পাগলি! পোলাও রান্না করলে আমারে না দিয়া খাইতো না।

হাঁসের মাংস দিয়া পোলাও খাইতে অনেক মজা লাগে!

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মেয়ে দুটোকে ঘুম পাড়াতে ললিতার বেজে গেলো এগারোটা। বিছানা থেকে নেমে চুলে একবার চিরুনি চালিয়ে কাঁটাটা বাঁধতেই দরজায় টোকা পড়লো। ভ্রু কুচকে মনে মনে বললো ললিতা: এতো রাইতে কেডা আইলো?

দরজার পাশেই ঝটাটা খাড়া করে রাখে ললিতা। ও ঝাটা হাতে নিয়ে পেছনে লুকিয়ে বাম হাতে দরজা খুলে আগত লোকটাকে দেখে চোখ দুটো হয়ে গেলো লাল। বললো, এতো রাইতে তুই আমার ঘরে আইছস ক্যান?

লোকটা বললো, আমি তোর স্বামী। আমি যে কুনু সমায় তোর কাছে আইতে পারি!

তুই এত্তো রাইতে আমার কাছে স্বামী ফলাইতে আইছস! আট বছর আগে তোর হাত ধইরা বাড়িত থাইকা বাইর হয়া আইছিলাম। তুই এক বস্তিতে তুইলা দুইটা মাইরা পয়দা কইরা আরেক খানকির প্রেমে পইড়া চইলা গেলি। তুই চইলা গিয়া ভালাই করছস! তোর মতন বাদাইম্যা স্বামী থাকনের চাইতে না থাকনই ভালা। তোর আগেও কইছি, আমার কাছে আর আইবি না! আইজ আবার আইলি ক্যান? কী মতলব তোর?

লোকটা বললো, তোরে দেখতে মন চাইলো, তাই চইলা আইলাম। মাইয়া দুইডারেও দেখতে মুঞ্চায়!

তুই অহনই যাইবি, না এই ঝাডাটা মারুম তোর মুখে!

আমি তোর স্বামী। আমারে তুমি এইভাবে খেদায়া দিতে পারবা না ললিতা!

লোকটার এই কথায় ললিতার রাগ উঠে গেছে সপ্তমে। ললিতা হিসিয়ে উঠে বললো, তাইলে আইজ তোরে আমি তালাক দিমু! এক তালাক….!

ঝাঁটাপেটা ছোটগল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!