বৃষ্টি সিক্ত পাহাড়ের কোলে ভ্রমণ কাহিনী – সৌমেন্দ্র দরবার
তুমি কি কখনো বর্ষায় বৃষ্টি ভেজা পাহাড় দেখেছ? তুমি কি বৃষ্টির রাতে পাহাড়ি নদীর কলতান শুনেছ? তুমি কি বর্ষার জলে ভরপুর পাহাড়ি নদীর উদ্দামতা উপভোগ করেছ? যদি তোমার উত্তর না হয়, তাহলে অবশ্যই একবার বর্ষার অপূর্ব রূপ উপভোগ করতে পাহাড়ের কোলে থেকো। বর্ষা সিক্ত পাহাড়ের সেই নয়ন জুড়ানো রূপ তুমি কখনোই ভুলতে পারবে না। সবুজের ওপর রুপোলি বারিধারা দেখতে দেখতে মনে হবে কোন শিল্পী যেন তার তুলির আঁচড়ে একটার পর একটা ছবি এঁকে চলেছেন। ঘন ঘন তার পট পরিবর্তন হচ্ছে। শান্ত প্রকৃতির সে রূপ উজ্জ্বল হয়ে থাকবে তোমার মনের মণিকোঠায়, এ গ্যারান্টি আমি দিলাম।
১১ই জুন, আমরা ছয় বন্ধু, সপরিবারে বেরিয়ে পড়লাম পাহাড়ের পথে। উদ্দেশ্য একটাই পাহাড়ে বর্ষার রূপ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা। রাত ১০.০৫ এর দার্জিলিং মেল হুইসেল দিয়ে শিয়ালদা স্টেশন ছেড়ে রওনা দিলো নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে। ট্রেন ছাড়তেই সবাই মেতে উঠলো গল্পে। কতদিন বাদে যেন দেখা হলো সবার। মনের জমানো কথা যেন আজই বলতে হবে। কর্তা, গিন্নি আর মেয়ে। এই নিয়ে আমাদের এক একটি পরিবার। রবি দা, পপি বৌদি আর আফিয়া , অরিন্দম, ঝিনুক আর আদ্রিকা, জয়ন্ত দা, সুমিতা বৌদি আর শিঞ্জিনী, রোমো (রামনাথ) দা, ফুল (ফুলেশ্বরী) বৌদি আর সায়ানী, আলোক দা, নুপুর বৌদি আর আরাধ্যা এবং আমি, শ্রীময়ী আর আমার মেয়ে রাই। শুধু জয়ন্তদার সাথে ছিল আর একটা লিটল মাস্টার, হীরালাল। ছয়টি পরিবার পাড়ি দিলো তিন দিন পাহাড়ের কোলে বৃষ্টি উপভোগ করতে। গল্প শেষ করে বাড়ি থেকে আনা রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। পরেরদিন ১০ মিনিট লেট করে দার্জিলিং মেল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছলো। বাইরে বেরিয়ে চা খেতে খেতেই আমাদের আগে থেকে ঠিক করে রাখা গাড়ির ড্রাইভার বসন্ত ও শৈলেশ হাজির হলো। ওদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে নিলাম । তারপর গাড়ির মাথায় সমস্ত লাগেজ তুলে আমাদের দুটি গাড়ি এগিয়ে চললো পাহাড়ের পথে। কিছুটা রাস্তা যাবার পর, এবার সবার খিদে পেয়ে গেল। রাস্তার ধরে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে দাঁড়ালো আমাদের গাড়ি। ব্রেকফাস্ট হয়নি বলে সবার খুব খিদে পেয়েছিলো। কেউ নিলো ছোলা বাটুরে, কেউ বা ডিম টোস্ট আবার কেউ নিলো মোমো। রেস্টুরেন্ট থেকে বাইরের ভিউ ছিল অসাধারণ। ব্রেকফাস্ট শেষ করে আমাদের ড্রাইভার বসন্ত আর শৈলেশের সাথে কথা বলে আমরা ঠিক করলাম আমরা কালিঝোরা হয়ে যাবো। গাড়ি এগিয়ে চলেছে। একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে উচ্ছল তিস্তা। জলে ভরপুর তিস্তার এই রূপ আমি আগে কথনো দেখিনি। সবুজ পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলেছে তিস্তা। সে অপরূপ নায়নজোড়ানো দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এখানে তিস্তা আরও ভয়ঙ্কর। হালকা বৃষ্টি শুরু হলো। কালিঝোরা ড্যামের ওপর দিয়ে গাড়ি চললো অন্য পারে। বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় এই রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে। তবে অসুবিধা হবে না আগে থেকে হোম স্টে বুক করা থাকলে। পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে তখন অঝোরে বৃষ্টি। চারিদিকে শুধুই ঘন সবুজ। বৃষ্টি একটু থামতেই গাড়ি থামাতে বললাম। চারিদিকের দৃশ্য ফ্রেম বন্দি না করা অবধি মন মানছিল ন। দুদিকের দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা চলে এলাম পানবু দারা ভিউ পয়েন্ট এ। এখানে এই বর্ষায় শুধুই মেঘের খেলা। গায়ের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে মেঘ। কখনো মেঘ সরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের অপূর্ব নৈসর্গিক শোভা, তিস্তার নয়ানাভিরাম দৃশ্য আবার মুহূর্তে তা ঢেকে যাচ্ছে মেঘে। পাহাড়ের কোলে মহাদেবের সুবিশাল মূর্তি সত্যি নজর কেড়ে নেয়। যারা একটু নিরিবিলি পছন্দ করেন তারা একদিন কাটিয়ে যেতেই পারেন পানবুতে। কথা দিলাম মন ভালো হয়ে যাবে। বসন্ত বললো আমরা প্রায় আমাদের গন্তব্যের কাছাকাছি চলে এসেছি। একটু চা খেয়ে আর ছবি তুলে রওনা দিলাম। অবশেষে আমরা এসে পৌঁছলাম কালিম্পঙের একটি ছোট্ট গ্রাম সামথারএ। আমাদের এবারের গন্তব্য।
পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম সামথার। নির্জন আর শান্ত। মাত্র কয়েকটি নেপালি পরিবার নিয়ে কালিম্পংয়ে এই ছোট্ট গ্রাম সামথার। একদিকে ঘন বন, একদিকে উপত্যাকা আর শুধুই মেঘের খেলা। মেঘ সরে গেলে সূর্যিমামা উঁকি মারছে আবার মুহূর্তেই তা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। আমরা সবাই হোমস্টেতে নিজের নিজের ঘর নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। লাঞ্চের ডাক পড়লো। খুব খিদে পেয়েছে। পাহাড়ে এলে এই এক মুস্কিল, খুব তাড়াতাড়ি খাওয়া হজম হয়ে যায়। লাঞ্চে ছিল ভাত, ডাল, দুটো সবজি, ডিমকষা, চাটনি আর পাঁপড়। লাঞ্চ খেয়ে ঘুরে এলাম সামথার লেক। লেকের জলে ঝলমল করছে পাহাড় আর গাছের প্রতিবিম্ব। তার মাথার ওপরে নীল আকাশ আর শুধুই মেঘের খেলা। বর্ষাকাল না হলে আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে এই আকাশের বুকে জেগে থাকে তুষারশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। এখানকার ইউএসপি হল কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ। গোটা রেঞ্জটাই দেখা যায় । কিন্তু সে যাই হোক বর্ষার রূপ কিন্তু আলাদা। নাই বা হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা। এবার জায়ান্ট দা চাপ দিতে থাকলো ঝান্ডি ভিউ পয়ন্টে যাবে। ১০৫০ টা সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে হবে। অবশেষে আমি, জায়ান্ট দা, রবি দা আর রোমো দা রাজি হলাম। সঙ্গে সাত খুদে পরিবেশবিদ। বেশ চড়াই কিন্তু ট্রেকিং টা ভালোই লাগছিলো। ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছিলো। কিছুটা উঠে একটু জিরিয়ে নিলাম। সামনে মেঘ, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আমাদের ছোট্ট খুদেরা বললো চলো শেষ অবধি যাবো। অগত্যা আবার চল। অবশেষে ঘাম ঝরিয়ে যখন টপে পৌঁছলাম তখন জলীয় মেঘ আমাদেরকে ভিজিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের তখন শিখর জয়ের আনন্দ। এখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। মোবাইল ক্যামেরা শুধু ফ্রেম বন্দি করতে থাকল অপরূপ সৌন্দর্যকে। এবার ওপর থেকে নামার পালা। হটাৎ দেখি ছোট্ট হীরালালের পায়ের আঙ্গুল থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। বুঝলাম জোঁকে ধরেছে। পায়ের পাতা হাতে নিয়ে দেখলাম অনুমান ঠিক। জোঁক ছাড়িয়ে নিয়ে আবার নিচে সাবধানে নামতে লাগলাম। বর্ষায় পাহাড়ে এটা একটা সমস্য। জোঁকের উৎপাত। আস্তে আস্তে সবাই সাবধানে নিচে নেমে এলাম। হোমস্টেতে এসে হীরালালের পা টা প্রথমে নুন দিয়ে ওয়াস করলাম, পরে ফাস্ট এইড করে ব্যান্ড অ্যাড লাগিয়ে দিলাম। এদিকে আস্তে আস্তে সন্ধে নামলো। চারিদিক নিস্তব্ধ। চা আর পাকোড়া খেয়ে আবার বেরোলাম গ্রামটা একটু হেঁটে দেখতে। নিঝুম রাস্তা, নিকষ কালো উপত্যকা আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। সে এক মোহময় পরিবেশ। বেশকিছুটা হাঁটার পর মেঘের গর্জন। বুঝলাম বৃষ্টি নামবে। ফিরে এলাম হোমস্টেটে। হোমস্টেটে ফিরে এক কাপ চা খাওয়ার পর শুরু হলো মুষল ধারায় বৃষ্টি। ব্যালকনিতে বসে সবাইমিলে জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলাম পাহাড়ের বুকে দামাল বৃষ্টির আস্ফালন। ব্যালকনির কার্নিশ চুঁইয়ে অঝোরে ঝরে পড়ছে বৃষ্টির জল। সামনে নিস্তব্দ পাহাড়। এর মধ্যেই ডাক পড়লো ডিনারের। স্যালাড, রুটি, ডাল, তরকারি, চিকেন, পাঁপড় আর মিষ্টি। সঙ্গে সঙ্গী বৃষ্টি। ডিনার শেষ করে আরো বেশকিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে সবাই কে গুড নাইট করে চললাম ঘুমের দেশে।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো হালকা বৃষ্টির শব্দে। নাম না জানা কত পাখি ডেকে চলেছে অবিরাম। ব্যালকনিতে এসে দেখি বৃষ্টিতে পাহাড় যেন আর ও সবুজ। মনে হলো কে যেন সবুজ গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। একটু পরে বৃষ্টি থামলো। আমি, জয়ন্ত দা, রোমো দা আর আলোক দা হাঁটতে বেরোলাম সামথার বাজারের দিকে। মেঘ আমাদের সঙ্গী হল। নির্জন নিস্তব্দ। পাহাড়ি একটা ঝোরা কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে। শুধু পাখির ডাক আর গায়ের ওপর দিয়ে প্রজাপতির ভেসে বেড়ানো। আমরা গ্রামের ভেতর চলে এলাম। বৃষ্টির দিন, সবাই ঘুমিয়ে। ছোট্ট একটা মন্দির দেখে নিলাম। ফিরলাম সামথার লেক দেখে। গাছে গাছে ঢাকা লেক যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটুকরো ছবি। গতকাল দেখেছিলাম অন্য রূপ, আজ আবার অন্য রূপ। হোমস্টেতে তে ফিরে আমরা সবাই রেডি হয়ে নিলাম। বসন্ত আর শৈলেশ আজ সাইট সিনে নিয়ে যাবে। এক এক করে দেখে নিলাম রাই দারা, বুদ্ধ টপ, হনুমান টক আর যুগে ফলস। প্রকৃতির বুকে যে কত কি লুকিয়ে আছে তার জানতেই পারতাম না যুগে ফলসে না এলে। বর্ষায় অফুরন্ত জলরাশি নেমে আসছে পাহাড়ের ওপর থেকে। মন্ত্রমুগ্ধের মত সবাই বেশ কিছু সময় চেয়ে রইলাম। বাচ্চাদেরও মন খুশিতে ডগমগ করছে। অনেকটা সময় কাটানোর পর ঘড়িতে চোখ গেল। সাড়ে তিনটে। না সবার খিদে পেয়েছে। ফিরে এলাম। স্মৃতি হয়ে রইল নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আজ লাঞ্চে ছিল মটন। জমিয়ে লাঞ্চ করে জমিয়ে ঘুম। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় উঠে দেখি চা আর পাকোড়া রেডি। আজ শুধুই জমিয়ে আড্ডা। বাবাদের একটা গ্রুপ, মায়েদের একটা আর বাচ্চাদের একটা। আড্ডার বহর দেখে বুঝলাম সবাই খুব খুশী। দশটায় ডিনারের ডাক পরলো। ডিনারে আজ ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন। তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেয়ে অন্ধকার পাহাড়ের কোলে কিছুটা হেঁটে সবাইকে গুড নাইট বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙলো নাম না জানা পাখির ডাকে। বাইরে তখন বৃষ্টি পড়ছে। আবার একটা বৃষ্টি ভেজা সকালে পাহাড়ের রূপ উপভোগ করতে লাগলাম। দুচোখ ভরে দেখতে লাগলাম প্রকৃতিকে। সবুজের বুকচিরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। মন ভারাক্রান্ত! আজই তো আমাদের ফিরে যাওয়া। ব্রাশ করে ছাতা নিয়ে আবার চললাম বৃষ্টি উপভোগ করতে। আজ আমরা দুজন, আমি আর জয়ন্ত দা। খানিকটা দূরে একটা ভিউ পয়েন্ট আছে। আমরা ঠিক করলাম ওখানেই যাব। ভিউ পয়েন্টটা খুব সুন্দর। বসার জন্য বেঞ্চ আছে। বেঞ্চে বসে কোন কথা না বলে শুধু প্রকৃতির রূপ দেখতে থাকলাম। অনেক নীচে দিয়ে বয়ে চলেছে উদ্দাম তিস্তা। সামনের দোকানের দিদি জিজ্ঞাসা করল ‘চা’ খাব কিনা। চা – তে কি বাঙালি না বলে। মনেমনে ভাবলাম আরো কিছুটা সময় পাওয়া গেল প্রকৃতিকে দেখার। চা খাওয়া শেষ হলে জয়ন্ত দা বলল এবার চলুন সাড়ে সাতটা বাজে। মন না চাইলেও হোমস্টেতে ফিরে এলাম।
গোছগাছ করে ফ্রেশ হয়ে নিচে ডাইনিংয়ে এলাম। দেখলাম বাচ্চারা সবাই সেজেগুজে রেডি। আজকে আমাদের ব্রেকফাস্ট আলুর পরোটা, আচার আর দই। মনটা ভোরে গেল। বৃষ্টির দিনে মনের মত খাবার সামনে থাকলে আর কি চাই। এর মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেছে। খেতে খেতে আমাদের সবার বাগপত্তর বসন্ত আর শৈলেশ গাড়িতে তুলে প্লাস্টিক দিয়ে ভালো করে বেঁধে দিলো যাতে ভিজে না যায়। সবার খাওয়া শেষ হলে একটা গ্রুপ ফটো তুলে নিলাম। এবার সামথারকে বিদায় জানানোর পালা। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু যেতে তো হবেই। ছোট্ট নির্জন পাহাড়ি গ্রামটা মনের মনিকোঠায় স্মৃতি হয়ে থাকবে। গাড়ি ছেড়ে দিলো। যাওয়ার পথে দেখে নেবো ডেলো পার্ক, সায়েন্স সেন্টার, বুদ্ধ মনেষ্টি। গাড়ি চললো চোখের আরাম দিতে দিতে। চারিদিকে সবুজে মোড়া জলছবি। ডেলো পার্কে আমরা অনেকটা সময় কাটালাম। বাচ্চারা খুব এনজয় করলো। অনেক ছবি তোলা হলো। পাহাড়ের কোলে একটি সুন্দর ছিমছাম রেস্টুরেন্টে সবাই মিলে লাঞ্চ খেলাম। ঘড়িতে তখন তিনটে। আর দেরিকরা ঠিক হবে না। আমরা শিলিগুড়ির পথ ধরলাম। সঙ্গী হলো তিস্তা। সন্ধে নাগাদ আমরা নিউ জলপাইগুড়ি এসে পৌঁছালাম। এবার বসন্ত আর শৈলেশকে বিদায় জানানোর পালা। তিনটে দিন ওদের সাথে কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। ওদেরকে নিয়ে একটা ছবি তুলে নিলাম। স্টেশনের ওয়েটিং রুমে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফুড প্লাজা থেকে নিয়ে নিলাম রাতের খাবার। রাত ৮.০৫ এ নিদিষ্ট সময়ে পদাতিক এক্সপ্রেস আমাদের সবাইকে নিয়ে রওনা দিল কলকাতার পথে। চোখে লেগে রইলো সবুজ বনানী, উন্নতশির পাহাড় আর অবিরাম বৃষ্টিধারা।
পথের ঠিকানা: হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে প্রথমে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি। এখান থেকে সামথার ৭১ কিলোমিটার। নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পংয়ের সামথার যাওয়ার রাস্তা দুটি। একটি কালিঝোরা ড্যামের ওপর দিয়ে। আরেকটি রুট হল ২৭ মাইল ড্যামের ওপর দিয়ে। সামথার থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পানবু ভিউ পয়েন্ট, যেখান থেকে পাহাড়, তরাই, তিস্তা সব দেখা যায়।
গৃহের ঠিকানা: এখানে বেশকিছু হোমস্টে আছে। আমরা ছিলাম গ্রিনউড হোমস্টেতে। ছাড়া আছে সামথার হোমস্টে, দ্যা নেস্ট ফার্মস্টে, লামা দারা হোমস্টে। আগে থেকে বুকিং করে আসাই ভালো।
কি কি দেখবেন: ঘরে বসে উপভোগ করতে পারেন সামথারকে। আর সেই অভিজ্ঞতাও হবে অসাধারন। কারন এখান থেকে ডুয়ার্স-এর তরাই অঞ্চল দেখা যায়। তাই বসে বসে সেই দৃশ্য দেখতে মন্দ লাগবেনা। পায়ে হেটে ঘুরে নিতে পারেন সামথার গ্রামটি।এখান থেকেই আপনি চাইলে কালিম্পং শহরের পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারেন। পানবু ভিউ পয়েন্ট, রাই দারা, সিনজিতে বুদ্ধ টপ আর হনুমান টক। পাবং, চারখোল, যুগে ফলস, পেমলিং এক দিনের সাইটসিইং করতে পারেন। একদিন যাওয়া যেতে পারে নকদাড়া আর ডাবলিং দারা। হোমস্টেতে বলে রাখলে সব রকম গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবে তারাই।
রসনাবিলাস: গ্রাম্য ঘরোয়া খাবার। চাইলে খেতে পারেন মোমো, থুকপা, নুডুলস, সাফল্যে। দার্জিলিং চা তো আছেই।
ভ্রমণকাল: আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে মার্চ। তবে বর্ষাকালে অন্য রূপ। বর্ষায় জোঁক থেকে সাবধানে থাকবেন।
বৃষ্টি সিক্ত পাহাড়ের কোলে ভ্রমণ কাহিনী – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
শ্রাবণ সন্ধ্যা
শাস্তি
তিতির কান্না