ভজহরির গল্পখানা কবিতা – স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায়
বাবা বলেছিলো, খুড়ো বলেছিলো, জ্যাঠা বলেছিলো।
ভজহরি তাই রোজ হরিনাম করে রাতে ঘুমায়।
সময়মতো ঘুমনোই ভালো।
ভজহরি রোজ সকালে হরির নাম করে।
সকাল-সকাল ওঠা খুব ভালো।
ভজহরি!
ভজহরি, ব’লে কে যেন ডাকে!
কেউ না!
হরির ইষ্ট।
যে হরিরও আড়ে-আড়ে থাকে!
হরিরও ইষ্ট! ইষ্টিকুটুম পাখি নাকি?
সমস্যা আর দুর্বিপাক!
ভজহরি তাই ইষ্টমন্ত্র এতো ভালোবাসে।
ইষ্টমন্ত্রে কি লেখা থাকে,
কি বলা থাকে, ইষ্টমন্ত্রে!
বলা থাকে, গুরু ভজো…লেখাও থাকে…
ভজহরি তাই গুরু ভজে… একাকী!
চুপচাপ মাথা নিচু ক’রে
গরম কড়াইয়ে চপ ভাজে ভজহরি।
আশেপাশে বেশ ভিড় হয়।
চপ দাও, তাড়াতাড়ি দাও, ভজহরি!
আলুর, বেগুনের, ফুলকপির, মোচার…
এছাড়া আমিষ-চপ, দু-একটা নমুনার…
ঝুড়িতে রেখেছে ভজহরি।
কেউ গালাগাল দিলে ভজহরি রাগ করে না!
কেউ প্রশংসা করলে,
আগুনের দিকে তাকিয়ে
পেটটি নাদিয়ে, মুখ
গম্ভীর করে বসে থাকা কি যে সুখ!
ভজহরি রাতে, সকালে হরির ভজনা গুপ্তমন্ত্রে করে।
সে মন্ত্র আর কেউ জানে না!
ভজহরিও ঠিকঠাক জানে না!
প্রত্যেক রাতে দু-চার গ্লাসে জড় ও
জীবের নাচন দ্যাখে ভজহরি।
তরল নেশার জলের ভেতরে নাচে ভজহরি।
হরিও বলেন নাচবো, নাচবো!
গুরু ও শিষ্যে রাতে ও সকালে,
ঘুমঘুম-চোখে একে অন্যকে ভাবে।
গুরু ভজো। সোনার চাঁদ!
হরি বলেছেন, হরির ইষ্টও বলেছেন,
ট্রেনের ভিখিরিণিও বলেছেন।
ভজহরির খুড়ো, জ্যাঠা, বাবা সবাই বলেছেন,
গুরু ভজে যাও!
ভজহরি তাই গুরুর ভজনা করে…
একমনে… নিবিষ্ট চেতনে।
গুরুনামের স্বাদ…আহা,
আনারসের রস যেন!
মিঠা, টক, রসালো…কবে…’ছাড়িয়া যাইব’…
অবশ্য ভজহরিকে দেখলে,
তেমন মনে হয় না!
হয়… ভজহরিকে দেখলে!
মনে হয় – এক্ষুনি গতপ্রাণ?
তবে, পেট নাদায় কেন?
তেমন মনে হয় না!
ইষ্টে শুধু সমস্যা আর দুর্বিপাক!
ভজহরি তখন জিলিপিও ভাজে।
পাকের বিপক্ষে পাক,
সমস্যার উল্টো-ফি-পথে সমস্যা!
কথায় হেসে, মনে ধরে রাখে বাঁক…
“ভজহরি, মাইরি বলছি, ওয়াক!”
কে বলেছিলো?
বলি, কে বলেছিলো, ভজহরি –
ইষ্টে শুধু সমস্যা আর দুর্বিপাক?
কে আর বলবে বলো তো?
বলেছিলো হরিই! ভজহরিই…
মাতাল অবতারে! যখুন-তখুন
দ্বারে-দ্বারে যে ঘোরেনি,
দোরে-দোরে যে ঠ্যালা খায়নি,
সে কি হরি হয়?
এও এক প্রেমের গাঁথুনি!
দুই ভবঘুরে… হরি আর ভজহরি!
কথায়-কথায়, প্যাঁচে-প্যাঁচে তেল থাকে।
বসার জায়গা অস্থায়ি!
পসার জমেছে,
লোকজন হাতে রাখা দরকার –
অনেক দিনের পুরনো কারবার…
ভজহরি আধখানা হয়ে থাকে!
আধখানে চপ মিথ্যে-কাঁদুনি,
আর আধখানে মাথা নিচু করা প্যাঁচ!
মন্দ আয় হয় না!
মানে, আয় মন্দ হয় না!
ভজহরি মানে, অনেক চোখের আশয়-বিষয়!
বিষ হয়? হয়, পেট খারাপ হলে!
পেট খারাপ হলে চপ তেতো লাগে।
জ্বরেও মুখে এতো বিস্বাদ লাগে না!
তখন মনে হয়, চপ এবং জিলিপির প্যাঁচে প্যাঁচে
এবং পুর ও খোলাতে, মানে ত্বকে,
মানে চপের ত্বকে অনেক চোখ থাকে!
ভজহরি, এতো কিছু জানে না!
এই এতো চোখ, মুখ, নাকটাক… জানে না?
কি করে জানবে!
ভজহরি যে চপ বেচে!
ভজহরি জানে,
কি করে নির্লিপ্ত হয়েও চপ খাওয়ানো যায়!
ভজহরির বাবা, কাকা, খুড়ো এঁরাও জানতো!
বাঁশের মাথায় একটা বাল্বের আলো ফোটে!
ভজহরি চপ বেচতে বেচতে
মাঝে মাঝে ওই আলোর দিকে তাকিয়ে ফ্যালে।
ফ্যালফ্যাল নয়, হঠাৎ…হঠাৎ ইস্কাবন জেগে ওঠে!
ভজহরির চপের ঠেকে বাল্বের আলো ফোটে।
ওইটুকু ছোটো আলো!
তাও কি করে যেন ভজহরির চোখ ঝলসে যায়!
ঠিক যেন অমনোযোগে একটা চপ ঝলসে গেছে!
টু-পাইস দিয়ে রেস্তোঁরাতে যাও,
দেখবে, সেখানেও খাবার,
বিশেষ করে ফ্রায়েড-খাবার ঝলসে যেতে পারে!
না-গেলেও নষ্ট হতে পারে!
তবে, ইচ্ছাকৃত খুব কম!
অমনোযোগ!
আমরা সব্বাই যেমন অনেকের ব্যাপারে অমনোযোগী!
ঝলসায় না বোধহয়!
একটু অন্যরকম স্বাদ লাগে!
অমনোযোগ!
অমনোযোগ কি ভালো?
আর কিচ্ছু বলবো না!
ভজহরি সকালে হরিনাম করে,
এটাই একটা কথার কথা!
বিকেলেও হরি, হরি বলে ডাকে।
তাকে জিততে হবে!
কিভাবে জিতবে অস্থায়ি-ভজহরি!
রাস্তা পাল্টেও তো বসেছে ক-একবার!
ভেবে দেখেছি, সে জিতেই আছে।
কারণ, এই কারবার তিনপুরুষের!
ও ভজহরি, তোমার আবার স্থায়িত্বে নিষেধ আছে?
ভজহরি দিব্যি হরি-হরি বলে ডাকে!
আর কিচ্ছু বলবো না!
ভেবে দেখেছি, ভজহরির চিন্তা খুব অসঙ্গত কিছু না!
ভজহরির গল্পখানা কবিতা – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বাংলার রূপের সাত সতেরো
সাগর দেখার স্বপ্ন
বসন্ত ফেরে