মেয়েরা আজ নির্দয়তা/নির্যাতিতা প্রবন্ধ – শ্যামল হুদাতী
এবছর গরমে নাজেহাল ভারত সহ এশিয়ার নানা দেশ বিশেষত ব্যস্ত শহরগুলি। ব্যাংকক, ম্যানিলা দিল্লি, সিঙ্গাপুরের মতো শহরগুলি তীব্র দাবদাহ ভোগ করেছে। তাপপ্রবাহের জেরে শারীরিক অসুস্থতার সম্মুখীন বহু মানুষ।
গ্রামীণ নারীরা সারা বিশ্বের গ্রামীণ সম্প্রদায়ের একটি মৌলিক অংশ। তারা গ্রামীণ সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং খামারের বাইরের কাজে জড়িত থাকে। বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে, গ্রামীণ মহিলারা খুব কঠোর পরিশ্রম করে কিন্তু পুরুষদের তুলনায় খুব কম উপার্জন করে।
নারীরা প্রায়শই বৈষম্যের শিকার হন কারণ তাদের জমির মালিকানা পুরুষদের মতো একই রকমের অনুমতি দেওয়া হয় না। অসম লিঙ্গ ভূমিকা বা বৈষম্যের কারণে তারা যা উপার্জন করে তার বেশিরভাগই সরাসরি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, তাপপ্রবাহের প্রভাবে মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের দেশে প্রকৃতি যেন পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের প্রতি বেশি নির্দয়। ভারতের লিঙ্গ বৈষম্যের সঙ্গে ব্যাপারটা বেশ মিলেমিশে গেছে। মহিলারা তীব্র তাপ প্রবাহের শিকার হয় পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। এমন একটা ধারণা চালু আছে যে পুরুষরা ঘরের বাইরে কাজ করে তাই তারাই বেশি রোদে পোড়ে। কিন্তু নতুন গবেষণা সেই ছবিটা পুরোপুরি বদলে দিল।
গবেষণা বলছে তাপ প্রবাহের ধাক্কা মেয়েদের বেশি সামলাতে হয়। ঘরের মেয়েদের আগুনের সামনে বেশি কাজ করতে হয়। রাজস্থানের মত মরু অঞ্চলে, পাহাড়ি অঞ্চল, প্রত্যন্ত গ্রামেও এবং দেশের বহু জায়গাতেই এখনো কাঠফাটা রোদে রান্নার জল বয়ে আনতে হয় এই মেয়েদেরই। মেয়েদের অবস্থা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ গবেষণা আমাদের দেশে নিতান্তই কম। সাধারণ মৃত্যু ও অসুস্থ সংক্রান্ত তথ্য পেতেও বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়। তাপমানের তারতম্যের কারণে মৃত্যু ও অসুস্থতায় তথ্য জানার কোন ব্যবস্থা আমাদের দেশের নেই। ভারতে গত ৩০ বছরে তাপ প্রবাহে মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করলে জানা যায় যে পুরুষদের মৃত্যুর হার অনেক কম। গবেষকরা ১৯৯০ – ২০১৯ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপ মানের পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে ২০০৫ থেকে মহিলাদের মৃত্যুর হার বেড়েছে। ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মহিলাদের মৃত্যুর হার ৪.৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তারপরের দশকে অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই তাপ জনিত মৃত্যুহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৮৪ শতাংশ। মেয়েদের মৃত্যুর হার বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এক নির্দিষ্ট কার্যক্রম সম্পর্ক রয়েছে।
ছেলেদের মৃত্যুহার কমার সঙ্গে স্পষ্টতই জনস্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো, আর্থিক সামাজিক উন্নয়ন এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নতির একটা যোগ রয়েছে। কিন্তু এই সুযোগ সুবিধা মেয়েদের ক্ষেত্রে সমানভাবে বাড়েনি। মেয়েদের জল আনা ই বলুন বা রান্না করা তাদের তীব্র গরমে কাজ করার সমস্যা রয়েই গেছে।
আবার খরায় মেয়েদের স্বাস্থ্য ও জীবিকার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর হিসাবে খরার প্রভাব ৩৫ শতাংশ বেশি মহিলাদের ওজন কমার লক্ষণ দেখা যায়। যাকে বলা হয় আন্ডারওয়েট।
বাল্যবিবাহ বেড়েছে ৩৭ শতাংশ । প্রকৃতির রোষে ছাপ ফেলেছে মেয়েদের সামাজিক জীবনেও। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে খরা বা তার পরবর্তী পরিস্থিতিতে কমবেশি মেয়েদের মা হওয়ার ঘটনা বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এটা পরিষ্কার যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরিণত হচ্ছে এক সামাজিক বিপর্যয়।
গবেষকদের পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যায় যে দেশের ৫০ শতাংশ মহিলার এবং তাদের পাঁচ বয়সে কম বয়সী শিশুরা ২০২১ সালে বিরাট ঝড়-বৃষ্টি জনিত বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন। আমাদের দেশে কৃষি কাজে কর্মরতদের একটা বড় অংশ মহিলা। স্বাভাবিক কারণেই তাদের জলবায়ু সংক্রান্ত বিপদের ঝুঁকি অনেক বেশি ।
প্রকৃতির রোষে পড়েন তো সবাই। তবে মেয়েদের চাপ আরোও অনেক বেশি।
গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন শুধুমাত্র স্বতন্ত্র নারী ও পরিবারের দারিদ্র্য দূর করতেই সাহায্য করতে পারে না, বরং সমগ্র সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন-শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং গ্রামীণ উন্নয়নের অন্যান্য সুবিধার জন্য সহায়তা করতে পারে । এটি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রায়শই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ করে যা গ্রামীণ মহিলাদের জীবনে বিনিয়োগ এবং প্রভাব ট্র্যাক করে এবং জাতিসংঘ গ্রামীণ মহিলাদের আন্তর্জাতিক দিবসের পৃষ্ঠপোষকতা করে। সারা বিশ্বের গ্রামীণ সম্প্রদায়ের একটি মৌলিক অংশ। তারা গ্রামীণ সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যত্ন প্রদান করে এবং জীবিকা নির্বাহের কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং খামারের বাইরের কাজের মতো সংখ্যক অর্থনৈতিক সাধনায় জড়িত থাকে। বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে, গ্রামীণ মহিলারা খুব কঠোর পরিশ্রম করে কিন্তু খুব কম উপার্জন করে। তাঁরা আজ এককথায় নির্যাতিতা।
মেয়েরা আজ নির্দয়তা/নির্যাতিতা প্রবন্ধ – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
শ্রাবণ সন্ধ্যা
শাস্তি
তিতির কান্না