নাগালের বাইরে পদ্মার ইলিশ ভৌতিক গল্প -প্রদীপ দে
— কিগো সঙ্গে ছাতা নিয়েছো?
— আচ্ছা, কি মুশকিল বলোতো? যাচ্ছি একটা ভাল কাজে,পিছন থেকে ডাকার কি হল?
— দেখেছো? কালো মেঘটাকে? এখনই বৃষ্টি নামবে, আর ছাতা নাওনি কিন্তু!
— সত্যি কথা ছাতা নিইনি। কিন্ত তাবলে পিছু ডাকবে?
— তা কি হবে? একটু না হোক বসে যাবে!
— ধূৎ শালা! কে বসবে?
— হুশ হুশ, যাঃ যাঃ, দিলি তো রাস্তা কেটে? দৌড়ে চলে এলি ? হারামীর একশেষ!
— ও গোলগাল’দা, কোথায় চললে?
সবে টোটো থেকে নেমেছি আর ঠিক তখনই বাজখাই গলায় চিৎকার করে পিছু মেরে ডাক এল।
একে শনিবার তায় সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেড়োবার সময়ও অর্ধাঙ্গিনী এরকমই করল, হারামী বিড়ালটা রাস্তা কাটল, এখন আবার এই পাতিরাম এই রকম করে ডাকল।
মাথা গেল বিগড়ে। তিরিক্ষি মেজাজে,
— কি হল রে পাতলা? চিল্লাচ্ছিস কেন?
— এমনি এমনি চিল্লাচ্ছি? পাতি এমনি পাতলা হয় না। ইলিশ নিয়েছিস?
— তোর মত বাপের অন্ন ধ্বংসাই না? ইলিশ মাছ?
পুঁটিমাছ কেনার ক্ষেমতা নেই, তায় আবার হু ?
— আরে বাপ তাই ত চিল্লাই!
— শালারে, কেবলই হারামী?
— আরে শোন, আগে বাজারের মধ্যে চলে যা! বড় বড় হিলিস ফ্রি তে দিয়ে দিচ্ছে।
— ধূৎ শালা ধপের …
— মাইরি বলছি … বিশ্বাস কর …
— আচ্ছা দাঁড়া দেখে আসি … যদি না হয় তাহলে …
বাজারে ঢূকবো কি? শালা, গলির মুখ থেকে জমজমাট লাইন।
— দাদা এটা কিসের লাইন?
— আরে পদ্মার ইলিশ দিচ্ছে। তাও আবার ফ্রি! দুয়ারে ইলিশ!
— দাদা, লাইনের শেষ কে? ওহঃ আপনি? আমি আপনার পর আছি।
পেয়ে গেছি। আড়াই ঘন্টা লাইন দিয়ে এক কেজি আড়াইশো গ্রামের পদ্মার ইলিশ আমার হাতে। থলে নেই। প্ল্যাস্টিক বন্ধ! কায়দা করে মাছটার মুখে দড়ি বেঁধে টানা হাঁটা। পাতিরাম শালা ঠিক দেখে নিল,
— কিরে পেলি তো … যা আজ বাড়ি গিয়ে বৌদিকে…..
হাত দিয়ে একটা অসভ্য আর আদিম ইঙ্গিত করে দেখালো।
ভাববেন না এটা সকাল। এখন রাত দশটা। অটো বন্ধ। গ্যাসের দাম বেশি। টোটো পুরো ভাড়া করে নিতে হবে। চলো বাবা পয়দাল। পায়ের বিকল্প নাই।
দশমিনিট হাঁটার পর শর্টকাট গলি পছন্দ হল। নিরিবিলি। আর আটমিনিট গেলেই মোড় মাথা। বাড়ি দুমিনিট ওখান থেকে।
সাঁ করে আমার হাতের ইলিশ মাছটা ছুটে চললো।আমি থতমত খেয়ে গেলাম। ভাল করে চেয়ে দেখি আঙুলে ধরে আছি দঁড়ি, কিন্তু মাছ নেই। শালা মহাঝামেলা হল! এ আবার কি হল ?
অন্ধকারে চিকচিক করে ইলিশটা একটা তাল গাছে গিয়ে ঝুলে রইল। আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম। এ বাবা? এবার কি করা উচিৎ বুঝতে পারলাম না। নীচে ঠায় অপেক্ষমান …..
না বেশিক্ষণ থাকতে হল না। দেখলাম মাছটার আঁশ খসে খসে নীচে নেমে আসছে, চকচকে রূপালি রঙ নিয়ে আর মাত করছে কচমচ করে মাছ চিবানোর শব্দে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। মাছ নিমেষে হাওয়া হয়ে হাউয়ির মত ভ্যানিস হয়ে গেল, আঁশটে গন্ধে মাত হয়ে গেল।
ভয়ে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে ধপাস করে গলিপথে ই একেবারে কুপোকাত !
শুধু কানে একটা কথা বেজেছিল,
” শাঁলা! একটু জল দে না রে “
অনেকের চিৎকারের মাঝে যখন জ্ঞান ফিরে এল, তখনও মালুম হল না, এটা কার আকুতি ছিল, আমারই না কি অন্যকারোর?
শালা! সেটাই মনে করতে পারছি না ……?
নাগালের বাইরে পদ্মার ইলিশ ভৌতিক গল্প – সমাপ্তি
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
ব্রহ্ম দৈত্য
প্রত্যাবর্তন
অদৃশ্য প্রহরী