কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

ভালোবাসা

ভালোবাসা প্রেমের গল্প – দেবাজীব সরকার

পলাশ-চন্দ্রাণীর পাঁচ বছরের প্রেমটা ভেঙে গেছিলো এক লহমায়, যেদিন পাত্র হিসেবে পলাশকে মেনে নেন নি রাশভারি রঞ্জিতবাবু। চিত্রশিল্পী হিসেবে পলাশের যথেষ্ঠ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকলেও অর্থ উপার্জনের নিশ্চয়তা না থাকায় রঞ্জিতবাবু পলাশকে তার জামাই হিসেবে মেনে নেন নি। মেয়েকে বলেছিলেন, “তোমায় তো আর ছবি খাওয়াবে না, খাওয়াতে গেলে অর্থের প্রয়োজন। সে আঁকা ছাড়া আর কী করে? চাকরি বাকরি কিছু করে?” চন্দ্রাণীর কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর ছিল না। মেয়ের জন্য সরকারি চাকুরে অনির্বাণকেই রঞ্জিতবাবুর পছন্দ। মেয়েকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন অনির্বাণকেই বিয়ে করতে হবে। বাবার মতের বিরুদ্ধে যাওয়ার মতো সাহস ছিল না চন্দ্রাণীর।

         কয়েকদিন হলো অনির্বাণ-চন্দ্রাণীর মেয়ে ঈপ্সিতার বিয়ে হয়ে গেল। অনির্বাণ চন্দ্রাণীর হাতটা ধরে বললো, “চন্দ্রা, আমাদের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, আজ একটা সত্যি কথা বলবো তোমায়। তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো জানি না, কিন্তু আমি আজও তোমাকে ততটাই ভালোবাসি।” চন্দ্রাণী মুখ বেঁকিয়ে বললো, “বুড়ো বয়সে ভীমরতি হলো নাকি?” অনির্বাণ হাসতে হাসতে বললো, “না গো, গিন্নি, এত বুড়ো হই নি যে ভীমরতি হবে।” চন্দ্রাণী কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “তাহলে এই বয়সে ভালোবাসি, ভালোবাসি বলে লাফানোর কী আছে?” অনির্বাণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “আসলে জানো তো গিন্নি, মেয়ে সেই ছোট্ট থেকে বড় হয়ে গেল, তার আবার বিয়েও হয়ে গেল, এর মাঝে তো তোমাকে বলবার আর সময় পাই নি, যে, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।”

-“তাই বলে এইভাবে বলতে হবে! আমি তো জানি, তুমি কতটা আমাকে ভালোবাসো।”

-“না, জানো না, গিন্নি, তুমি জানো না। তুমি বিয়ের আগে বলেছিলে, পলাশকে ভালোবাসো, বাবার চাপে তুমি রাজি হয়েছো।”

-“হ্যাঁ, বলেছিলাম। দেখো, আমি সত্যিটা তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম। যদি তুমি পরে জানতে, তাহলে তোমার কষ্ট হতো।”

-“তা হতো ঠিকই। তুমি তোমার ভালোবাসার কথা আমাকে জানিয়ে ঠিকই করেছিলে। কিন্তু গিন্নি, একটা কথা তুমি আমার থেকে লুকিয়ে গেছিলে।”

-“কোন্ কথা?” বিস্ময়ভরা কন্ঠে বলে ওঠে চন্দ্রাণী। 

-“তুমি যেদিন প্রথম বললে, তোমার গর্ভে নতুন কারুর আগমনের অনুভূতির কথা, সেদিন আনন্দের পরিবর্তে আমি একাকী কেঁদেছি। কারণ আমি জানতাম ঐ সন্তান আমার নয়, পলাশের সন্তান তোমার গর্ভে বেড়ে উঠছিলো।”

-“কি পাগলের মতো কথা বলছো?” চেঁচিয়ে ওঠে চন্দ্রাণী। 

-“না, চন্দ্রা, আমি পাগলের মতো বলছি না।  বিয়ের আগে শারীরিক সমস্যার কারণে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, ডাক্তার বলেছিলো, আমার শারীরিক অক্ষমতার কারণে আমি কোনোদিন বাবা হতে পারবো না, যদিও শারীরিক সম্পর্কে আমার কোন অসুবিধা হবে না।”

-“কীইই উল্টোপাল্টা বলছো তুমি?” 

-“বিয়ের আগে যেদিন আমরা রেস্টুরেন্টে প্রথম দেখা করি, সেদিন তোমায় জানাবো ভেবেছিলাম কিন্তু তোমায় দেখেই এত ভালোবেসে ফেলেছিলাম, আমার সমস্যার কথা বলতে পারি নি, যদি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও। ভেবেছিলাম, বিয়ের পরে তোমাকে জানাবো আর তুমি রাজি থাকলে সন্তান দত্তক নেবো।” 

         অনির্বাণ কিছুটা সময় নীরব থেকে বলতে শুরু করে, “পরে তোমার গর্ভস্থ সন্তানের ব্যাপারে সব কিছু জানলেও কিছু বলি নি, কারণ তোমার সঙ্গে এই বিষয়ে ঝগড়া করলে, তোমার সঙ্গে সারাজীবনের মতো সম্পর্ক খারাপ হতো। মেয়েও সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পেত না। তোমাকে ভালোবেসে আর মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি সব মেনে নিয়েছি। এখন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা এখন ঝাড়া হাত পা। তাই তোমাকে এই কথাটা বললাম। তবে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো, এ কথা কেউ কোনদিন জানবে না।”

চন্দ্রা হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে এই প্রথমবারের জন্য অনির্বাণকে পাগলের মতো জাপটে ধরে। অনির্বাণের চোখেও জল চলে আসে, এক হাতে চোখের জল মুছে বলে “বাকি জীবনটা কি তোমার একটু ভালোবাসা পেতে পারি, চন্দ্রা?” কাঁদতে কাঁদতেই চন্দ্রাণী বললো, “তুমি আমায় এতটা ভালোবাসো, আমি কোনদিন বুঝতে পারি নি। আমি ভাবতে পারছি না, কোন মানুষ এতটা ভালোবাসতে পারে। আমি জানি না আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য কিনা। তবে কথা দিচ্ছি যে ক’দিন বেঁচে থাকবো, সে ক’দিন শুধু তোমার জন্য বাঁচবো, তোমার কথা ভেবে বাঁচবো। আমার শেষ নিঃশ্বাসটুকু তোমার জন্য থাকবে।”

ভালোবাসা প্রেমের গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!