কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

কৃষ্ণচূড়ার কাছে

কৃষ্ণচূড়ার কাছে প্রেমের গল্প – কাজল মণ্ডল

নদীটির ওপাড়ে বাড়ীটি।একতলা ছোট্টো বাড়ীটি।বাড়ীর ওপাশে একতলার ছাদের উপর দিয়ে দেখা যায় একটা নারকেল গাছ।ওদিকে আর কলাগাছের অংশ বিশেষ।ও দিকটায় ছোটোমোটো ঙ্গো ঙ্গোবাগান টাগান আছে মনে হয়। এপাড়ে কিছুটা মাঠ আর বড় বড় দু’টো মন্দির। একটা কালী আর একটা শিব মন্দির। মাঝে কূল কূল করে বয়ে চলা সরু নদী। যাকে বলা যেতে পারে ছোটো নদী। আর নদীটা এখানে একটা রোমান্টিক বাঁক নিয়েছে।যার সুপ্রভাব দু’পাড়েই। হ্যাঁ যে বাড়ীটির কথা বলছিলাম। এপাড় থেকে স্পষ্টই দেখা যায় সেই বাড়ীটি। কমল বলতে গেলে রোজ বিকেলেই আসে এখানে। এই নদীর ধারে।এখান থেকে শহরের ভিতর বড়জোড় কিমি দু’য়েক হবে কমলদের বাড়ী।ছেলেবেলায় মাঝে মাঝে বাড়ীর পরিবারের সঙ্গে আসতো এখানে।পূজা পার্বনে স্নান টান করতে।আর উচ্চমাধ্যমিকের পর আসতো বন্ধু বান্ধবদের সাথে। আড্ডা দিতে। আর এখন গ্রাজুয়েট হবার পর একা একাই আসে।আসে প্রকৃতির রূপ দেখতে।প্রকৃতির রস পান করতে।এখানে এসে বসে বসে দেখে কূল কূল করে বয়ে যাওয়া নদীর আলতো স্রোত। দেখে আকাশের বুক বেয়ে উড়ে যাওয়া সারি সারি ক্লান্ত বক।কিংবা ক্যাচ্ ক্যাচ্ করতে করতে উড়ে যাওয়া খুশি মাখা টিয়ার ঝাঁক। দু’চোখ ভরে দেখে নদীর ওপাড়ের দিগন্তে রাঙা সূর্যের ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাওয়া। আর দেখে ওপাড়ের বাড়ীটির ছাদে ঘুরে বেড়ানো মেয়েটিকে। রাঙা সূর্যের রাঙা রঙ এসে এসে পড়ে মেয়েটির গায়ে।নগ্ন পায়ে। এসে এসে পড়ে ঘন কালো চুলে। সব মিলিয়ে মনে হয় যেন টিপটিপ তারা ভরা আকাশে এক ফালি নরম চাঁদ। কমলের মন,প্রাণ এক অদ্ভুত আবেশে ভরে যায়।বুকের মাঝে খেলে যায় এক ভালোলাগার চোরা শিরশিরানি। এই নদীর ধারটা বলতে গেলে নির্জনই থাকে। শহরের একটু বাইরে।আশেপাশে তেমন ঘর বাড়ী নেই বললেই চলে।একা একা বসে বসে নিরিবিলিতে প্রকৃতিকে উপভোগ করার মতোই জায়গা বটে।এইসব জায়গায় আসলে এমনিতেই প্রেমে পড়ে যেতে হয়। মন খুশিতে আপনা আপনিই ভরে যায়। আরে আমিও কী প্রেমে পড়লাম নাকি। এই প্রকৃতির। না ঐ মেয়েটির। না সব কিছু মিলেমিশে সব কিছুরই। কে জানে! এইসব চিন্তা-ভাবনা কমলের মনের মাঝে এসে ভীড় করে। আবার পরক্ষণেই সেই ভীড় উধাও হয়ে যায়। মনের মাঝে খেলে যায় এক মিঠে ফুরফুরে দখিণা হাওয়া।কমল কোথায় যেন পড়েছিল প্রকৃতিই প্রকৃত বৈশল্যকরণী। এখন সেটা মন প্রাণ দিয়ে অনুভব করে। কত দিন কমলের মনে হয় ওপাড়ে যায়।ওপাড়ের বাড়ীটির কাছে যায়। কোনো এক ছুঁতোই মেয়েটির সঙ্গে আলাপ করি। দু’ চার কথা বলি। তাও যদি সম্ভব না হয়, নিদেন পক্ষে মেয়েটিকে একটু কাছ থেকে দেখি। ওকে আরও কাছ থেকে দেখে এই দু’ চোখ সার্থক করি।মনের পিপাসা মিটায়। এখন বসন্ত। বিকেল হতে হতেই কমল চলে এসেছে এই নদীর ধারে। এখানে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে বসেছে। সাধারণতঃ এই গাছটার নীচেই ও রোজ বসে। এই বসন্তের ছোঁয়ায় সারা গাছটা লাল লাল ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। ক্যাচ্- ক্যাচ্- করতে করতে এক ঝাঁক টিয়া কৃষ্ণচূড়া গাছটা ঘেঁষে উড়ে গেল।ডুবু ডুবু রাঙা সূর্যের রাঙা রঙ এসে এসে পড়ছে কৃষ্ণচূড়ার লাল লাল ফুলে ফুলে। কূল- কূল করে বয়ে চলা নদীর জলে জলে। রাঙা রঙ এসে এসে পড়ছে কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পাতায়। উড়ে চলা পাখির ডানায় ডানায়।রাঙা রঙ এসে এসে পড়ছে আকাশে বাতাসে।এপাশে ওপাশে।চারপাশে।এইসব প্রকৃতির রূপ সত্যি মন ছুঁয়ে যায়। মনকে ভরিয়ে দেয় এক মনোরম ভালোলাগায়। আচ্ছা আজ ঐ মেয়েটা ছাদে উঠছে না কেন! বাড়ীতে নেই নাকি! না অসুখ বিসুখ করলো!ছাদে উঠতে এত দেরি তো করে না।গত দু’দিন বাইরে যাওয়াই কমলের এখানে আসা হয়নি।সত্যি মেয়েটি না থাকলে এই প্রকৃতি কমলের কাছে কোথায় যেন অসম্পূর্ণ। এখন যেন মনে হচ্ছে কূল কূল নদীর স্রোতে বিরহীর চোরা সুর। কৃষ্ণচূড়ার লাল লাল ফুলে যেন রক্তের দাগ। আশেপাশের রাঙা রঙে রঙে এক ধূসররতার ছোঁয়া।সমস্ত প্রকৃতি যেন কার অপেক্ষায় বড় ই কাতর।বড় ই করুণ। কমলের মনকে স্পর্শ করে যাচ্ছে এই উদাসীনতা। বুকটা হু হু করে উঠছে এক শূন্যতায়। আরে বাড়ীটির ছাদে দু’জনকে দেখা যাচ্ছে না। তারমধ্যে ঐ তো সেই মেয়েটি। যদিও আলতো আলোয় মুখটা অস্পষ্ট। কিন্তু ওর শরীরের আদল তো কমলের মনে আটকানো। তাই ভুল হবার কোনো প্রশ্ন ই উঠে না আর। কমলের বুকটা সেই আগের আবেশে ভরে যায় আবার। আকাশে বাতাসে বেজে উঠে এক মন ভালো করা সুর। দেখতে দেখতে কেটে যায় চারপাশের প্রকৃতির শূন্যতা।সব কিছু পায় এক পূর্ণতা। তবে ওর সঙ্গে থাকা আর একজনকে ঠিক বুঝতে পারে না কে? আগে দেখেছে বলেও মনে হয় না কমলের। একটু পরেই কমলের চোখ দু’টো দেখে দু’জন দু’জনকে আলিঙ্গন করছে। চুমু খাচ্ছে। কমলের বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠে এক বিরহী ব্যথায়। ভাবে যে ছিল শুধু আমার, আজ সে অন্যের। অন্য জনের বাহু পাশে আবদ্ধ। তবুও মেয়েটি আছে তো। ওর ভালোলাগাই তো কমলের ভালোলাগা।ওর স্মৃতিই তো কমলের বুকের মাঝে। মনের মাঝে। জীবন টা ভরা থাকে স্মৃতি-সুধায়।

কৃষ্ণচূড়ার কাছে প্রেমের গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!