পাকুড় গাছ ভৌতিক গল্প – সিদ্ধার্থ সিংহ
বাবা বেরোবার আগে থেকেই মুখ গোমড়া করে ছিল আকাশ। দুপুর হতে না-হতেই অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারের মতো আরও অন্ধকার নেমে এল চারিদিকে। শুরু হল বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা। সঙ্গে তুমুল এলোপাথাড়ি ঝড়। সব উড়িয়ে নিয়ে যায় আর কী। মড়মড় করে ভাঙতে লাগল গাছপালার ডাল-মগডাল। একশো, দেড়শো, দুশো বছরের পুরনো সব বিশাল বিশাল গাছের ঝাঁকড়া মাথাগুলো উথালিপাথালি খেতে লাগল। কী এক ভয়ানক আতঙ্কে বাসা ছেড়ে কা কা করতে করতে কাকেরা ডানা ঝাপটাতে লাগল। হুক্কা হুয়া করে তারস্বরে ডাকতে লাগল শেয়ালেরা। এই বুঝি রসাতলে গেল পৃথিবী। সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। ভয়ে আতঙ্কে ঘরের ভিতরে গুটিসুটি মেরে অপেক্ষা করতে লাগল চার ভাইবোন। কখন তাদের বাবা আসবে।
ওদের বাবা গেছেন হাসপাতলে। ক’দিন ধরেই ওদের মা খুব ভুগছিলেন। ভেবেছিলেন, পীরবাবার জল-পড়া কিংবা গ্রামের গুনিনকত্তার তুকতাকেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। উলটে আরও বেড়ে গেছে রোগ। একদম কঙ্কালসার হয়ে গেছে চেহারা। হয়ে গেছেন ভীষণ খিটখিটেও। ভাল কথা বললেও তিনি ত্যাড়া ত্যাড়া উত্তর দিচ্ছেন। কাউকেই যেন সহ্য করতে পারছেন না। এমনকী নিজের ছেলেমেয়েকেও না।
কী যে হয়েছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এ ভাবে আর ফেলে রাখা ঠিক নয়, বুঝতে পেরে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর বাবা শেষ পর্যন্ত ওদের মাকে ভর্তি করে দিয়েছেন সদর হাসপাতালে।
সকাল হলেই চার ছেলেমেয়ের জন্য দু’টি চাল-ডাল ফুটিয়ে রোজ চলে যান হাসপাতালে। বউ কখন কেমন থাকেন, ডাক্তারবাবুরা কখন কী ওষুধপত্র এনে দিতে বলেন, কিছুই তো বলা যায় না। সন্ধেবেলায় ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে কথা বলে তার পর বাড়ির দিকে পা বাড়ান। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। এখন বুঝতে পারছেন একান্নবর্তী পরিবারে থাকার কত সুবিধে।
বাবা গত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে গিয়েছিল জমিজমা। তার পরেই আলাদা হয়েছিল হাঁড়ি। এখন কারও সঙ্গেই কারও কোনও সদ্ভাব নেই। মুখ দেখাদেখিও নেই বললেই চলে। সবাই সবাইকে মনে করেন শত্রু। শুধু জমিজমাই নয়, বাবার রেখে যাওয়া অন্যান্য জিনিসপত্রও সবাই মিলে আলোচনা করে সমান ভাগে ভাগ করে নিলেও প্রত্যেকই মনে করেন তিনি ঠকেছেন। অন্য ভাই-বোনেরা তাঁর থেকে বেশি পেয়েছেন। ফলে কেউই আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না।
শ্বশুর-শাশুড়িও নেই যে, মেয়ের অসুখ শুনে ছুটে আসবেন। অগত্যা খবর দেওয়া হয়েছে বড় শ্যালককে। তাঁর নাকি আজই আসার কথা। অথচ আজই সকাল থেকে শুরু হয়েছে ঝড়জল।
হঠাৎ হঠাৎ আকাশ বিদীর্ণ করে বাজ পড়ছে। তার মধ্যেই কীসের যেন বিকট একটা শব্দ। ঘরে বসেই চার ভাইবোন বলাবলি করল, বাড়ির সামনের তালগাছটা বুঝি ভেঙে পড়ল রে…
কার্তিক বলল, দাঁড়া দেখে আসি।
গণেশ বলল, যাস না, এই সময় ব্যাঙ ধরার জন্য সাপখোপ বেরোয়। দরজা খোলা পেলে ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে।
লক্ষ্মী বলল, যা হাওয়া দিচ্ছে… দরজা খুলিস না।
সরস্বতী বলল, বৃষ্টি থামুক। তার পর দেখিস।
কিন্তু কে শোনে কার কথা! গায়ের চাদরটা সরিয়ে
দৌড়ে গিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে উঁকি মারতেই কার্তিক দেখল, দরজার সামনে ভিজে চুপচুপে হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের মামা।
সঙ্গে সঙ্গে হাট করে দরজা খুলে দিল। হু হু করে ঢুকতে লাগল দামাল বাতাস। মামাকে দেখে খাট থেকে হুটোপুটি করে নেমে এল বাকি ভাইবোনেরাও। প্রায় হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে এল মামাকে। গা-মোছার জন্য এক ছুট্টে গামছা নিয়ে এল কার্তিক। ঝপ করে বাবার লুঙ্গি আর ফতুয়া বার করে দিল গণেশ।
ওদের মামা মাথাটা ভাল করে মুছে জামাকাপড় বদলে খাটে উঠতেই লক্ষ্মী বলল, চা খাবে?
এর আগে যতবার এসেছেন লক্ষ্মীর মা-ই চা করে দিয়েছেন। তাই ওদের মামা জিজ্ঞেস করলেন, তুই চা করতে পারিস?
লক্ষ্মী বলল, মাকে তো করতে দেখেছি।
ওদের বাড়িতে চা খাওয়ার পাট নেই। তবুও ওদের মামা যেহেতু শহরে থাকেন, ঘনঘন চা খাওয়ার বাতিক আছে, তাই শ্যালকের জন্য গত কালই চা পাতা এনে রেখেছেন ওদের বাবা। বের করে রেখেছেন বাটি, চা ছাঁকনি নেই দেখে বের করে দিয়ে গেছেন কাপড়ের এক চিলতে টুকরো। দেখিয়ে দিয়ে গেছেন কীভাবে কাপড়ের টুকরো দিয়ে চা ছেঁকতে হয়।
আদা দিয়ে কড়া করে বড় এক কাপ লিকার চা বানিয়ে দিল লক্ষ্মী। সরস্বতী বলল, এই দুর্যোগ মাথায় নিয়ে কেউ আসে? কোথাও একটু দাঁড়াতে পারতে তো! বৃষ্টি কমলে না হয় আসতে!
— না রে, বাস থেকে নেমে একটা চায়ের দোকানের ভেতরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটাও ভ্যানরিকশা দেখতে পেলাম না। রাস্তাঘাট জনমানব শূন্য। কোনও খরিদ্দার নেই দেখে দোকানদারও ঝাঁপ ফেলার জন্য তোড়জোড় করতে লাগল। বলল, এই ঝড়বৃষ্টি থামার তো কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যাবেন?
তোদের বাবার নাম বলতেই চাওয়ালা বলল, ও… ওদের বাড়ি? ওকে তো এখন পাবেন না।, ওর বউ তো হাসপাতালে ভর্তি। প্রত্যেকদিন সকালবেলায় বেরিয়ে যায়। আসে সেই রাতে। আজও তো দেখলাম সক্কালবেলায় যেতে। না, এখনও মনে হয় বাড়ি ফেরেনি। ফিরলে তো আমার দোকানে একবার উঁকি মেরে যেত। ক’দিন ধরে যা যাচ্ছে ওর ওপর দিয়ে। বাচ্চাগুলি বাড়িতে বোধহয় একা-একাই আছে। এই ঝড়ে যে ভাবে গাছপালা পড়ছে… ওদের বাড়ির চারদিকটা তো আবার সার সার গাছ দিয়ে ঘেরা। ও দিকে না আবার কোনও বিপদআপদ ঘটে!
বিপদের কথা শুনেই আমি আর এক মুহূর্ত দাঁড়াইনি। বৃষ্টির মধ্যেই বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে শুরু করেছিলাম। তোদের এদিককার রাস্তাটা তো আবার মাটির। লাইট নেই। অন্ধকার। কত বার পিছলে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিয়েছি। হাঁটতে হাঁটতে কত বার থ্যাকথেকে কাদার মধ্যে যে আমার চটি আটকে গেছে! তার মধ্যে এ দিকে ও দিকে রাস্তা জুড়ে পড়ে আছে বিশাল এক-একটা গাছ। সে সব দেখেশুনে ডালপালা টপকে টপকে পাক্কা এক ঘণ্টা বারো মিনিট হেঁটে, তবে তোদের বাড়িতে এসে পৌঁছলাম।
ওদের মামা যখনই আসেন, চার ভাইবোনের জন্য হয় ফুটকড়াই, নয় লজেন্স, আর তা না হলে পলিপ্যাকে মুড়িয়ে গরম গরম চিনেবাদাম নিয়ে আসেন। কখনও সখনও ভাগনিদের জন্য নিয়ে আসেন টিপের পাতা, হেয়ার ব্যান্ড, নেলপালিশ। দুর্যোগের জন্য আজ কিছুই আনতে পারেননি, এ কথা বলতেই লক্ষ্মী-সরস্বতী বলল, দরকার নেই ও সবের। তুমি বরং ওই গল্পটা বলো। ওরা বলতেই, দু’বোনের সঙ্গে গল্প শোনার জন্য বায়না ধরল কার্তিক গণেশও।
না, আজ নতুন নয়, সেই ছোটবেলা থেকেই মামাকে পেলে ওরা আর কিচ্ছু চায় না। গোল করে ঘিরে শুধু গল্প শুনতে চায়। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। কিন্তু ওরা কোন গল্পটার কথা বলছে, বুঝতে না পেরে ওদের মামা নিজে থেকেই বললেন, আজ যা আবহাওয়া, আর তোরা যে ভাবে বিছানার চাদর-টাদর মুড়ি দিয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছিস, আমার মনে হয় আজকে ভূতের গল্পই ভাল জমবে। কী? ভূতের গল্প শুনবি?
মামার মুখের কথা শেষ হল কি হল না, চারজনই লাফিয়ে উঠল। কার্তিক বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ মামা, ঠিক বলেছ, ভূতের গল্পই বলো। ভূতের গল্পই বলো।
কথাটা একজন বলল ঠিকই, কিন্তু এই কথাটাই যেন বাকি তিনজনেরই মুখের কথা। ওরা সবাই মামার মুখের দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে রইল।
ওদের মামা বলতে শুরু করলেন— সে দিনও ছিল এই রকমই ভয়াবহ এক ঝড়জলের দুপুর। দুপুর তো নয়, যেন মধ্যরাত। ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। তার মধ্যে তেমনি পাগল করা ঝড়। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। থেকে থেকেই দমকা বাতাস এলোপাথাড়ি বইছে। কত গাছ যে রাস্তার ওপরে পড়ে আছে তার হিসেব নেই। গাড়িঘোড়া বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। একটা বাস কোনও রকমে ভেঙে পড়া গাছের বড় বড় গুড়ি পাশ কাটিয়ে কাটিয়ে যাচ্ছে।
বাসের মধ্যে হাতে গোনা আরও কয়েক জনের মতো চুপচাপ বসে আছে প্রবাল। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। থেকে থেকেই কড়কড় করে বাজ পড়ার শব্দ কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবী যেন তালগোল পাকিয়ে যাবে। ঘেমে যাওয়া জানালার কাচ হাত দিয়ে মুছে প্রবাল বাইরের দিকে তাকাল। দেখল, কেউ কোত্থাও নেই। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। জায়গায় জায়গায় জল দাঁড়িয়ে গেছে।
সে যাচ্ছিল দিদির বাড়ি। ভাবছিল, স্টপেজ এলে এই বৃষ্টির মধ্যে সে নামবে কি না। নাকি সোজা চলে যাবে বাসস্ট্যান্ডে। ফিরতি বাসে ফিরে যাবে বাড়ি। কিন্তু যে দুর্যোগ শুরু হয়েছে, এর মধ্যে কি আর কোনও বাস ছাড়বে! আর তাকে যদি নির্ধারিত স্টপেজে নামতেই হয়, বাস থেকে নেমে সে কী করবে! সঙ্গে ছাতাটাও আনেনি। আশেপাশে তো কোনও ঘরবাড়িও নেই। দু’দিকেই ফাঁকা জমি। মাঝখানে গাড়িরাস্তা। এমনি
দিনেই কোনও লোকজন থাকে না। আর আজ তো… কোনও গাছের তলায় দাঁড়িয়ে কি এই ঝড়জলের হাত থেকে সে রেহাই পাবে! দিদিকে যে একটা ফোন করবে তারও উপায় নেই। বাসে উঠেই মোবাইলে মজার মিম দেখতে দেখতে সব চার্জ ফুরিয়ে গেছে। আর সে যদি আজ না যায় তা হলে তার দিদি খুব চিন্তা করবে। অগত্যা…
বাস থেকে নামতেই বিদ্যুৎ চমকালো আকাশে। আর তাতেই সে দেখল, সামনেই একটা বিশাল পোড়োবাড়ি। ভাঙাচোরা। কত শতাব্দী ধরে এখানে যে দাঁড়িয়ে আছে কে জানে! তাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এর আগে সে বহু বার এখানে এসেছে। কিন্তু এই বাড়িটাকে সে দেখেছে বলে মনে করতে পারল না। তবু অতশত না ভেবে, শুধুমাত্র বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচানোর জন্যই এক দৌড়ে সে ঢুকে পড়ল ওই বাড়িতে। বিদ্যুৎ আলোয় সে দেখল আশপাশের দেওয়ালের ইটগুলো যেন তাকে দেখে দাঁত বের করে হাসছে।
আকাশ ফাটিয়ে তখন ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। তুমুল ঝড়ে ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে সব। ও দেখল, সেই দমকা ঝড়ের বারংবার ঝাপটায়, যে ফটক দিয়ে ও ঢুকেছে, তার দু’দিকের দুটো বিশাল বিশাল গ্রিলের নকশাদার কপাট ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল।
অন্ধকারে চোখ সয়ে যাওয়ায় বজ্রবিদ্যুতের একঝলক আলোয় প্রবাল স্পষ্ট দেখল, কোথা থেকে একটা মোটা লোহার শেকল ময়াল সাপের মতো এঁকেবেঁকে এসে সেই দরজাটাকে এমন ভাবে পেঁচিয়ে নিল, যেন এক্ষুনি তালা লাগাবে কেউ।
সে তখন ঠান্ডায় কাঁপছে। না ঠান্ডায় নয়, ভয়ে। সেই কাঁপুনি আরও বেড়ে গেল যখন দেখল, বলা নেই কওয়া নেই, ওপরের সিলিং থেকে হঠাৎ ঝপ করে একটা মোটা দড়ি তার মুখের সামনে এসে পড়ল। ভয়ে পিছন দিকে ছিটকে যেতেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেল তার। আর তখনই মনে হল, কেউ যেন তাকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে ফের পাঠিয়ে দিল দড়িটার কাছে।
দড়িটাকে ভাল করে দেখতেই প্রবাল বুঝতে পারল, এটা এমনি কোনও দড়ি নয়, ফাঁস লাগানো দড়ি।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফাঁসটা ঝপ করে তার মাথার ওপর দিয়ে গলে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল তার গলা। দু’হাত দিয়ে টেনে যতই সেটা ছাড়াবার চেষ্টা করতে লাগল সে, ততই যেন জেঁকে বসতে লাগল গলায়। দম বন্ধ হয়ে এল তার। চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল। আর সেই অন্ধকারের মধ্যেই ও শুনতে পেল, হিঁ হিঁ করে একটা বিদঘুটে হাসি। কে হাসছে? ওই শোচনীয় অবস্থার মধ্যেও ওপরের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখে, কড়িবরগার সিলিংয়ের এ দিকে ও দিকে সে দিকে ব্যাঙের মতো ওত পেতে বসে আছে কতকগুলো কদাকার কিম্ভুত চেহারা। ওদের দিকে তাকাতেই ওরা হিঁ হিঁ, হেঁ হেঁ হোঁ হোঁ, করতে করতে একের পর এক ঝুপঝাপ লাফ দিয়ে নেমে এল ওর পায়ের সামনে।
ওরা কাছে আসতেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল কী বীভৎস বিচ্ছিরি একটা গন্ধ। নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। তার অবস্থা দেখে ওরা তখন মহানন্দে নেত্য করতে লাগল। সে কী অদ্ভুত নাচ তাদের…
মামা গল্প বলছে। বিছানার চাদর আর পাতলা কাঁথায় মুড়ি দিয়ে জড়সড় হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই গল্প শুনছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী। বেশ কিছুক্ষণ হল ঝড়জল থেমে গেছে। ওরা খেয়ালই করেনি, কখন থেকে তাদের বাবা দরজা ধাক্কাচ্ছেন। ওদের নাম ধরে ডাকছেন। লক্ষ্মী দরজা খুলতে যাচ্ছিল, ওদের মামাই বলল, দাঁড়া, আমি খুলছি।
দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকলেন ওদের বাবা। বললেন, কী রে, কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাসনি?
সরস্বতী বলল, মামা গল্প বলছিল তো, তাই হয়তো শুনতে পাইনি।
— মামা! কোন মামা?
লক্ষ্মী বলল, কেন? আমাদের ক’টা মামা?
— মামাই তো দরজা খুলে দিল। তুমি দেখোনি? কার্তিক বলতেই, পিছন ফিরে তাকালেন ওদের বাবা। — কী বলছিস তোরা? তোদের মামা? তোদের মামা তো মারা গেছে। বাসস্ট্যান্ডের কাছে যে পাকুড় গাছটা আছে, যেটাকে সবাই এড়িয়ে চলে, সবাই বলে না… প্রতি বছর এ রকম দুর্যোগের দিনে, যখন কেউ ভুল করেও ও দিকে পা মাড়ায় না, তখন কেউ না কেউ ওই গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে, সেই গাছে আজ দুপুরে নাকি গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছে তোদের মামা। আমাকে তো তোদের ন’কাকা খবর দিল। এসে দেখি, সত্যিই তাই। লোকে-লোকারণ্য। এই তো একটু আগেই, থানা থেকে পুলিশ এসে বডি নামিয়ে নিয়ে গেল… আমি তো এতক্ষণ ওখানেই ছিলাম। না হলে কখন চলে আসতাম…
— মামা মারা গেছে! আঁতকে উঠল চার ভাইবোনই। তা হলে যে এতক্ষণ তাদেরকে ভূতের গল্প শোনাচ্ছিল, বাবা এসেছে দেখে এইমাত্র দরজা খুলতে উঠে গেল, সে কে? ওরা দরজার দিকে তাকাল। দেখল, দরজাটা হাট করে খোলা। মামা তো দূরের কথা, মামার ছায়াও দেখা গেল না।
পাকুড় গাছ ভৌতিক গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
শ্রাবণ সন্ধ্যা
শাস্তি
তিতির কান্না