কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » রহস্যগল্প » ক্ষতবিক্ষত ছায়াপথ

ক্ষতবিক্ষত ছায়াপথ

ক্ষতবিক্ষত ছায়াপথ রহস্যগল্প –

একঃ – প্রেক্ষাপট —আমার বাড়ির ছাদ থেকে ~
পূর্ণিমার চাঁদটাকে দেখছিলাম। স্নিগ্ধতার আবেশে মন ভরে যাচ্ছিলো। শীতলতার ছোঁয়া শরীরে – নীলাকাশে শুভ্র গোলাকার! রাত এগারোটা হবে — আচমকা নাম ধরে ডাকা নারী কন্ঠস্বর —
— কি করছো একা একা?

চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি মারিয়া
— আরে তুমি কখন এলে?

— এইতো এখনি।

হঠাৎই আমার খেয়াল হলো নীচের সদর দরজা তো বন্ধ।
— কিন্তু নীচেতো সব বন্ধ?

— কোথায় সদর দরজা তো হাট করে খোলা!
মারিয়া আমার ঘনিষ্ঠ হতে চাইলো। ওর গা থেকে মিষ্টি সুবাস আমার নাসারন্ধে প্রবেশ করে আমার স্নায়ু গুলোকে সতেজ করে তুলছে।আমি ওর কাছে আসাকে প্রাধান্য দিলাম। একটা সুন্দর আকর্ষণ আছে মারিয়ার। লম্বা ছিমছাম শরীর। কালো আর বাদামি মেশানো রঙের শাড়ি , টানটান চুলে পিঠ ঢাকা আর সামনের ব্লাউজে আঁটা বুক অনেকটাই খোলা। আমি ওকে দেখছি আর হাসছি — বাঃ বেশ!
ও হাসলো। হঠাৎই আমি চমকে উঠে দেখি ওর টানটান চুলের ডগা দিয়ে রক্তের এক ক্ষীণ ধারা ছাদে পড়ছে।
— আরে মারিয়া এ রক্ত কোথা দিয়ে আসছে?

— ওঃ কিছু না। তুমি ভেবো না ওটা একটু ……

— দেখলাম মারিয়া আমাকে বলতে চাইছে না। উপরন্তু আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলে —
— তোমরা পুরুষেরা এত ভীতু কেন বলতো?

— আরে এটা কোন উত্তর হলো।
আমি উত্তেজিত। আর মারিয়া যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব দেখিয়ে আমার মাথার চুলে হাত দিয়ে এদিক ওদিক করে ঘেঁটে দিল।

— তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। ওনেক কিছু বলার আছে।

— কি বলো —

— না আজ অনেক রাত হয়ে গেল। আজ থাক। অন্য একদিন বলবো। আজ ফিরে যেতে হবে। চলি –বলে মারিয়া সিড়ি দিয়ে হনহন করে নেমে গেল। আমি পরিস্কার দেখলাম ওর পিঠে একটা বড় ক্ষত আর তা থেকেই ওই রক্তপাত হচ্ছে। জোরে ওকে ডাকলাম, ও কিন্তু ততোধিক জোরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। অগত্যা আমি ছাদের প্যারাপিড ধরে নীচে তাকিয়ে দেখলাম মারিয়া রাস্তা ধরে এগিয়ে গেল -মোড়মাথার দিকে।

দুইঃ – প্রেক্ষাপট —-নিমতলা ঘাট সংলগ্ন অঞ্চলে ~
বাগবাজার থেকে হেঁটে এলাম এই নিমতলায়। হাঁটার জন্যই হাঁটা। বিকেল শেষ হয়ে সূর্যাস্ত দেখেছি আহিরীটোলা ঘাটে। তারপরে আবার হেঁটে এই নিমতলার ঘাটে। ভুতনাথ মন্দিরের কাছেই অয়নের সঙ্গে দেখা। এই বয়সেই পান চিবিয়ে চিবিয়ে দাঁতগুলোকে কালো কয়লায় রুপান্ত‌রিত করে ছেড়েছেন। বয়স সাতান্ন হতে পারে। কালো মাথার চুল আরো কালো হয়ে শুস্ক হয়ে উর্দ্ধগামী।
চোখ দুটিতে এক গভীর রহস্য, প্রলেপ মাখানো। লোকটির ব্যবহার বড়ই মধুর। অনেকে বলে দেখতে খারাপ হলেও মানুষ খারাপ হয় না – এই কথাটি এক্ষেত্রে সর্বৈব মিথ্যা।

আমার কাঁধে ধাক্কা মেরে মুখ খুললে —
— আবে, কোথায় চললি বে -?

— খেপ মারতে —

হাঃ হাঃ করে হেসে সামনে চলে এল অয়ন।
— বল কেমন আছিস? কটা মেয়েকে লটকালি?

— তুই এখন একটুও বদলাস নি? তুই কটাকে ছাড়লি?
আমি টোকা মারলাম

হোহো করে গেসে উঠলো অয়ন —
— ভালো কথা মনে করিয়ে দিলি। গত পরশু এক‌টি সুন্দরীকে একদম উপড়ে ছেড়ে এলাম।

দুটি ঘুমের চোখ নাচিয়ে, নদীকে স্যালুট জানিয়ে ও বেশ বেগে চক্রের লাইনে নেমে গেল।

আমি ভয়ে চিন্তায় পড়লাম। ওর প্রস্থানরত শরীরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

তিনঃ – প্রেক্ষাপট —-
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ~
ফ্লাইট ঘন্টা খানেক পরে। লাউঞ্জের চেয়ারে বসে আছি। সিগারেটের নেশা পেয়ে বসেছে – মাথাটা ঝিমঝিম করছে এমন সময় একটা সুন্দর গন্ধমাখা ওড়না আমার মুখের সামনে উড়ে এল -ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি এক মহিলার সালোয়ারের বুকের ওড়নার ঝাপটা – সম্ভবত অসাবধানতাবশত হবে। মুখ অন্যদিকে সরালাম।

— কি গন্ধ পেয়েও চিনতে পারলে না আমায় ?

মুখ ফেরাতেই ফর্সা দীর্ঘাঙ্গী সুশ্রী মহিলা ওড়না গলায় জড়িয়ে — সুন্দর দাঁত বের করে হাসলে —
— আমি রামিলা।

— ওহঃ রামিলা? মানে রামিলা খাতুন?

ও মুচকি হাসলো। আমি ওর ঘনিষ্ঠ হতে চাইলাম। কি মিষ্টি মেয়ে। সুন্দরী আবার সেক্সী। ওর গায়ে একটা লোভনীয় গন্ধ আছে যেটা ও আমাকে আগেই শুকিয়েছে। ও আমাকে একটু প্রাধান্য দেয় – কেন জানি না। ও চায় আমি ওকে ছুঁই। প্রেম ঠিক না অনেকটা ছোঁয়াছুঁয়ির খেলা আরকি! দু দুবার আমি ওর ফাঁদে পা দিয়েছি -সত্যিই লোভনীয়।

— তা এখন চললে কোথায়? নতুন মুরগি ধরতে?

— তা ঠিকই বলেছো। যাবো নিউ জার্সি। জানোতো নিত্যনতুনের মজাই আলাদা। তারপর মালকড়ির ব্যাপারটাও থাকে। এবারে আলাদা একটা ব্যাপারও আছে। দুদিন পরে সব জানবে।

রামিলা হাসলো। কাছে চলে এল। যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো লোকভর্তি লাউঞ্জে আমায় চুমু খেয়ে নিল — তবে বাঁচোয়া এই যে সেটা ঠোঁটে নয় কানের নিচে।

এনায়ুন্স হতেই রামিলা উঠে গেল বাসে, ফ্লাইটের জন্য।

চারঃ – প্রেক্ষাপট —-হায়দরাবাদ পিঙ্ক সিটি ~
ঠিক দুদিনের কাজ ছিল। আজ শেষদিন। কালকের ফ্লাইটে কলকাতা ফিরবো। আমি যেখানে আছি সেটা মূল শহরের অনেকটাই ভিতরে। ফ্ল্যাট সংলগ্ন বসত অঞ্চল। অনেক চাকুরিজীবীর আশ্রয়স্থল। আমি সেইরকম একজনের ফ্ল্যাটে ছিলাম। আমার সহকর্মী রাতুল। ওর কাছে আজ ওর এক বান্ধবী দেখা করতে এল। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন এক ঝলক আলো ঘরে ঢুকে এলো।
আমার চোখও সেই আলো খেলো – চেনা বলে মনে হলো।

মেয়েটি হঠাৎই রাতুলকে কি একটা ইংগিত করে বেড়িয়ে যেতে উদ্যত হল। আমি ও ছাড়বার পাত্র নয় – দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম আর চিৎকার করে বললাম —
— তনিমা চলে যাচ্ছো কেন? আমি আছি বলে?

তনিমা ধরা পড়ে গেল। লজ্জাবতী লতার মত বেগুনী শাড়িতে অধোবদন হয়ে রইলো। ববকাট চুলে সাস্থবতী বিবাহিত তনিমা হাসলো — যেই মে কিনা একদিন আমার প্রেমে পাগল ছিল। বাড়িতে আমায় পছন্দ করেনি। ওর বিয়ে হয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। আজ আমাকে দেখে পালাচ্ছে। কি দুনিয়া?

তনিমা এবার লজ্জার মাথা খেয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে আমার পায়ে হাত দিতে গেল। আমি সরে গিয়ে ওকে থামালাম।
— এসব কি হচ্ছে?

— না অনেকদিন পর দেখা তাই —

— তা বলে —

— কলকাতা থেকে কবে এলেন?

— এইতো দুদিন?

— তাহলে আপনি খবরটা শোনেননি?

— কোন খবর?

— সেকি? আমার প্রিয় বন্ধু মারিয়ার মৃত্যু সংবাদ?

— মৃত্যু?

— না মার্ডার!

আমি যেন ইলেকট্রিক শক খেলাম। বোকা লাগলো নিজেকে। দুদিন আগে যখন রাতে মারিয়া আমার বাড়ি এল আর আমি রক্ত সহ ক্ষত দেখলাম তখনই আমার সন্দেহ হওয়া উচিৎ ছিল ওকে আটকানো দরকার ছিল। আমি ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু দরজা বন্ধ ছিল ও এলোই বা কি করে?
আমি পাগল হয়ে যাবো এবার? মারিয়া নেই? এ কেস অফ মার্ডার?
ভাবার মধ্যেই ছিলাম কখন তনিমা চলে গেছে খেয়াল করিনি। আসলে প্রথমে থেকেই ও আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। হয়তো স্বামী সন্তানের ভয়ে অথবা আমার ভয়ে, যদি আমি পুরোনো কথা তুলে ওকে বিমোহিত করি।

পাঁচঃ – প্রেক্ষাপট ~ লালবাজার থানা ~
বেশকয়েক দিন হয়ে গেছে লোকাল থানা আমায় না পেয়ে লালবাজারে আমাকে যেতে বলে গেছে।
কাকা খবর দিল। সেই মত হাজিরা দিলাম।

জাঁদরেল অফিসার নানান কৌশলে আমাকে অনেক প্রশ্ন করলো।
কতদিনের পরিচয়? প্রেম কেমন? শারীরিক সম্পর্ক কতখানি –ইত্যাদি প্রভৃতি।
আমিও কায়দা করে অতি সাবধানে উত্তর দিলাম।
কিন্তু শেষ প্রশ্ন টায় আমি পুরো ধরাশায়ী হয়ে গেলাম —

— আপনি মারিয়া কে মারলেন কেন?

প্রমান করার দায় একটা বড় বিষয়। নিজেকে ভাল বলা নিজে ঠিক প্রমান করা বেশ কষ্টের। আমি দেখেছি অনেকেই ভীষণ কষ্ট করে এই চেষ্টা করতে পাগল হয়ে যায়। আমি এ রাস্তা মারাবো না -তাতে যা হবার হোক।

অফিসার আর কয়েকজন কি সব কথাবার্তা আলোচনা করছিল কিন্তু আমার কানে সে সব কিছুই ঢূকলো না।
বেরিয়ে পরলাম।

ছয়ঃ – প্রেক্ষাপট ~ ময়দান —
নিজেকে হালকা করতে ফাঁকা স্থানে চলে এলাম। সবুজ বিছানো ঘাসের উপর বসে পড়লাম। বেশ ভালো লাগছিলো। বিকালের শেষ ভাগ। বেশ রোমান্টিক আবহাওয়া! চোখ জুড়ে এল।

ঘুমিয়ে পড়েছি। কে যেন কান ধরে টান মারলো। সটান দাঁড়িয়ে পড়লাম। দেখি সুনন্দ দাঁড়িয়ে হাসছে আর পাশে ওর প্রেমিকা রতি ও হাসছে।

  • কিরে এখানে একা একা কি করছিস?

— দোকা নেই তাই।

— তুই কাউকে সহ্য করতে পারিস?

— কেন এরকম বলছিস?

— তাহ‌লে কি মারিয়াকে ….?

আমি প্রশ্ন করার সুযোগ পেলাম না। রতি এক হ্যাচকা টান মেরে সুনন্দ কে টেনে নিল। সুনন্দ আরো রেগে গেল ।আমাকে খিস্তি দিল —
— তুই একটা হারামী। শুধু ক্ষীর খাবি না? ভোগ করে খালাস করে দিলি?

হঠাৎ আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল,ঠাটিয়ে একটা চড় কষিয়ে দিলাম। রতি ওকে ধরে নিল। রতি এতটাই রেগে গেল যে মুখ থেকে এক নাদা থুতু আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে খিস্তি মারলো —
— মেয়েরা তোর খেলার পুতুল না শুয়োরের বাচ্ছা।

সুনন্দ আমার দিকে তেড়ে মারতে এলো। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।
পিছন থেকে জামার তলা তুলে ছুঁড়িটা বার করে ওর পেটে ঘুরিয়ে দিলাম। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হল আর ও ধমাশ করে মাটিতে পড়ে গেল।

আমি হো-হো করে হাসলাম। রতি ক্রোধান্বিত হয়ে
একনিমিষে সুনন্দ’র পেট থেকে ছুঁরিটা বার করে আমি কিছু বোঝার আগেই ফেলে দেওয়ার অছিলায় আমার পেটে চালিয়ে দিল। আমি আর্তনাদ করে উঠলাম। রতি হাতটা পেটে চেপে রেখে দিল যাতে আমি ছুঁরিটা বার করতে না পারি। রক্তে আমার নিন্মাঙগ ভেসে গেল আর যন্ত্রনা সহ্য করতে পারলাম না – কাতরে মাটিতে পড়ে গেলাম।
রতির রুদ্র হাসির কলরব সন্ধ্যার আঁধারিতে মুখরিত হয়ে আমার শেষ শ্রবণ‌যোগ্য শব্দ হয়ে রইলো।

সাতঃ – প্রেক্ষাপট ~ অচেনা অজানা গোলোকে ~
মারিয়া অপেক্ষায় ছিল। কয়েকদিনের ব্যবধানে আমি সাড়া দিলাম। সবই ভবিতব্য। আমি উঠে দাঁড়াতেই ও আমার হাতটা ধরে টেনে নিল। শীতল হাতের স্পর্শ পেলাম। যন্ত্রনা,রক্তপাত, মরণোত্তর এই আবেশ, এই মুক্তি শীতল শান্ত করে দিল।

— কেমন লাগছে বলো, আর কোন কষ্ট আছে?

— মৃত্যুর পর আর কিসের যন্ত্রনা?

মারিয়া মৃদু হেসে পাশে এসে বসলো। আমি ওকে ছুঁতে পারি।
— কোথা দিয়ে কি যে হলো কিছু বুঝলাম না। যেন একটা স্বপ্ন।

মারিয়া জানালো- – আমি তো সেই রাতেই সব বলার জন্য তোমার কাছে তোমার ছাদে গেছিলাম।
কিন্ত তোমায় বিব্রত করতে চাইনি। তবে তুমি কিছুটা ঠিকই আঁচ করেছিলে যখন আমার পিঠে ছুরির আঘাতে ক্ষত দেখে ফেলেছিলে — আমি পালিয়ে এসেছিলাম। তুমি জিজ্ঞাসা করেছিলে আমি কিভাবে বাড়িতে প্রবেশ করলাম যখন সদর দরজা বন্ধ। বলতে পারিনি যে মৃতের কাছে দরজার প্রয়োজন থাকে না।

আমি নিশ্চুপ। শুনতে চাই।

— জানো কে আমায় মেরেছে? অয়ন। অয়ন সম্মাদার। তোমার আমার ভালোবাসার কথা ও জানতো। ও আমাকেও চাইতো। ভালোবসে নয় আমার শরীরের লোভে। একদিন তনিমা আমায় ফোন করে আহিরীতোলায় ওর বাড়িতে ডাকে।
আমি পৌছুলে ও আমাকে খাতির করে।

আমি অবাক — কিন্তু আমিতো ওকে হায়দরাবাদে দেখে এলাম। এখানে কি করে?

— হ্যাঁ হ্যাঁ। ঠিকই ও বাপেরবাড়ি এসেছিল। তারপর পালিয়ে যায় ওর স্বামীর কর্মস্থলে। পালিয়ে যায় অয়ন আমায় মেরে ফেলার পর, ভয়ে।

— তুমি সব বলো মারিয়া। আমায় সব জানতেই হবে। পুলিশ আমাকে সন্দেহ করেছিল। সুনন্দ জানে আমিই তোমাকে মেরেছি। সে সেই রাগেই আমায় খিস্তি দিচ্ছিল আর আমি রেগে ওর পেটে ছুরি চালাই। রতি খুব চালাক মেয়ে সেই ছুরি দিয়েই আমায় আঘাত করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরিটা আমার পেটে চেপে ধরে রেখে দেয়।

— একদিক দিয়ে ভালো হলো আমাদের মিলন হলো। তারপর শোনো তনিমার কথামত ওর বাড়ি গেলাম। ওখান থেকে গঙ্গার ঘাটে বেড়াতে গিয়ে বুঝলাম তনিমা আমাকে প্ল্যান করে এখানে এনেছে কারণ ওখান অয়ন ছিল।

তনিমা আমাকে বললে — তুই শান্তনু কে ছেড়ে দে।ও মোটেই ভাল ছেলে নয়। ও আমাকেও ভালবাসার নামে ফাঁসিয়েছিল কিন্তু বিয়ে করেনি।

আমি শান্তনু, আর চুপ করে থাকতে না পেরে মারিয়াকে বললাম — কিন্তু তানিয়ার বাড়ি থেকেই তো আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। আমি তো রাজীই ছিলাম। ও এতবড় মিথ্যা কথা বললো।

একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বললাম — যাকগে তারপর বলো মারিয়া কি হয়েছিল?

অয়ন আমাকে টেনে নিয়ে গঙ্গার ধারে নির্জন সিঁড়িতে নিয়ে যায়। জাপটে ধরে নোংরামি শুরু করে দেয়। আমি নাকি ওর লোভের বস্তু। আমার শরীর ও চায়। অন্ততঃ একবার। আমি কিংকতব্যবিমূড় হয়ে পড়ি। দেখি সামনে দাঁড়িয়ে আছে রামিলা। বেশ্যা রামিলা । ও আমায় ওর ব্যবসায় নিতে চায়। পুরো ব্যাপারখানা আমার কাছে পরিস্কার হয়ে যায় তার মানে অয়ন আর তানিয়া দুজনে মিলে আমাকে রামিলার কাছে বিক্রি করে দিতে চায়। ওরা দুজনে রামিলাকে মেয়ে সাপ্লাই করে। অয়ন মেয়ে তোলে প্রেমের লোভ দেখিয়ে। তানিয়া তার বন্ধুদের অয়নের সঙ্গে বন্ধু করিয়ে দেয়।অয়ন প্রেমের নামে মেয়েটিকে ভোগ করে তারপর মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে রামিলা তাকে বাঁচানোর অজুহাতে কিনে নেয় এবং তাকে তার দেহ ব্যবসার কাজে লাগায়। প্রচুর মুনাফা এই লাইনে। মেয়েদের অসহয়তার পুরো সুযোগ নেয় এরা তিনজন। আমি রামিলার ব্যাপার জানতাম, কিন্তু আমার বন্ধু তানিয়া আর অয়ন যে ওর সাথে যুক্ত এটা জানতাম না। জানলে আমি এই ঝুঁকি নিতাম না। তাই আমি সময় নষ্ট না করে অয়নের ওন্ডকোষে সজোরে এক লাথি মারি। ও যন্ত্রনায় কাতরে পড়ে যায়। আমি সেই সুযোগে ভয়ে পালাতে যাই। কিন্তু তনিমা আমাকে চেপে ধরে রাখে, পুলিশের ভয় দেখায়, আমি নাকি অয়নকে মেরে ফেলেছি। আমিও ভয় পেয়ে গেছিলাম। বাঁচতে চিৎকার করে উঠি। ভয় দেখাই আমি ওদের কথা পুলিশের কাছে বলে দেবো। ওরা দুজন তখন মরিয়া হয়ে আমাকে ঘিরে ধরে। অনেক চেষ্টা করেও তনিমার হাত থেকে ছাড় পাই না। অয়ন ততোক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে উঠে দাঁড়ায়। রাগে অপমানে জ্বলছিল ওর দুটি চোখ। আমি পালাবার আপ্রাণ চেষ্টা করি আর এই সুযোগে অয়ন এসে আমার পিঠে গুলি করে। আমি -আমি যন্ত্রনা পেয়ে লুটিয়ে পড়ি।

মারিয়ার চোখে যেন জলধারা এখনও অম্লান। আমি ওকে তুলে ধরি নিজের বুকে। পিঠে হাত দিয়ে দেখি ক্ষতটা অনেকটাই শুকিয়ে গেছে।

ক্ষতবিক্ষত ছায়াপথ রহস্যগল্প – সমাপ্তি

যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন| এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!