কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

আশ্রমিক

আশ্রমিক ছোট গল্প - ঋভু চট্টোপাধ্যায় ফোনটা নিয়ে যাওনা কেন ? কতগুলো ফোন এল।

আশ্রমিক ছোট গল্প – ঋভু চট্টোপাধ্যায়

-ফোনটা নিয়ে যাওনা কেন ? কতগুলো ফোন এল।আমাকে রান্না করতে করতে বারবার এঘরে আসতে হচ্ছে।

কথাগুলো সোমা একশ্বাসে বলে গেলেও যাকে বলল মানে ঋষি এক্কেবারে নির্বিকার ভাবে জিজ্ঞেস করে,’অনেকগুলো ফোন  এসেছিল? কে কে করেছিল?’

-কে কে না একজনই অনেকবার করেছিল। আমি শেষ বারেই ফোনটা ধরতে পেরেছিলাম। আর তোমার ফোন মানে সেই আঁতেল গোষ্ঠীর কেউ। ফোন করা মানেই তো কোথাও অনুষ্ঠান বা এই রকমের কিছু। শুভেন্দু বলে কেউ একজন ফোন করেছিল।নাম্বারটা সেভ নেই।

 ‘শুভেন্দুর নম্বর সেভ নেই ?’ ঋষি কথাগুলো শুনে গেলেও কোন উত্তর না দিয়ে ফোন নাম্বারটাতে ডায়াল করল।উল্টো দিকে শুভেন্দুর গলা পেল।তারমানে অন্য নাম্বার থেকে ফোন করেছিল।

শুভেন্দু ঋষির মতই এই অঞ্চলে কবি হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। ঋষির মতই কোন ঝামেলাতে থাকেনা।সব থেকে যেটা ভালো ছেলেটা পড়াশোনা করে, বাইরের সাহিত্য সম্পর্কে বেশ ভালো পড়ছে।এই সময়েও ঋষিকে মাঝে মাঝেই ফোন করে বিভিন্ন রকমের সাহিত্য সম্পর্কে দুজনায় আলোচনা করে। আগে মাসে একবার বা দু’বার দুজন একসাথে কোন একটা জায়গায় বসে আলোচনা করত ।এবারেই বিভিন্ন কারণে বসা হয় নি। তবে নিয়মিত ফোন হয়েছে।

সেদিনও ফোনে কথা বলবার সময় অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে এই ফোনটাই তো ঋষিদের  ভরসা। অবশ্য এখন চারদিকে লাইভের যুগ। ঋষি এই সামাজিক মাধ্যমে খুব একটা না থাকলেও মাঝেমাঝে দেখতে পায়,’আজ লাইভে থাকবেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক….’

মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড়, দুদিন লিখলেই এখন সবাই বিশিষ্ট সাহিত্যিক হয়ে যাচ্ছে। ঋষি এই বিষয়ে কাউকেই কিছু বলে না।এমনকি শুভেন্দুকেও না।

সেদিনও শুভেন্দু জিজ্ঞেস করে,’মতি দা বা সুদেব তোমাকে কোন দিন লাইভে থাকতে বলেনি?’

–আমাকে! কেন বলবে, আমি তো আর বিশিষ্ট সাহিত্যিক নয়, আর বললেও আমি থাকব কেন ? ঐ সব লাইভে থাকলেই আমার লাইফে চুলকানি আরম্ভ হয়ে যায়। একঘন্টা নিজের ফোনের চার্জ  ও ব্যালেন্স নষ্ট করে ভাট বকা এক্কেবারে ভালো লাগে না। ঐ সময়টা পড়াশোনা করলে নিজের উপকার হবে।

”মতিদারা তাদের ‘শব্দ সংখ্যা’ পত্রিকাটি অনলাইনে বের করছে।প্রতিদিন কবিতা প্রকাশ করছে।আমার লেখাও দুদিন প্রকাশ করল। তোমাকে বলেনি ?”

-না।

–তোমাকে বলল না কেন ?

কয়েকদিন আগেই মতিদা হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ পাঠিয়ে তার নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন করে কেনার অনুরোধ করেছে। সঙ্গে আবার তার নতুন ব্যবসা শৈলি, ‘ভাই তোমার জন্য পনেরো পার্সেন্ট দেবো, অন্যদের দশ দিচ্ছি।’

এই কথাগুলো অবশ্য শুভেন্দুকে বলে না। একটু মজা করেই উত্তর দেয়, “আমাকে দেখতে খারাপ।কবিদের ভালো দেখতে না হলে তাদের কবিতা মতিদাদের পত্রিকাতে থাকবে না।এটা মতিদাদের পত্রিকার নিজস্ব মত।ঠিক যেমন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় একবার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘শিক্ষিত না হলে সত্যজিৎ রায় সিনেমাতে নেন না।’ আসলে মতিদারা ওদের পত্রিকাকে একটা আশ্রম বলে।ওরা সবাই আশ্রমিক।এখন আমার তো যপ তপ কিছুই নেই, তাই আউট।”

ঋষির শেষের কথাগুলো শুনে দুজনেই হেসে ওঠে।

ঋষি ফোন ছেড়ে লিখতে বসে।এই সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। প্রাইভেট কলেজ, বলেই দিয়েছে হাফ পেমেন্ট দেবে।যে কয়েকটাতে পার্টটাইম ক্লাস করে তারাও ক্লাস বন্ধ রেখেছে। ওদের ওখানে ক্লাস পিছু পাঁচশ টাকা করে পাওয়া যায়। রবি আর সোম প্রাইভেট কলেজে ছুটি। এই দুদিন অন্য এক ওপেন ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে যায়। তাছাড়া কয়েকটা টিউসন আছে।এই কয়েকমাস হল ঋষি লিখেও কিছু টাকা পাচ্ছে। কয়েকটা অন লাইন পত্রিকাতে ঋষির নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়।ঋষির নাম লেখার জগতে এই শহর ছাড়িয়েও মোটামুটি অনেকে জানে। কিন্তু তার নিজের শহরের কোন অনুষ্ঠানে ঋষি খুব একটা যায় না।

শুভেন্দুর সাথে কথা শেষ করে ঋষি লিখতে বসে। বেশ কয়েকটা পত্রিকাতে লেখা পাঠাতে হবে। কিছু টাকা পাবার একটা আশা আছে। তাও আবার দুটো পত্রিকা আগের থেকে জানিয়ে দিয়েছে,’এবার কিন্তু আপনাকে কোন টাকা দিতে পারব না। আমাদের পত্রিকার অবস্থা খুব খারাপ। বিক্রি সে রকম হচ্ছে না, তার উপর বিজ্ঞাপনও পাচ্ছি না।’

ঋষি কিছু বলেনি। লেখা পাঠিয়ে দিয়েছে।

লিখতে বসেও ঠিক মন দিতে পারল না। মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে মতিদার একটা পুরানো মেসেজে চোখ গেল, দুবছর আগের মেসেজ। এমনিতে কোন দরকার না হলে তো মেসেজ পাঠায় না। এখনো যে অক্ষত আছে এটাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।ঋষি অনেক দিন থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে মিডিয়া ভিসিবিলিটি ‘নো’ করে রাখে। একটা ই-কার্ড পাঠিয়েছিল। কোন নাম নেই শুধু প্রিয় কবি বন্ধু লেখা আছে।ঋষি চোখদুটো বন্ধ করতেই সেই অনুষ্ঠানের কথাগুলো মন থেকে চোখের সামনে ভেসে বেড়াতে আরম্ভ করে।

                                                  ২

(বছর দুই আগে)

রবিবারের সকাল।সকাল থেকেই ঋষি একটু ব্যস্ত।অন্য রবিবার ঋষির ব্যস্ততা আরেকটু বেশি থাকে।সকালেই তিনটে ব্যাচ পড়ানো হয়।তার মাঝে দোকান, বাজার ও মাংস আনতে যায়।রবিবার মানেই মাংস, দুএকবার এদিক ওদিক হয়।এটা তাদের পরিবারে একটা নিয়ম  হয়ে গেছে।মাসের শেষে অল্প একটু হলেও বা খাসি ছেড়ে চিকেন হলেও মাংসটা হবেই। আসলে রবিবার মাংস হলে সোমবারের তরকারির ঝামেলা করতে হয় না। সকাল আটটার মধ্যে সব কিছু সামলে ব্যাচ আরম্ভ করতে হয়, এক্কেবারে টানা দেড়টা পর্যন্ত। মাঝে টিফিন খাওয়ার আধ ঘন্টার বিরতি।

আজ পড়ানো নেই।মতিদা সকাল নটার মধ্যে প্রাঙ্গণ মঞ্চে পৌঁছাতে বলেছে।দুদিন আগেও ফোন করে বলে,’ঋষি, তোমাকে কিন্তু একটু আগেই আসতে হবে।সবই তো বুঝছ, কলকাতা থেকে সব বড় বড় কবিরা আসবেন।এখানে আমি আর সুদেব। সব কিছু তোমরা না দেখলে আর কে দেখবে বল আর তুমি পুজো সংখ্যাটা কেনার জন্যে আমাকে ঐ দিন কিছু টাকা অ্যাডভান্স করে দেবে।তোমার ঐ টাকাটাও সেদিন নেব।’

ঋষি এখন আর মুখে কিছু বলে না।শুভেন্দু এই কথাগুলো শুনলে বলে ওঠে,’কি আর করবে, সবার সাথে তো থাকতে হবে।না হলে এক্কেবারে বনে বাস করতে হবে।’

এটা ঠিক।ঋষি এখন এই কথাগুলোই ভাবে।মতিদা একমাস আগেই এক সন্ধেবেলা ফোন করে এই কবিতার অনুষ্ঠানের কথা বলে।ঋষি অবশ্য মতিদার ফোন আসার পর থেকেই অপেক্ষা করতে আরম্ভ করেছিল এই বুঝি টাকার জন্যে বলবে।নিজের টাকায় কলকাতার কোন প্রকাশনা সংস্থা থেকে বই প্রকাশ করে জনে জনে ফোন করে একটার জায়গায় দুটো বই কেনবার অনুরোধ করেছে। কার কাছে যেন বলেওছে, ‘যা বই লিখলাম, ঠিক মত মূল্যায়ন হলে এটার জন্যেই আমার নোবেল পুরস্কার দিত। কিন্তু আমার ভাগ্য খারাপ, সেই সঙ্গে পাঠক ও সমালোচকদের মেরিটও এখন অনেক কম। তবে পাঠক আমাকে ঠিক চিনেছে দ্যাখো, আমার বই কিন্তু এবার তৃতীয় দফায় রিপ্রিন্ট হচ্ছে।’ তারপরেই বলে, ‘এত বড় একটা অনুষ্ঠান করছি, তুমি কিন্তু ভাই কিছু টাকা দিও।’

–মোতি একটা চারঅক্ষরের বোকা ছেলে। ওকে ওর গুরু মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে দিচ্ছে, আর ও নেচে বেড়াচ্ছে। আরে বাবা তোর বইয়ের যদি এতটাই মেরিট থাকে তবে পাবলিসার্স পাচ্ছিস না কেন? কেন নিজের টাকায় ছাপাতে হচ্ছে?

সুমিতেশদার বলা কথাগুলো মনে পড়তেই ঋষি নিজের মনেই হেসে ওঠে। মতিদা অবশ্য এভাবে পুশ সেলের ভিতরে একটা গর্ব অনুভব করে। জোর করে বই কেনা করানোর সাথে এখন আবার কবি সম্মেলনের জন্যেও টাকা নিচ্ছে। ঋষিকে যেমন সোজাসুজিই টাকার কথা বলে। ঋষি কোন বিরোধে না গিয়ে উত্তরে বলে,’ঠিক আছে আমি দেবো।’

অনুষ্ঠানের দিন ঋষি সকাল নটার মধ্যে পৌঁছে দেখে মতিদার টিকিরও দেখা নেই।শুধু সুদেব পায়জামা পাঞ্জাবি পরে কাঁধে একটা কবিদের ব্যাগ ঝুলিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঋষি যেতেই একগাল হেসে বলে, ‘এসে গেছ, যাক তোমাকে একটা বড় কাজ দিয়ে একটু নিশ্চিন্ত হব।’

শেষের কথাগুলো বলেই একটা বোর্ডে কয়েকটা কাগজ লাগিয়ে বলে,’এই নাও, অতিথি কবিদের নাম ঠিকানাটা এখানে লেখানোর ব্যবস্থা করবে। আর আমাদের কিছু বই থাকছে যে কিনবে তাদের হিসাবটা একটু রাখতে হবে।’

–মতি দা কই ?

ঋষি জিজ্ঞেস করতেই সুদেব উত্তর দেয়,’মতিদার শরীরটা ভালো নেই। একটু দেরিতে আসবে।’

সুদেবের অনুরোধ মত ঋষি হলের বাইরেটাতেই অ্যাটেন্ডডেন্সের একটা শিট নিয়ে বসে থাকে। সেদিন শহর ছাড়িয়ে পশ্চিম বঙ্গের আরো অনেক জায়গা থেকেই কবিরা এলেন। স্বভাবতই সকাল নটার সময় আরম্ভ হবার কথা থাকলেও সাড়ে এগারোটার সময় কবিতা পাঠ আরম্ভ হল। একেএকে কবিরা কবিতা পাঠ করতে লাগলেন। কোথা থেকে একটা গ্রুপ এসে গান করল, আলোচনাও হল। একাএকা বাইরে বসে ঋষি অবশ্য কোন কবিতা বা আলোচনা শুনতে পেল না। মাঝে মাঝে মোবাইল বের করে মতিদার পাঠানো ইকার্ডটাতে চোখ বোলায়। বেশ সুন্দর করে কবি বন্ধু লিখে একটা কবিতা পড়বার যে  অনুরোধ সেই লাইনটাতে বারবার চোখ পড়ে যায়। তার হাতে বই বিক্রি হল, পত্রিকা বিক্রি হল। কেউ কেউ অবশ্য ঋষির সাথে কথা বলে কোন বিখ্যাত পত্রিকাতে তার প্রকাশিত কোন কোন ভাল কবিতা বা গল্প পড়েছেন সে সম্পর্কে  বললেন। ঘন্টা খানেক পরে শহরের আরেক কবি শুভাশীষদার মুখে ঋষি শুনতে পায় মতিদা আমন্ত্রিত কয়েকজন কবির সাথে ভোর চারটে পর্যন্ত চুটিয়ে মদ খেয়েছে। সকালে আর উঠতে পারছে না। এখন দ্যাখো পত্রিকার অনুষ্ঠান মতি নিজেই হলের এক্কেবারে পিছনে একটা বেঞ্চে শুয়ে আছে। সুদেব সঞ্চালনা করছে।

ঋষি মনে মনে খুশিই হয়। টাকাটা তাহলে আর দিতে হবে না।

ঋষি কোন কথার জবাব না দিয়ে আগের মতই নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিল। বই পত্রিকা বিক্রি আর নাম ঠিকানা লেখানো, এই সব। কিছু আগেই মেল খুলতেই আগের দিনের সন্ধে বেলায় ‘পৃথিবী’ পত্রিকা থেকে একটা পাঠানো মেলে চোখ পড়ে যায়। আরেকটি কবিতা ঐ পত্রিকার জন্যে নির্বাচিত হয়েছে। এই নিয়ে এক বছরে দুটো কবিতা নির্বাচিত করল। তবে কাউকেই কিছু বলল না। এমনকি আরো কিছু সময় পরে শুভেন্দু আসার পর একটু আড্ডাও হল, কিন্তু পত্রিকার ব্যাপারে কিছু বলে না। দুপুর খাওয়া দাওয়ার পর আরেক প্রস্থ কবিতা পাঠের মাঝে বাইরের অনেক কবিই আস্তেআস্তে বাড়ির রাস্তায় পা বাড়ালেন। মতিদাও এখন আগের থেকে একটু ভালো। সুদেবের কি মনে হল বাইরে এসে ঋষিকে তখনো অভ্যর্থনার চেয়ারে বসে থাকতে দেখে হলের ভিতরে নিয়ে গেল।

ঋষি সেই প্রথম হলে ঢুকে দেখল হল মোটামুটি ফাঁকা।এটাই অবশ্য এখানকার নিয়ম। কবিতা পাঠ করে লাঞ্চ পর্যন্ত সবাই থাকে, তারপর যে যার মত বাড়ি।যে কয়েকজন আছেন তারাও কবিতা পড়ছেন আর বেরিয়ে যাচ্ছেন। সুদেব এক্কেবারে শেষ কালে ঋষির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ও, একদম ভুলে গেছি, তুমিও তো আছো, দেরি হয়ে গেল। একটা কবিতা পড়ে নাও। তুমি যে এতক্ষণ ধরে আছো এটা আশ্রমিক বলেই সম্ভব।’

ঋষির মাথায় তখন ‘পৃথিবী’ পত্রিকার পাঠানো মেলটার কথাটাই ঘুরছে। এই মাসে আরো বেশ কয়েকটা ভালো পত্রিকাতে লেখা প্রকাশিত হল। একটা পত্রিকা আবার কবিতা বিষয়ে একটা প্রবন্ধ চেয়েছে।

–কি ভাবছো ঋষি। একটাই কবিতা পড়বে কিন্তু, তোমারটা দিয়েই অনুষ্ঠানটা শেষ করব।

সুদেব কথাগুলো বলতেই ঋষি একটা লম্বা শ্বাস ফেলে উত্তর দিল,’শোন আমি তো তোমাদের আশ্রমিক, তাই এই ফাঁকা চেয়ারের সামনে কবিতা না পড়লেও হবে। তুমি বরং এক কাজ কর সব কিছু গোটাবার ব্যবস্থা কর। আমার এমনিই দেরি হয়ে হয়ে গেছে।’

ঋষি সুদেবের উত্তরের কোন প্রত্যাশা না করেই হল থেকে বেরিয়ে গেল।বাইরে তখন মতিদা একটা চেয়ারে বসে ছিল। ঋষিকে দেখতে পেয়েই বলে উঠল,’এই যে ঋষি আজ তুমি যে সার্ভিস দিলে এক্কেবারে দারুন। আমি তোমাকে সামনের সংখ্যাতে একটা বড় কবিতা লিখতে বলব।’ ঋষি কোন জবাব না দিয়ে বই বিক্রির হিসেব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির দিকে যাবে এমন সময় মতিদা বলে ওঠে,’এই তোমার টাকাটা তো পেলাম….’

-মনে আছে, আমি পকেটে নিয়েই ঘুরছি।এই জন্যেই তো ডেকেছিলে।

ঋষি থামিয়ে দিয়ে জবাব দিল।মতিদা গুনে নিয়ে বলল, ‘হাজার দিলে?…. ঠিক আছে।’

                                                ৩   

কি গো কোথায় যে মাঝেমাঝে থাকো কে জানে?

এক এক সময় একটা লেখার সামনে বসে থাকতে খুব কষ্ট হয়।এক একটা চরিত্র যেন ঋষির কাছে এসে কাঁদে, অভিযোগ করে। ঋষি এই সব চরিত্রের মাঝে কোথায়ে যেন হারিয়ে যায়।

সোমার কথা শুনে আবার লেখার টেবিলে ফিরে আসে।সোমা পাশে ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ঋষি তার দিকে মুখ ঘোরাতেই সোমা বলে ওঠে,’ফোনটা নিয়ে বস না কেন? কত বার উঠব বল তো? এখানে এসেও মিনিট পাঁচ দাঁড়িয়ে আছি। ডেকেই যাচ্ছি, তোমার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।দ্যাখো আবার ফোনটা কখন থেকে বেজে যাচ্ছে।

ঋষি ফোনটা হাতে নিয়েই দ্যাখে মতিদা কলিং।

মতি দা! মানে আবার টাকা, নতুন প্রকাশিত বইটার পুশ সেল, তারপরেই সেলিব্রেটি লেখক।

ঋষি একটা লম্বা শ্বাস নেয়। হাতে ফোনটা তখনো বেজে যাচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ খুললেই কয়েকদিন আগে পাঠানো নতুন প্রকাশিত বইয়ের বিজ্ঞাপনটা জ্বলজ্বল করছে।মতিদা লিখেছে এখন ইউপিআই অ্যাপেও টাকা পাঠানো যাবে।

ঋষি কিছু সময় চুপ করে বসে থাকে।গল্প আর বাস্তবের চরিত্র দুটোই এক, পার্থক্য শুধু গন্ধের। এদের সাথে যোগাযোগ রাখলেই শুধু টাকা দাও, টাকা। নিকুচি করেছে। এই বেশ ভালো আছে, এদের ব্লক করে দেওয়াই ভালো। ঋষি চিন্তা করে, ব্লক করলে ফুল ব্লক নাকি…..?

আশ্রমিক ছোট গল্প – সমাপ্তি

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!