বন্ধন ছোটগল্প – মধুরিমা ব্যানার্জ্জী
এবার শারদীয়া খুব একটা ভালো যাবেনা মলমলের। একে কর্পোরেট অফিসের চাপ, তাতে স্বামী রোহনের সাথে বিচ্ছেদের সুরটা বেশ জোরেই বাজছে। মলমল দীর্ঘদিন সরকারী চাকরীর চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়না। প্রতিযোগিতা মুলক পরীক্ষার দিকে বরাবর বেশী ঝোঁক ছিল রোহনের। সময় বুঝে টুপ করে সে রেলে চাকরি পেয়ে যায়। মলমল বরাবর জীবনটাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে বেশী ওস্তাদ। সময়ের কাজ সময়ে না করে, পরে হা হুতাশ করে তার পিছনে দৌড়ে ওটা আদায় করা মলমলের বিরাট চ্যালেঞ্জ। সব চ্যালেঞ্জকে মাত দিলেও শেষমেশ সরকারী চাকরিটা মলমল পায়নি। এখন কর্পোরেট অফিসে সে দস্তুরমত কনটেন্ট রাইটিং এর কাজ করে। তাতে রাত জেগে কাজ করার বেশ চাপ। রোহনকে পছন্দ করে মলমল। মলমলদের প্রেমের দিনগুলোতে রোহন যেন এক অন্য মানুষ, কিন্তু বিয়ের পর তার আবেদন নিবেদন সবই গেল বদলে। সময়ের সাথে সাথে মলমল বেশী সংসারী আর কেজো হয়ে পড়ল। সাথে কর্পোরেট অফিসের চাপ। রোহন নিজেও অসম্ভব বেশী শক্ত আর রাগী হয়ে উঠল। উঠতে বসতে এখন সে মলমলের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। একটা কথা রোহন ওর জবলেস থাকার সময় খুব বলত, পয়সা ছাড়া দুঃখের সময়টা খুব বুঝছি। এরপর সবাইকে দেখিয়ে দেব। এই দেখিয়ে দেওয়াই কাল হল। মানুষ যেমন কম্পিউটার গেমের এক একটা লেভেল পার করে, রোহনও সেই নেশায় ছুটতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলল। আগে মলমল অনেক দোষ করলেও তা চোখে পড়তনা। এখন পান থেকে চুন খসলেই মলমলকে কাঠগড়ায় তুলে দিয়ে সেটাকে নিয়ে বিশ্রী পরিণতিতে সহজেই পৌছে যায় রোহন। উদাঃ স্বরূপ সেদিন বিকালে পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটা যখন তাদের ঘরে খেলতে এলো, তখন তার কনটেন্ট রাইটিং এর এত চাপ ছিল, ছেলেটাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। ছেলেটা রোজ আসে, তাই কিছু মনেও করেনি। রোহন সেই নিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেল। এভাবে দিন, মাস, বছর যায়, মলমল সহ্য করে যায় সংসারের দিকে তাকিয়ে, রোহনের যত্নের দিকে তাকিয়ে। একসময় সেও হতাশ হয়ে পড়ে। যে রোহন তার মেজাজ ঠাণ্ডা করে গোটা প্রেমের সময় অতিক্রান্ত করল, সে আজ এতই উত্তপ্ত থাকে, রীতিমত ভয় লাগে মলমলের। মলমল ঠিক করল, কদিন পাহাড় থেকে ঘুরে এলে সম্পর্কটা ঠিক হবে। সেরকম কিছু হলনা। এমন মন খারাপের দিনগুলোতে মলমল একবার ৫ ঘণ্টা ফিরলনা। ফিরে দেখল রোহনের তাতে তাপ উত্তাপ নেই। এবার মলমল ঠিক করল, এই সংসারটাই নিরুত্তাপ ভাবে শুরু করবে। জানে পুজোটাও ভালো যাবেনা। শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ তার মন মেদুর করে দিল। ভাবল, এবার রোহনকে সম্পর্কের শুষ্কতা থেকে মুক্তি দেবে, কিন্তু মন যে মানেনা। পুজোটা কাছে আসতেই তারা কেনাকাটা করল শব্দহীন যন্ত্রমানবের মতন।
হঠাৎ, পুজোর ঘোরাঘুরির ফাঁকে, ভিড়ের মাঝে রোহন হারিয়ে ফেলল মলমল। মলমলের উদ্ভ্রান্ত লাগছিল। রোহন খুব ঘামছিল। দেখা পেল দুজন দুজনের। রোহন চেপে জড়িয়ে কেঁদে ফেলল। ওরা একরাশ প্রাপ্তি নিয়ে ফিরে গেল ওদের ভালোবাসার বাসায়।
বন্ধন ছোটগল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
প্রচ্ছদ
কায়দায় জীয়ন কায়দায় মরণ
পিরীতি কাঁঠালের আঠা