কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » ভৌতিক গল্প » এমনও ঘটে

এমনও ঘটে

এমনও ঘটে ভৌতিক গল্প – শুভব্রত ব্যানার্জ্জী

কলিং বেলের শব্দে কৌশিকের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু ঠাণ্ডায় বিছানা ছাড়তে ইচ্ছা করছিল না। আবার, আবার, বারবার বাজতে থাকায় শেষ পর্যন্ত উঠতেই হলো বিছানা ছেড়ে। উঠেই বুঝতে পারল মাথাটা বেশ ভারী হয়ে আছে । আসলে পার্টিতে আজ একটু বেশীই মদ খাওয়া হয়ে গেছে। পার্টিতে মদ খেলেও সাধারণত এতো বেশী মদ সে খায় না কিন্তু পিউকে অভিজিতের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করতে দেখে তার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল । কি ধড়িবাজ মেয়ে, একসাথে দুজনের সাথে ছলাকলা চালিয়ে যাচ্ছে! অখিল বারবার তাকে বাধা দিচ্ছিল তবু সে শোনেনি, একের পর এক পেগ মদ খেয়ে গেছে। তাকেও সে মদ অফার করেছিল কিন্তু অন্যান্য বারের মতো এবারেও সে সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছিল । আবার কলিং বেল বাজায় বাধ্য হয়ে সে দরজাটা খোলে, একটা ঠাণ্ডা দমকা হাওয়া আর বৃষ্টির ঝাঁট যেন ধাক্কা মেরে দরজা থেকে তাকে সরিয়ে দেয়। মুখ চোখ থেকে বৃষ্টির জল মুছে ভালো করে বাইরে তাকিয়েও কাউকে দেখতে পায় না । দরজা বন্ধ করে আবার সে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে । ঠাণ্ডায় ঘুম আসছিল না। পাশ ফিরে শুতে গিয়ে মনে হলো সেন্ট্রাল টেবিলের পাশের ইজি চেয়ারটা দুলছে, কেউ বসেছিল এইমাত্র উঠে চলে গেল। চোখ কচলে ভালো করে তাকিয়ে দেখে, না সেটা ঠিক আছে। মনে মনে বলে- শালা, নেশাটা আজ খুব বেশী হয়ে গেছে। আবার ঘুমোবার চেষ্টা করে কিন্তু রান্না ঘরে একটা শব্দ পেয়ে ভালো করে কান পেতে শোনার চেষ্টা করে আর কিছু শুনতে পায় না। আর শুয়ে না থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে টয়লেট করে ঘাড়ে মুখে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ঘরে এসে দেখে অখিল একটা মদের বোতল থেকে দুটো গ্লাসে মদ ঢালছে । সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে – আবে, তুই কোথা থেকে এলি আর কিভাবেই বা এলি ! – তোর পাশ দিয়েই তো ঢুকলাম । কতক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজাবার পর দরজা খুললি । – কই, তোকে তো ঢুকতে দেখলাম না! – বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে মুখে চোখে হাত দিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালি তখন আমি ঢুকলাম । – তুই বাড়ি যাসনি ? বৌদি চিন্তা করবে। – বাড়িই যাচ্ছিলাম, মাঝ রাস্তায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। কুমারমঙ্গলম পার্কের ভেতরের বারটায় দাঁড়িয়েছিলাম। তোর কথা খুব মনে পড়ছিল। তখন আমাকে এতো বার মদ খেতে বললি আর আমি খেলাম না, খুব খারাপ লাগছিল। তাই বৃষ্টি কমতে একটা বোতল কিনে তোর বাড়ি চলে এলাম। – তুই তো ভাই মদ খাস না তাহলে এই রাতের বেলা কেন গিলতে এলি ! – মদ আমি কোনদিন খাইনি কিন্তু সন্ধ্যা বেলা তুই বললি আমি তোর সাথে বসে একদিন মদ খেলে তুই মদ খাওয়া ছেড়ে দিবি । কালকের ভরসা কে করে বল ! তাই আজ রাতে আমরা দুজন একসাথে মদ খাব তারপর থেকে আর কেউ কোনদিন খাব না। – আমি এখন আর মদ খাব না । সন্ধ্যা বেলা পিউ-এর ওপর রাগ করে অনেকটা গিলেছি, এখনো আমার মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে। আমি বলি কি, তুই যখন কোনদিন খাসনি তাই আর কখনো খাস না ভাই। মদ খাওয়া ভালো জিনিস নয় । – জানিস তো খাস কেন? – এমনি একটু মজা করার জন্যে । ছেড়ে দেব । আচ্ছা, আমার আর একটা কথা রাখ, খাসনি তো কোনদিন বেশী খাবি না একদম । সোডা দেব ? – দে । কৌশিক সোডার বোতলটা টেবিলে রেখে টিউবলাইটটা জ্বালতে গেলে অখিল বাধা দিয়ে বলে – থাক, ওটা জ্বালতে হবে না। ডিমলাইটেই ভালো লাগছে। কৌশিক খাটে বসে অখিলের মদ খাওয়া দেখতে থাকে। খানিকটা খাবার পর তাকে মাথা নীচু করে বসে থাকতে দেখে সে জিজ্ঞেস করে – কি’রে শরীর খারাপ লাগছে? আর খাবি না। অখিল মাথা তুললে দেখে তার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। – তুই কাঁদছিস কেন? আর একদম খাবি না, দে বোতলটা দে । তার কথায় জবাব না দিয়ে অখিল কাঁদতে কাঁদতেই বলে – আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বৌয়ের কি হবে বলতো! মা-বাবাও দুঃখ পাবেন, কিন্তু তাঁদের আরো দুই ছেলে আছে। তাদের দেখে তাঁরা হয়তো সান্তনা পাবেন। কিন্তু আমি ছাড়া তো আমার বৌয়ের আর কেউ নেই। মাত্র ছ মাস আমাদের বিয়ে হয়েছে । এখন আমার যদি কিছু হয়ে যায় সে বেচারা কি করবে! কিভাবে সারাজীবন কাটাবে! – তোর নেশা হয়ে গেছে। আর একদম খাবি না। উল্টোপাল্টা না বকে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে চোখে জল দিয়ে এখানেই শুয়ে পড়, আজ আর বাড়ি যেতে হবে না । – বাড়ি যেতেই হবে নাহলে শিখা খুব চিন্তা করবে, কান্নাকাটি করবে। শোন আমার যদি কিছু হয়ে যায় তুই শিখাকে দেখবি । ওর এতোবড় বাকি জীবনটা কি বিধবা হয়ে কাটাবে! তুই আমার সবচেয়ে ভালো আর বিশ্বস্ত বন্ধু। তাই তখন তুই শিখাকে বিয়ে করবি । – মারব পাছায় এক লাথ । আজ কিছুতেই তোর বাড়ি যাওয়া হবে না। বৌদিকে ফোন করে বলে দে, আজ রাতে তুই আমার কাছে থাকবি । – ফোনটা কোথায় পড়ে গেছে। – পড়ে গেছে মানে ? পার্টি থেকে বেরোনোর সময়ও তোর হাতে ফোন ছিল। রেনকোটের পকেটে নেই তো ? দাঁড়া, আমার মোবাইল থেকে একটা ফোন করছি । কৌশিক নিজের মোবাইল থেকে কল করলে উল্টো দিকে এক ভদ্রলোক জবাব দেন – হ্যালো । – হ্যালো, কে বলছেন? – আমি অরবিন্দ থানার বড়বাবু। আপনি কে বলছেন? – স্যার, আমি কৌশিক মিত্র। ফোনটা আমার বন্ধুর, আজ বাড়ি যাবার সময় হারিয়ে গেছে বলছিল । – কি নাম আপনার বন্ধুর? – অখিলেশ মজুমদার। – দেখুন, আমরা মোবাইলটা একটা ডেডবডির পকেট থেকে পেয়েছি । পাশে একটা কালো রঙের পালসার বাইক পড়েছিল। – কালো পালসার! নাম্বারটা একটু বলবেন? – WB 40 AB 3123 – স্যার, বাইকটাও তো আমার বন্ধুর। কিন্তু সে তো আমাকে বাইক চুরির কথা কিছু বলেনি। শুধু মোবাইলটা কোথাও পড়ে গেছে বলছিল। কি’রে– ফিরে অখিলকে দেখতে না পেয়ে ভাবে ওয়াশরুমে গেছে হয়তো। খুব রাগ হয় তার । এতো চাপা স্বভাব ! ওপার থেকে বড়বাবু বলেন – বাইক লক করা ছিল ? – বুঝতে পারছি না। বোধহয় বৃষ্টিতে লক করতে ভুলে গেছে । আমি ওকে জিজ্ঞেস করে একটু পরে আপনাকে ফোন করছি । – আপনার বন্ধুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি অরবিন্দ থানায় চলে আসবেন। ফোনটা রেখে কৌশিক চিৎকার করে বলে – এই ইডিয়েট, তোর বাইক, ফোন সব চুরি হয়ে গেছে আর তুই এখানে বসে মদ গিলছিস ! অখিল, অখিল আরে এই ইডিয়েট । কোন সাড়া না পেয়ে কৌশিক ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে সেখানে কেউ নেই। পুরো বাড়িটা খুঁজেও তার কোন সন্ধান পায় না। হ্যাঙারের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে কেবল তার রেনকোটটাই ঝুলছে। মনে মনে বলে – বাঁদরটার এখনো পুলিশের প্রতি ভয়টা গেল না। আমার আর বড়বাবুর কথাবার্তা শুনে নিশ্চয় ব্যাটা পালিয়েছে। কিন্তু এই ঠাণ্ডায়, বৃষ্টিতে পায়ে হেঁটে মালটা যাবে কোথায়! নেশা হয়ে গেছে, এখন যদি কোথাও কোন বিপদ ঘটায় তাহলে কেলেঙ্কারির একশেষ হবে। সে তাড়াতাড়ি জামা প্যান্ট পরে গায়ে রেনকোট চাপিয়ে মুখে মাউথ ফ্রেশনার মেরে টেবিল থেকে বাইকের চাবিটা নিতে গিয়ে দেখে শুধু সোডার বোতলটা টেবিলে পড়ে আছে। মনে মনে গালাগাল দিয়ে বলে – ইডিয়েটটা মদের বোতল আর গ্লাসগুলো কোথায় রেখেছে কে জানে! সকালে কাজের মাসি যদি দেখতে পায় কি ভাববে? যেখানে আছে থাকগে, আগে ইডিয়েটটাকে খুঁজে বের করতে হবে। রাস্তায় দেখতে পেলে আগে ক্যালাব তারপর থানায় নিয়ে যাব । দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজাটা ভেতর থেকে লক করা, মনে একটা খটকা লাগে। পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় যে লকটাকে অপারেট করে বাইরে থেকে টেনে দিলেও তো দরজাটা লক হয়ে যায় । বদমাশটা যাবার সময় দরজাটা লক করে যেতে ভোলেনি। সেও দরজা লক করে হেলমেট পরে বাইক নিয়ে বৃষ্টিতে তাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। বৃষ্টিতে কিছুই ভালো করে দেখা না গেলেও সে এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে যায় । না, কোথাও তাকে পাওয়া যায় না । অগত্যা সে থানায় গিয়ে বড়বাবুর সাথে দেখা করলে তিনি সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে বলেন – আপনি ? – স্যার আমিই কৌশিক মিত্র। – আপনার বন্ধুটি কোথায় ? – আমার বাড়িতেই ছিল। আপনার সাথে যখন কথা বলছিলাম তখন কোন ফাঁকে পালিয়ে যায়। সারা রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে এলাম, কোথাও দেখতে পেলাম না। – পাগল না কি ! এই ঠাণ্ডায়, বৃষ্টিতে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন! উনি কি হেঁটেই থানায় আসছেন? বাই দ্য ওয়ে, আপনি থাকেন কোথায়? – হর্ষবর্ধন রোডে । – বাইকটা কোথা থেকে চুরি হয়েছিল? – চুরি হয়েছিল সেটা তো আমি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। – আপনার বন্ধু থাকেন কোথায়? – চণ্ডীদাস রোডে । – তাঁর যে ফোন চুরি হয়েছে সেটা কখন জানলেন? – স্যার আজ সন্ধ্যায় দুর্গাপুর হাউসে একটা পার্টি ছিল। বৃষ্টি নামতে পারে বলে রাত দশটা নাগাদ পার্টি শেষ হয়ে যায়। যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই । তখন সেও তার বাইকে বেরিয়ে যায় । তার আগেও ওর হাতে আমি মোবাইল দেখেছি। – তারপর? – বাড়ি গিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি । রাত প্রায় সাড়ে এগারোটায় অখিল আমার কোয়াটারে যায় । সেখানে সে ড্রিঙ্ক করে। তারপর নেশা হয়ে গেলে কান্নাকাটি করতে শুরু করে। আমার ভয় হয় । তাই তার মিসেসকে জানিয়ে দিতে বলি যে আজ রাতে সে আর বাড়ি ফিরবে না, আমার বাড়িতে থাকবে। তখন সে বলে যে তার ফোনটা রাস্তায় কোথাও পড়ে গেছে। – উনি কি নিয়মিত ড্রিঙ্ক করেন ? – নিয়মিত কি স্যার, ও কোনদিনই ড্রিঙ্ক করে না – তবে আজ কি খুশীতে উনি ড্রিঙ্ক করলেন?- সত্যি কথা বলতে কি, আমি মাঝে মাঝে ড্রিঙ্ক করি আর অখিল সর্বদা আমাকে বাধা দেয়। আজ পার্টিতে আমি একটু বেশী ড্রিঙ্ক করে ফেলেছিলাম। অখিল বাধা দিলে আমি তাকে বলি যে সে যদি কোনদিন আমার সাথে বসে ড্রিঙ্ক করে তবে আমি ড্রিঙ্ক করা ছেড়ে দেব । যাতে আমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিই তারজন্যে সে এতো রাতে আমার কোয়াটারে গিয়ে আমার সাথে মদ খেতে বসে। তারমানে বাইকটা আমার কোয়াটারের সামনে থেকেই চুরি হয়েছে। – কিন্তু এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে রাত দশটা-সাড়ে দশটা নাগাদ। – স্যার, এ্যাক্সিডেন্টটা কোথায় হয় ? – এস পি মুখার্জী রোড ধরে উঠে এসে কুমার মঙ্গলম পার্কের সামনে যে রোটারিটা আছে, সেখানে। আসলে সেখানে অনেক তেল পড়েছিল তার ওপর বৃষ্টির জল পড়ে রাস্তাটা পুরো স্লিপারি হয়ে গিয়েছিল। টার্ন নিতে গিয়ে বাইক স্কিট করে পড়ে গিয়ে মাথা থেকে হেলমেট খুলে ছিটকে যায় আর মাথাটা ডিভাইডারে গিয়ে লাগে । বেচারা স্পটেই মারা যায়। পেট্রোলিঙের সময় দেখতে পেয়ে আমরা লাশটাকে তুলি আর রাস্তা বন্ধ করে দিই । – দশটা-সাড়ে দশটা নাগাদ এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে বলছেন তাহলে সে আমার বাড়ি গেল কিসে করে ! আবার বাইকের যে নাম্বার বলছেন সেটা আমার বন্ধুর বাইকের নাম্বার। ফোনটাও তার। স্যার একবার বাইক, হেলমেট এগুলো দেখতে পারি ? – নিশ্চয়। রায়বাবু, এনাকে জিনিসগুলো একবার দেখান । তবে কোনকিছুই আপনাকে ফেরৎ দিতে পারব না। আপনার বন্ধু একটা জি ডি করার পর তাঁকে এগুলো ফেরৎ দেওয়া হবে, যদি অবশ্য ওগুলো তাঁর হয় । রায়বাবুর সাথে বাইকটা দেখে এসে কৌশিক বলে – স্যার, বাইকটা আমার বন্ধুরই । – রায়বাবু, বাকি জিনিসগুলোও দেখান । রায়বাবু সব জিনিসগুলো নিয়ে এলে সেগুলো দেখে কৌশিক বিস্মিত হয়ে বলে- স্যার, হেলমেট, ফোন, মানিব্যাগ, গলার চেন, ঘড়ি, আংটি সবই তো আমার বন্ধুর। তবে কি ওর সব কিছুই ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল! – মে বি । রায়বাবু, ভদ্রলোকের কোন ছবি তোলা হয়নি? রায়বাবু বলেন – স্যার, মোবাইলে ছবি তুলেছিলাম ঠিকই কিন্তু অন্ধকারে ঠিক মতো আসেনি । কৌশিক মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছবিটা দেখল কিন্তু কিছুই বুঝতে না পেরে বড়বাবুকে বলে – স্যার, ডেডবডিটা একবার দেখা যাবে? – ডেডবডি বিধাননগর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পোস্টমর্টেমের জন্যে। যাবেন তো চলুন। – কিন্তু স্যার আমার বন্ধুর খোঁজ? – এ্যাডাল্ট মানুষ, ইচ্ছা করে না হারালে ভয় নেই এক যদি না পাগল হন । কৌশিক হেসে বলে – না স্যার, কৌশিক খুব ঠাণ্ডা মাথার আর খুব বুদ্ধিমান ছেলে। – রায়বাবু, আমাদের যে গাড়িটা হর্ষবর্ধনের দিকে পেট্রোলিং-এ যাবে তাদের রাস্তায় ভালো ভাবে নজর রাখতে বলবেন। আর রামদেবকে বলুন গাড়ি বের করতে, বিধাননগর হাসপাতালে যেতে হবে। অখিলের জন্যে কৌশিকের চিন্তা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। ইডিয়েটটা এখন কোথায় কি করছে কে জানে? একবার ভাবে, শিখাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে। আবার ভাবে অখিল যদি বাড়ি না পৌঁছায় তবে সে বেচারা খুব দুশ্চিন্তা করবে। রাতে একা কিছু করতে না পেরে কান্নাকাটি করবে। তাই ঘটনা যেমন এগোচ্ছে এগোতে থাক । বড়বাবু হাসপাতালে গিয়ে ওখানকার ডিউটি অফিসারকে জিজ্ঞেস করেন- ডেডবডির পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে? – না স্যার, এখনো চলছে। বড়বাবু কৌশিককে বলেন – যাবেন ভেতরে? – চলুন। – ভালো করে নাকে রুমাল চাপা দিন, ভেতরে প্রচণ্ড গন্ধ । নাকে রুমাল চাপা দিয়ে বড়বাবুর সাথে মর্গে ঢুকে দেখে একজন ডোম একটা কাটা ছেঁড়া লাশকে সেলাই করছে, এখানে সেখানে চাপ চাপ রক্ত পড়ে আছে। একজন ডাক্তার বাবু পাশে দাঁড়িয়ে ডায়রিতে কিছু লিখছিলেন। বড়বাবুকে দেখে বলেন – প্রায় হয়ে গেছে স্যার, আর একটু খানি। – হয়ে গেলে বলবেন এই ভদ্রলোক ডেডবডিটা একবার দেখবেন। ডোমের সেলাই করা হয়ে গেলে ডাক্তারবাবু বড়বাবু ও কৌশিককে ডেকে নেন। কাছে গিয়ে ডেডবডিটা দেখেই কৌশিক চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালের বেডে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পর জ্ঞান ফিরলে সে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। বড়বাবু তাকে একটু কাঁদতে দেন । সে একটু স্বাভাবিক হলে বড়বাবু তাকে জিজ্ঞেস করেন – লাশটা কি আপনার পরিচিত কারোর ? কৌশিক কাঁদতে কাঁদতে বলে – স্যার, ও-ই তো আমার বন্ধু, অখিল। বড়বাবু চমকে ওঠে বলেন – মানে! কৌশিক কাঁদতে কাঁদতেই বলে – আমাকে মদ ছাড়াতে গিয়ে নিজের জীবনটা দিয়ে দিল । ড্রিঙ্ক করে বাইক চালিয়েই এ্যাক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। – না স্যার, ওনার স্টমাকে কোন অ্যালকোহল পাওয়া যায়নি। – স্যার, রাত সাড়ে এগারোটায় সে আমার কোয়াটারে গিয়ে আমার সামনে বসে মদ খেয়েছে আর আপনি বলছেন, ওর স্টমাকে কোন মদ পাওয়া যায়নি! এও কি সম্ভব! স্যার, আমি আরো একবার ডেডবডিটা দেখতে চাই। বড়বাবু ও ডাক্তারবাবুর সাথে কৌশিক আবার মর্গে গিয়ে দেখে অখিলের লাশটাই শোয়ানো আছে ট্রেতে । বুক, পেট, মাথা সব সেলাই করা। দৃশ্যটা যেন তাকে গিলতে আসছে। আর সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে । বড়বাবু তাকে জিজ্ঞেস করেন – কি হলো? – হ্যাঁ স্যার, সে-ই । স্যার আপনাদের সময়ের কোন গণ্ডগোল হচ্ছে না তো ? ডাক্তারবাবু বলেন – না। এ্যাক্সিডেন্ট দশটা পাঁচ দশ নাগাদ হয়েছিল। – কিন্তু সে তাহলে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আমার কাছে গেল কি করে ? সে আমার সামনে বসে মদ খেয়েছে, তার সাথে কত কথা বলেছি । কৌশিকের কথা শুনে ডাক্তারবাবু ও বড়বাবু দুজন দুজনের মুখের দিকে চেয়ে থাকেন। কৌশিকের মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। সে যে তাকে জলজ্যান্ত দেখল আবার মর্গে তো অখিলের লাশটাই শুয়ে রয়েছে। কোনটা তবে সত্যি! সে আর ভাবতে পারে না।

এমনও ঘটে ভৌতিক গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!