কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » পুজো সংখ্যা ১৪২৮ » গল্প জলাশয় ও পরিযায়ী পাখী

গল্প জলাশয় ও পরিযায়ী পাখী

গল্প জলাশয় ও পরিযায়ী পাখী ছোটো গল্প – দেবদাস কুন্ডু

আমি অর্পণ। ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। আজ পাঁচ দিন জ্বর ।ওষুধে কমছে না। ডাক্তারের কাছে যায় নি। একগাদা ওষুধ দেবে। ঠাকুমা তাই রেগে আছে। আমার বাবা মা দুজনেই  মারা গেছে গাড়ি দূর্ঘটনায়। ঠাকুমা ছাড়া আমার আর কেউ নেই। এই বাড়িটা ঠাকুমার নামে বাবা কিনে

ছিল। বাবার পুতুল কারখানার ঘর দুটো বন্ধ হয়ে আছে। এই বাড়িতে আমি আর ঠাকুমা থাকি। এখানে ছ টা ঘর। একটা হরি ঠকুরের ঘর। একটা ঘরে ঠাকুমা থাকে। একটা ঘরে আমি থাকি। দুটো ঘর নিয়ে বাবার কারখানা ছিল। একটা ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। বাবার FD র সুদে আমাদের চলে যাচ্ছে ।আমি করি কয়েকটা টিউশন। ঠাকুমা গেছে রাধামাধবের মন্দিরে আমার সুস্থতার জন্য পূজো দিতে। আবার জ্বরটা উঠলো বোধ হয়। চোখ দুটো আচ্ছন্ন হয়ে আসছে। হঠাৎ চমকে উঠলাম আমি—এ কি স্বপ্না তুই? 

—বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? 

—সত্যি তাই। 

–পাঁচ দিন কলেজ যাচ্ছিস না। ফোন ধরছিস না।কি ব্যাপার? 

–তেমন কিছ না। 

–কিন্ত আমি তোকে না দেখে থাকতে পারলাম না। 

–তার মানে তুই আমায় ভালোবাসি। 

–জানি না। দেখি কত জ্বর। এ কি অনেক জ্বর তো। থারমোমিটার দে। জ্বর মাপি। 

–কিছু লাগবে না। স্বপ্নার হাত আমার কপালে। আমি ডান হাত দিয়ে ওর কোমর ধরে টান দেই। স্বপ্না আমার বুকে এসে পড়ে। 

–কি করছিস? 

–তোর শরীরের জ্বর মাপছি। 

–এভাবে কেউ জ্বর মাপে নাকি? 

আমার ঠোঁট দখল নিয়ে ফেলেছে স্বপ্নার নরম ঠোঁট। তারপর আমার দু হাতের বেষ্টনিতে আটকা পড়েছে ও। কিন্তু ছাড়াবার এতটুকু 

 চেষ্টা ওর নেই। আত্ম সমর্পনণে যেন ওর সুখ। আমার ক্ষুদার্থ ঠোঁঠ নেমে এল ওর গোলাপি বুকের উপত্যকায়। তখন বুঝতে পারলাম আমার জ্বর ওর শরীরে সংক্রামিত হয় গেছে। এক সময় ও বলল–এবার ছাড়। অনেক হয়েছে।. জ্বর বাঁধালি কি করে? 

–তোর জন্য। 

–কেন আমি কি করেছি? 

–তুই সেদিন আমি না বলা সত্বেও রতনের সংগে ভুবন ডাঙার বনে গেলি কেন? 

—তোকে তো বললাম। তূই গেলি না। এই জন্য অভিমান হয়েছে? তাই আমার ফোন ধরিস নি? 

–অভিমান হবে কেন? আমি কি মেয়ে? 

—তাহলে রাগ হয়েছিল বুঝি? 

—শুধু রাগ। খুন করতে ইচ্ছে হয়েছিল।

—এতো ভালোবাসিস আমায়? কোনদিন তো বলিস নি? 

—ফুল নি:শব্দে ফোটে। 

      তারপর থেকে ও মাঝে মাঝে আসে আমার ঘরে। আমি কবিতা শোনাই।ও গান করে। এভাবে দিন কাটে। কোন দিন আবার শরীরের খেলায় মেতে উঠি। 

        তারপর কি হলো স্বপ্না  কলেজ আসে না। ফোন ধরে না। একদিন আজাদ নগরে ওদের বাড়ি যাই। পাশের বাড়ির লোক বলল, ওর বাবা মারা গেছে। ও মামা বাড়ি গেছে। কোথায় মামাবাডি তিনি জানেন না। 

           আমার অবস্থা তখন বর্ষার নদীর মতো। 

ফুলে ফুলে উঠছে বুকের ভিতরটা।  এক শূন্যতা

 দৈত্যর মতো লাফাছে বুকের পাঁজর ভেঙে। বুঝতে পারছি ভিতরে রক্তপাত হচ্ছে। 

              এইরকম যখন অবস্থা তখন জীবনে এল দেবযানী। আমাদের কোচিং এর নতুন ছাত্রী। আলাপ হলো। রষায়নের নোটসের জন্য আমার বাড়ি আসতে লাগল। একদিন বলল–আমি শুধু নোটস নিতে আসি না। 

–তাহলে আর কিসের জন্য? 

–তোমাকে দেখতে আসি। 

–সে তো কোচিং এ দেখা হচ্ছে। 

–সেই দেখা, দেখা নয়। এখানে একান্ত নিবিড় করে তোমাই দেখি। তোমার চোখ দুটো দেখি। 

—আমার চোখে কি আছে? 

–শান্ত দিঘীর গভীরতা। 

–শুধু দেখলে হবে? অবগাহন করো। 

–আমিও তাই চাই। 

   তারপর অনেক দিন আমরা অবগাহন করেছি। ভুলে গেছি স্বপ্নার কথা। 

      কিন্তু কি আশ্চর্য একদিন কোচিং এ শুনলাম দেবযানী বিয়ে  করেছে। যাকে বিয়ে করেছে সে ছিল ওর প্রেমিক। তাহলে আমি কি ছিলাম? 

        এই আত্ম অনুসন্ধানে আমার ঘুম খাওয়া সব উঠে গেল। বার বার মনে হলো আমি স্বপ্নার কাছে কি ছিলাম? যৌনতার আগুন? দেবযানীর কাছে শান্ত গভীর দিঘী! তাহলে আমি কারো প্রেমিক হয়ে উঠি নি? 

ঠাকুরমা বলতো–শরীর কেন শকনো হচ্ছে অপু? 

আমি বলি–ঠিকই তো আছে। তুমি ভুল দেখছো

—ছেলে বৌমা সব আমি হারিয়েছি। তবু বেঁচে আছি তোর মুখ চেয়ে। তুই ফাঁকি দিস না। ঠাকুমাকে জড়িয়ে ধরে বলি–উল্টা পাল্টা ভেবে শরীর খারাপ করো না তুমি। আমার কিছু হয়নি।.   

      সত্যি কি তাই? একটা পুরুষ দুটো নারীর কারো কাছে প্রেমিক হয়ে উঠতে পারলো না, এটা কি অপৌরুষ নয়? 

        এম এস সি পড়ছি। একটা কোচিং এ পারটাইম ম্যাথ পড়াই। সেখানে পিপাসা নামে একটি মেয়ে ম্যাথে দূর্বল। আমার বাড়িতে সপ্তাহে দু দিন ক্লাস করতে আসে। একদিন বলল- – স্যার একটা কথা বলবো? 

–কি কথা বলো? 

–আমার মনে হয় আপনার চোখে কান্না ভাসছে। – – অদ্ভুত কথা তো। কান্না কারো চোখে ভাসে নাকি? কান্না তো ঝরে পড়ে। 

     – – সব কান্না ঝরে পড়ে না স্যর। অনেক কান্না বুকের গভীরে লুকিয়ে থাকে। চোখের জমিতে মেঘের মতো ভেসে বেড়ায়। 

–তুমি কি করে বুঝলে? 

—আমি তো কবিতা লিখি। কবিরা বুঝতে পারে অনেক কিছু, যা সাধারন চোখে ধরা পড়ে না। 

–তাই বুঝি? 

–বলুন আমি সত্যি বলেছি কিনা? 

–তুমি কি সেই কান্না মুছিয়ে দিতে পারো? 

–কবির কাজ তো মানুষের কান্না বেদনা দূর করা। 

    পিপাসা তার সব তৃঞা দূর করেছিল। কিছু পিপাসা থাকলো না। 

আমি বললাম – – কেন তুমি চলে যাবে? 

পিপাসা বলল–কবি কখনো কারো ব্যক্তিগত হয় না। 

  আমি এখন ভুবন ডাঙার জংগল পার হয়ে মতিঝিলের পাড়ে বসে আছি। বেশ বড় ঝিল। প্রতিবছর বিদেশী পাখি এই শীতের সময় আসে। এবারও এসেছে। এখন ঝিলের জলে সাঁতর কাটছে ওরা। শীত শেষ হলে চলে যাবে নিজের দেশে। 

  হঠাৎ ঝিলের দিকে তাকিয়ে কেন যেন মনে হলো, আমি এই ঝিলটার মতো। স্বপ্না, দেবযানী, পিপাসা,ওরা সব পরিযায়ী পাখি। 

      আমি দেখি ঝিলের ধারে পড়ে আছে কিছু ঝড়া পালক। কি আশ্চর্য! কি অবাক কান্ড! সেই

পালকে আগুন জ্বলছে  ধিকি ধিকি। অসহ্য। 

গল্প জলাশয় ও পরিযায়ী পাখী ছোটো গল্প – সমাপ্তি

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!