কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » প্রেমের গল্প » মৌটুসী পাখীর খোঁজে 

মৌটুসী পাখীর খোঁজে 

মৌটুসী পাখীর খোঁজে তাই প্রেমের গল্প – ভাস্কর সিন্হা

এই শিরিষ, মেহগনি ছায়াঘেরা পথে কত পথচলা। দুদিকের জড়ানো ডালপালা আত্মীয় কুটুম্বের ন্য়ায় শুনিয়েছে সুবচন আর বইয়েছে ঝিরঝিরে বাতাস। শাল, শিমুল, জামুনে ঘেরা রাঙামাটির পথেও কত হাঁটাহাঁটি। চড়াই, শালিক, টুনটুনি, হাঁড়িচাচা কিঞ্চিত- কদাচিৎ টুকি দিয়েছে। তবে তারা যে এই বৃহৎ বিশ্বচরাচরের ক্ষুদ্র, কিন্তু অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গ ভিন্ন অন্য় কিছু বোধ হয় না। কিছু- কিছু সুবিশাল কান্ডে রঙবেরঙের অর্কিডের রমরমা। অমি চায় তাদের ছুঁতে, তাদের পেতে। তবে সে যে রাজি নয়। সে চায় যে এই বনচিরে যে অ্যাসফল্ট রাস্তাটি চলেছে তাতেই মনোনিবেশ করার। কি দরকার আর পথভ্রষ্ট হবার? কি দরকার অজানা- অচেনা বন্য়জন্তুর মুখোমুখি হবার?

অমি বল্লে, “হন্য়তে।”

সে বলে, “কেন?”

অমি, “সে অনেক ব্য়াপার। আর্থিক, সামাজিক, পারিবারিক, পরিস্থিতি, ইত্য়াদি, ইত্য়াদি সবই কেমন গোলমেলে-“

সে, “অত কিছু বুঝি না। আমি ভালবাসি, ব্য়াস। তোমায় অপছন্দের কোনই কারণ পাই না যে।”

অমি, “এতো বয়সের ধর্ম। হরমোনের আবেগ। প্রাণীদেহজ রসের কারিকুরি। জীবন যে অনেক বড় জিনিস। জোড়াতে তালি বেজেই চলে। মারামারি-কাটাকাটি হয়ে যায়। চলো বন্ধুই থেকে যাই না কেন?”

সে, “শুধু বন্ধু?”

অমি, “না, না। বিশেষ বন্ধু।”

সে, “সেটা আবার কি? বোঝাও দিকি? আর আমিও মৈত্রেয়ী নই। নহি সামান্য়া। আপনার ভাগ্য় জয় করব আমি, ঠিকই দেখো।”

অমি, “প্রেমীদের কাজ- কারবার একটু বলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই না?- তা লাবণ্য়- অমিত, রাধা- কৃষ্ণ, লায়লা- মজনু, বা জুলিয়েট- রোমিও যেই হোক না কেন? জীবন তো অনেক অনেক বড়। নর- নারী প্রেম তো জীবনের একটা অধ্য়ায় মাত্র। জীবন জুড়ে প্রেম এক সুবিশাল ব্য়াপার।”

সে, “তুমি কবি- সাহিত্য়িকদের হালকা ভাবের কারিগর ভাবছ? হালকা মনোগ্রাহী লেখা লিখেই শেষ। তা তো নয়। ওনারা কাব্য়ের মূর্ছনায় বেশী প্রাঞ্জল। জীবনযাপনের দায় তো আমজনতার। কবির কি লাভ ধোপার বিল, বা বিদ্য়ুতখাতে মাসিক খরচা, বা বিদ্য়ালয়ের বাকি রাহা খরচার হিসেব রাখার?  কি দরকার পাঠককে অহেতুক ভারাক্রান্ত করার? কবিদের আছে কাব্য়িক স্বাধীনতা। হিসেব রাখার দায় তো কলমপেষা কেরানির।”

অমি, “কলমপেষা কেরানির জীবনে কি বসন্ত আসে না? ‘খোল দ্বার খোল ‘, বা ‘লাগল যে দোল ‘- বলতে ইচ্ছে করে না?”

সে, “প্রেমের সময় সব হিসেব যে শেষ। রাহা- খরচার হিসেব তোলা থাক তাকে।”

অনি, “ঐখানেই তো মুস্কিল। বাড়িভাড়ার হিসেব আর বাকি দেনার হিসেব- নিকেষ করতে গিয়ে প্রেম যে যাবে যবনিকা পারে।”

সে, “সে তো তোমার ব্য়াপার- কখন কবিতা পড়বে, আর কখন হিসেব মেলাবে?”

অনি, “ভয় হয় হিসেবের গুঁতোয় প্রেমকেও এক দস্য়িছানা বলে ভ্রম না হয়? ক্ষুধাকালে প্রেমও অলীক স্বপ্নবৎ মনে হয়।”

সে, “দায়িত্বপালনে এত বাধা কেন আর্য?”

অমি, “তুমি বেশ জবর, কৌতূহলোদ্দীপক। সবার হতে আলাদা। তাইতো আমি সবাইকে ছেড়ে তোমার সাথে। কিন্তু একসাথে এতবড় জীবনযাপন? বন্ধুরা দেখো কেমন সহজ পথ ধরেছে। টুকিটুকি নিশ্চিত পথে জীবনকে সুরক্ষিত করছে। এ বন্ধুর পথে অনেক ঝড়ঝঞ্জা আসবে যে।”

সে, “ঝড়ঝঞ্জাকে কবেই বা ভয় পেলুম? আর দ্বিচারিতা আমার ঠিক আসে না যে।”

অমি, ” আমি যে ডুবুরি হয়ে অতল সমুদ্র হতে এক উজ্জ্বল মুক্তো খুঁজে পেয়েছি। সে মুক্তো শুধু মুকুটেই শোভা পায়। আমি তারে হেলাফেলা করি কেমনে? আর এই উত্তাল- পাত্তালী সমুদ্রে আমার ডিঙিখানি যে টালমাটাল। তোমার নৌকা আমি সামলাই কেমনে?”

সে, “আমার নৌকা আমি ঠিকই সামাল দিয়ে দেব। তুমি পাশে থাকলে এই ঝড়ঝঞ্জা তুচ্ছ। তোমার ডিঙিনৌকাও আমার হলো কেমন?” 

অমি, “অনেক আবেগী তুমি। জৈবিক আকর্ষণ আসে শারীরবৃত্তীয় নিয়ম মেনে। নিষ্কাম প্রণয় অনেক উচ্চমার্গীয়-“

সে, “আমি ঠিক জানি এই পৃথিবীতে আমার তুমি বা তোমার আমি- পূর্বনির্দিষ্ট। জেনো এ এক ভবিতব্য।”

তারপর জীবন এগিয়ে গেছে নিয়মাফিক। সে এখন অমির আমিত্বভাগী। সেই জানে দুদশক আগের কথাগুলো প্রগলভতা শুধু ছিল, না প্রণয়? এক প্রাজ্ঞ বন্ধু উদাসী স্বরে বলেছিল যে আরও গোটা দুই কি তিন দশক পের হক, তখন বুঝিবি এ প্রেম কেমন  প্রেম। ইতিমধ্য়ে গঙ্গা- যমুনা- পদ্মা- সিন্ধু- কৃষ্ণা- কাবেরী দিয়ে অনেক জলের নির্গম হয়েছে।  কিছু- কিছু বাদানুবাদ কিছু জায়গায় পৌঁচেছে সমাধানসূত্রের আশায়।  কিছু কিছু জায়গায় সমাধানে পৌছোনো খুবই দুরূহ। জীবনে স্বর্ণ- রৌপ্য়ের অধিকিন্তু না হলেও, মস্তকব্য়াপী রূপালী ঝিলিকের আভাস এসেছে।

হয়ত সাবধানে পা ফেললে জীবনটা হয়ত আলোনাই থেকে যেত। মৌটুসী পাখীর খোঁজ হয়ত করতে হত সারাজীবন। হয়ত মৌটুসী পাখীর দেখাই মিলত না অনন্তকাল। কিছু মশলা- কিছু ঝাল- কিছু টক- কিছু মিস্টি- এই তো জীবন। ইতিমধ্য়ে রুদ্র-তসলিমা, গৌরী- শাহরুখ, স্বরা- ফাহাদেরা জীবনের বেশ কিছু পথ অতিক্রম করেছে। কেউ- কেউ একটু এগিয়ে গিয়ে দ্বিবিভাজিকায় পৌঁছে আলাদা পথের সন্ধান খুঁজেছে। টি টোয়েন্টি আর পঞ্চাশের পর, জীবন এখন টেস্টের মাঠে। তবে দিনকালের মাহাত্য় মেনে খুব কম টেস্টই এখন পুরোপুরি খেলা হচ্ছে, এই যা।

মৌটুসী পাখীর খোঁজে তাই প্রেমের গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!