জ্ঞান বাসন্ত ছোটগল্প – স্নেহাংশু চট্টোপাধ্যায়
প্রকৃতিকে কাঙ্গাল করে শীত যায় , তার নেপথ্যে সূচনা হয় বসন্তের |বর্ষা যদি বিরহের হয় তো বসন্ত বাহার বিহারের বৈভবের প্রকৃতির অবগুন্ঠন খুলে বসন্তে যৌবনের উন্মেষ হয় ধীরে , কুসুমে কুজনি সৌরভে গৌরবে তখন শাখায় ফোটে মঞ্জুরি সালে ফোটে কিশলয় , আকাশ আকাশের নীল চাদরের গায়ে ফোটে শিমুল পলাশ | ফাগুনের বাতাস প্রকৃতির আঁচল উড়িয়ে দেয় , আজ পূর্ণিমার চাঁদ মাছ গগনে ,জোসনার মূর্ছনা গভীর তার ব্যঞ্জনা কারণ আজ জোসনার বিয়ে |নিভা রানী গেল জোসনার বিয়েতে ,পাড়ার মেয়ের বিয়েতে , তার উপর গাঙ্গুলী পরিবারের সঙ্গে একদম এই চ্যাটার্জি পরিবারের এক নিজস্ব হার্দিক সম্পর্ক ,
নিম গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রাস্তায় পড়েছে ফাগুনের পূর্ণিমা , জ্যোৎস্নার আলোয় চতুর্দিক আলোকিত ||নিভারান দৌড়াতে দৌড়াতে নিমতলার পাশ দিয়ে এসে বাড়িতে ঢুকে দরজা খট খট করে | দেবেন বাবুন ঘুমোচ্ছিল | হঠাৎ জেগে উঠে প্রথমে ভাবল ঠিক শুনলাম তো ,তারপরে উঠে দরজা খুলে দেখে নিভা রানী মুখে কাপড় চাপা দিয়ে খিলখিল করে হাসছে |
আজ থেকে 100 বছর আগের কথা তখন মেয়েদের পড়াশোনা করার অধিকার ছিল না | নিভা রানী বিয়ের পর রাতে যখন সকলে শুয়ে শুয়ে পরতো , তখন নিশুত রাতে একটা দুটোর সময় উঠে দেবেন বাবুর কাছে অ আ ক খ শিখতেন ,এরপর একে একে বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় গোলাপি মলাটের ছোট বই , ধীরে ধীরে শরৎচন্দ্রের গল্পের বই পন্ডিতমশাই পড়া শুরু করল তাতেও কি শান্তি আছে , পন্ডিতমশাই পড়তে পড়তে কুসুমের কথা চিন্তা হতে লাগলো , কুসুমের কি দুঃখ একদিকে বৃন্দাবনের ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলছে তুই আমাকে মা বলে ডাক , অপরদিকে ভাবছে সকলে কি বলবে কুসুমের নিকা হইয়া গেল |এইসব নানান চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে নেই , ননদ নান্না এসে ডাকছে ও বৌদি কি হলো গো আজ সূর্য উঠে গেল বাড়ির বউ এর ঘুম ভাঙলো না এখনো |
ধড়ফড় করে উঠে মুখ ধুতে গেছে -এমন সময় বিছানা তুলতে গিয়ে নান্না দেখে বালিশের তলায় পড়ার বই পড়ে আছে | চিৎকার করে উঠলো কি অকল্যাণ বাড়ির বউ এখন পড়াশোনা করছে| নিভা রানী দৌড়ে এসে নানা কে বোঝায় লক্ষীটি বন কাউকে বলিস না ,আমি পড়ালেখা করছি না ,তোর দাদার বই ভুল করে বালিশের নিচে পড়ে গেছে |আচ্ছা বলতো তুই তো পড়ালেখা করিনি তবে তোর কেন স্বামী মারা গেল 21 বছর বয়সে ?নান্না 13 বছর বয়সে বিধবা সেই থেকে বাপের বাড়িতে থাকে ছোটরা স্ বড়মা বলেআর বড়রা নান্না বলে বডাকে সেযাত্রা রান্নার হাত থেকে রেহাই পায় নিভা রানী এখন সে পুরো উদম নিজে দেখা শোনা করে
তখনকার দিনে নিয়ম ছিল বিয়ে হয়ে যাবার পর রাতে বাসর ঘরে জামাই সকলকে রামায়ণ মহাভারত পড়াশোনা তো তাই জোসনার বিয়ের পর পাড়ার সকল মেয়ে বউ বগুড়া জামাইকে রামায়ণ পড়ে শোনাতে বলল রামায়ণ সামনে নিয়ে বসে আছে কিছুই বলছে না ,খানিক বাদে টস টস করে দু চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে |এই দেখে গাঙ্গুলী দের কত্বা মা বললে দেখছো গো -আমাদের কত পড়ালেখা জানা জামাই বাবা রাম বনবাসে যাচ্ছে দেখে দুঃখে জামাইয়ের চোখ দিয়ে জল পরছে |তা শুনে জামাই বাবাজি বললে – না না আমি যে বইটা করেছিলাম তার অক্ষর গুলো ছিল এত বড় বড় এ বইটির অক্ষর গুলো না খেতে পেয়ে ছোট ছোট হয়ে গেছে রোগা হয়ে গেছে |
ব্যাপারটা নিভা রানী সহজেই ধরে ফেলেছে কারণ সে তো কিছুদিন আগেই ক খ পড়েছিল বড় বড় অক্ষরের বর্ণপরিচয় পুস্তক|
এরপর ধীরে ধীরে অক্ষর গুলো ছোট হয়েছে , নিভা রানী পন্ডিতমশাই করেছে .শরৎচন্দ্র ,বঙ্কিমচন্দ্র লেখা ছোট অক্ষরের সব বই পড়েছে |তাই নিভা রানী ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে অক্ষর কিরম করে না খেতে পেয়ে ছোট হয়ে গেল |এরপর যখনই নিভারান টাকা-পয়সার হিসাব নিকাশ করেছে দেবেন বাবু হাসতে হাসতে বলতেন -অক্ষর গুলো বড় ছিল সেটাই ভালো না খেতে পেয়ে ছোট হয়ে , আমার কাল হলো |আজ সবেতেই হিসাব নিকাশ দিতে হচ্ছে ।
জ্ঞান বাসন্ত ছোটগল্প – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বাংলার রূপের সাত সতেরো
সাগর দেখার স্বপ্ন
ও এসেছিল